শাকিব-অপু কাহিনি: শুরু থেকে শেষ

২০১৮ সালের ১২ মার্চে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচ্ছেদ ঘটলো প্রায় দশ বছরের দাম্পত্য জীবনের। দেখে নেওয়া যাক শাকিব-অপু’র আদ্যোপান্ত কাহিনি ।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2018, 03:58 PM
Updated : 12 March 2018, 03:58 PM

পরিচয় ও পরিণয়

২০০৬ সালে এফ আই মানিকের ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান বগুড়ার তরুণী অপু বিশ্বাস। জীবনের প্রথম চলচ্চিত্রেই তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান। ছবিতে কাজ করতে গিয়েই দু’জনের প্রথম পরিচয়।

ছবিটি দর্শকমহলে বেশ সাড়া ফেলায় পরিচালকরাও এ জুটির পেছনে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। একের পর এক চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হন তারা।

দিনে দিনে দু’জনের প্রতি মুগ্ধতা তৈরি হতে থাকে। ২০০৮ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কথা দাও সাথী হবে’ চলচ্চিত্রের শ্যুটিং শেষে অপুকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিব।

১৮ এপ্রিল এক প্রযোজকের উপস্থিতিতে বিয়ে হয় তাদের। অপু বিশ্বাসের দাবি, বিয়েতে তাদের কাবিন ধার্য করা হয়েছিল এক কোটি। কিন্তু শাকিব বলেন, টাকার অংকটা সাত লাখ।

বিয়ের পর টানা আট বছর সংসার করেছেন গোপনে, কাকপক্ষীও টের পায়নি।

পুত্রকে কোলে নিয়ে লাইভে অপু

গত বছর এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে প্রথম শাকিবের সঙ্গে তার বিয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আনেন অপু।

অপু বিশ্বাস দাবি করেছেন, শাকিব খানের কারণেই এতদিন বিয়ে ও সন্তানের খবর লুকিয়ে রাখেন তিনি। অন্তরাল থেকে বেরিয়ে সোমবার একটি টিভিতে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর শিশুসন্তানকে নিয়ে বাসায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এই অভিনেত্রী।

বিয়ে ও সন্তান হওয়ার খবর শাকিবের কারণেই চেপে রেখেছিলেন বলে তিনি দাবি করেন । তবে নানা সময়ে শাকিব সন্তানের জন্য অর্থ দিয়েছেন বলেও তিনি স্বীকার করেন।

অপু বলেন, “আমি ১০ মাস আড়ালে গেছি। আমাকে নিয়ে অনেক বিরূপ মন্তব্য হয়েছে, আমি গায়ে লাগাই নাই। আমার শাকিবকে ঠিক রাখতে হবে।”

অপু নয়, ছেলের দায়িত্ব নিলেন শাকিব

সন্তান কোলে স্ত্রী অপু বিশ্বাসের টিভি স্টেশনে গিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়ার ঘটনায় শাকিব খান খানিকটা খাপ্পা হয়েছিলেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “২০০৮ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছে ঠিক। আমাদের ছেলের দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। অপু আজকে যে কাজটা করল সেটি ভালো করেনি।”

ছেলের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললেও শুরুতে অপু বিশ্বাসের দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানান শাকিব।

গণমাধ্যমে বলেছিলেন, “ছেলের দায়িত্ব নেব কিন্তু অপুর দায়িত্ব নেব না।” পরে সমালোচনার মুখে অপুর দায়িত্বও নেওয়ার কথা বলেন।

বাড়তে থাকে দূরত্বের দেয়াল

সন্তান-স্ত্রীকে মেনে নিলেও দু’জনের মাঝখানের দূরত্বটা ঢাকতে পারেননি শাকিব। কিছুদিনের মধ্যেই দু’জনের মধ্যে দূরত্বটা স্পষ্ট হতে থাকে।

একমাত্র পুত্র আব্রাহাম খানের প্রথম জন্মদিনের কার্ডে শাকিব খানের ছবি ছাড়াই পুত্রের সঙ্গে নিজের ছবি ছাপান অপু।

এর সমালোচনা করেন শাকিব। সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে শাকিবের অনুপস্থিতি দু’জনের দূরত্বের বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দেয়।

বিচ্ছেদের গুঞ্জন

গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই দু’জনের বিচ্ছেদের গুঞ্জন রটে। বিষয়টি নিয়ে শাকিব খান খোলাখুলিভাবে কিছু না বললেও অপু বিশ্বাস গুঞ্জনকে উড়িয়ে গ্লিটজকে বলেছিলেন, “এসবের মধ্যে শাকিব খানও নাই আমিও নাই।”

অপুকে শাকিবের ‘তালাকনামা’ ও বিচ্ছেদের কারণ

আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম সিরাজের মাধ্যমে ২২ নভেম্বর অপুর বাসার ঠিকানায় তালাকনামা পাঠিয়ে দেন শাকিব খান।

তালাকের কারণ হিসেবে আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, “বিয়ের সময় ধর্মান্তরিত হয়ে অপু বিশ্বাস শাকিব খানকে বিয়ে করেছিলেন। কথা ছিল তিনি মুসলিম রীতিনীতি মেনে চলবেন ও গৃহিনী হয়ে থাকবেন। কিন্তু অপু বিশ্বাস সে কথা রাখেননি।”

তালাকনামায় শাকিব অভিযোগ তোলেন, পুত্রসন্তান জয়কে বাড়িতে গৃহকর্মীর সঙ্গে তালাবন্ধ রেখে ‘ছেলেবন্ধুকে নিয়ে’ দেশের বাইরে যান অপু।

আইনজীবী বলেন, “এসব ঘটনার কারণেই শাকিব খান অপুকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”

বিচ্ছেদ: অপুর অস্বীকার ও মেনে নেওয়া

শাকিব খানের কাছ থেকে তালাকনামা পাওয়ার পর থেকেই এ বিচ্ছেদ ‘মানেন না’ বলে দাবি করে আসছিলেন অপু বিশ্বাস।

পরবর্তীতে বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার আগেই মেনে নেওয়ার বক্তব্য দেন গণমাধ্যমে। সেকারণেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিনএসিসি) পারিবারিক আদালতে ডাকা দ্বিতীয় সালিশেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।

শাকিব-অপু অধ্যায়ের শেষ

আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে সোমবার।

সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ৩-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেমায়েত হোসেন গ্লিটজকে বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী বিচ্ছেদের আবেদেনের পর বিষয়টি মিটমাট করার জন্য তিন বার আমরা উভয় পক্ষকে সালিশে ডেকেছিলাম। আজ চূড়ান্ত সালিশে কোনো পক্ষই হাজির হননি। তাই নিয়মমাফিক এ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে।”

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে মীমাংসা না হলে বিচ্ছেদ কার্যকর হয়।

বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ায় এখন একমাত্র সন্তান আব্রাম খান জয়ের ভরণ-পোষণের যাবতীয় দায়িত্ব নেবেন শাকিব।

শাকিবের আইনজীবী শেখ সিরাজুল ইসলাম গ্লিটজকে বলেন, “উনি ছেলের মঙ্গলের জন্য সবকিছুই করবেন। প্রতিমাসে এক লক্ষ টাকা দিয়ে যাচ্ছেন ছেলের ভরণ-পোষনের জন্য। আরও যখন যা টাকা লাগে শাকিব তা দেবেন।”