মহান ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের সূচনা। এ আন্দোলনই বাঙালির সাহস শক্তি ও প্রেরণার উৎস হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও তৎপরবর্তী বাংলাদেশে। অথচ স্বাধীন দেশে মঞ্চ কিংবা চলচ্চিত্রে ভাষা আন্দোলন নিয়ে তেমন কোনো সৃষ্টি হয়নি। দু’টি চলচ্চিত্র হলেও মঞ্চনাটকে একেবারেই গুরুত্ব পায়নি ভাষা আন্দোলন।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে নাটক হওয়া উচিত ছিলো: মামুনুর রশীদ
ভাষা আন্দোলনকে সামগ্রিকভাবে ধারণ করেছে মঞ্চ। ভাষা নিয়ে আমরা নানান ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করি-নাট্যভাষা তৈরি করি, এটা আছে।
সত্যিকার অর্থে ভাষা আন্দোলন নিয়ে কোনো নাটক রচিত হয়নি। ওই একমাত্র ‘কবর’ নাটকটাই। তাও ওটাতো মৌলিক নয়। এটা হয়নি, তো হবে ভবিষ্যতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধতো একটা বার্নিং ব্যাপার ছিলো, সেটা নিয়ে হয়েছে। কিন্তু ভাষা আন্দোলন নিয়ে নাটক হওয়া উচিত ছিলো এটা আমি বিশ্বাস করি, মনেও করি।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রগতিশীলদের তৎকালীন যে রাজনীতিটা ছিলো, ওইটা খুব ইম্পর্টেন্ট। ওইটা আমিও ইচ্ছা পোষণ করি নাটকে হোক চলচ্চিত্রে হোক করবো।
ভাষা আন্দোলনের যে নাটকীয়তাটি ওটাতো ১৯৫২ সালের এক সকালের কিছুক্ষণের জন্য। কিন্তু এটার যে অভিযাত্রাটা শুরু হয়েছে, তা তো সুদূরপ্রসারী।
ঢাকার মঞ্চে ইতিহাস হয়ে আছে সেইরকম কোনো নাটক হয়নি: মাসুম রেজা
ভাষা আন্দোলন খুব সর্বজনীন, তাই ভাষার মাসকে কিন্তু সবাই উদযাপন করে নানা ভাবে। আমরা নাটকের মানুষরাও এ মাসে নানা ধরণের উৎসব করি-পথনাটক করি। বেশকিছু পথনাটকও আছে যেগুলোতে ভাষা আন্দোলনের রেফারেন্স আছে।
আমার একটা পথনাটক আছে ‘কাকলাশ’। সেই যে সামরিক সরকার এরশাদের সময় করা, সে সময়ের বাস্ততবতা নিয়ে নাটকটি। ভাষা আন্দোলনের যে স্মারক শহীদ মিনারকে খেয়ে ফেলতে চায়। অর্থাৎ আমাদের আন্দোলনের যে চেতনা শুরু হয়েছিলো ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সেই চেতনা খেয়ে ফেলতে চায় সামরিক শাসক।
আরও কিছু নাটক আছে যেগুলোতে শহীদদের ভুলে যাচ্ছি, ভাষার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছি না এ জায়গাগুলো আছে। কিন্তু এটা স্বীকার করি যে, বৃহৎ দলের, বৃহৎ পরিসরে বড় নাট্যকারের লেখা, বড় অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনয়ে ঢাকার মঞ্চে ইতিহাস হয়ে আছে সেইরকম কোনো নাটক কিন্তু ভাষা আন্দোলন নিয়ে হয়নি।
আমার মনে হয়, আমাদের অর্জন আছে-আমাদের ভাষা দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে। আমাদের অর্জনের বাইরে ব্যর্থতাও আছে।
যারা রক্ত দিয়ে গেছেন তাদের জীবনের মূল্য আদর্শের মুল্য কি আমরা রাখছি? এর প্রেক্ষিতে তরুণ সমাজকে, যুব সমাজকে, এমনকি কৃষকদেরও অনুপ্রাণিত করার জন্য, অবহিত করার জন্য নাটক হওয়া জরুরি।
এ ব্যর্থতার দায়ভার রাষ্ট্রেরও: অনন্ত হিরা
এই কথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে মঞ্চ, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এমনকি একমাত্র কবিতা ছাড়া সৃজনশীল কোনো মাধ্যমেই ভাষা আন্দোলনকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।
এ ব্যর্থতার দায়ভার রাষ্ট্রেরও কারণ মুক্তিযুদ্ধকে বিভিন্ন মাধ্যমে যেভাবে তুলে ধরা গেছে এবং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছে তা ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে একেবারেই পাওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভাষা আন্দোলনকেও যথাযথভাবে তুলে ধরা সম্ভব। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সৃজনশীল সব মাধ্যমের মানুষেরাই উদ্যোগী হবেন আমার বিশ্বাস।