গ্লিটজ: মৃত্যুর দশ বছর পর চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি মান্নাকে কতটা মূল্যায়ণ করেছে বলে আপনি মনে করেন?
শেলী মান্না: মান্নার মৃত্যুর পর অনেককেই পাশে পাইনি। তখন একজনই এগিয়ে এসেছিলেন, তিনি চাষী ভাই (চাষী নজরুল ইসলাম)। উনিও আজ নেই। তখন চলচ্চিত্র অঙ্গনের যাদের কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করেছিলাম তাদেরই পাশে পাইনি। কিছু মানুষের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার কথাই ছিল না অথচ তারাই সহযোগিতা করেছেন আমাদের।
তবে দিনশেষে আমাকে একাই লড়তে হয়েছে। দশটা বছর সংগ্রাম করে যাচ্ছি। দশ বছরের অভিজ্ঞতায় বুঝেছি, এখন লোক দেখানো কাজের মানুষই বেশি পৃথিবীতে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো সৎ লোকের সংখ্যা পৃখিবীতে খুব কম।
গ্লিটজ: প্রিয়জনকে হারানোর পর এভাবে একা লড়াইটা চালিয়ে যাওয়াটা খুব চ্যালেঞ্জের।
শেলী মান্না: অবশ্যই। আমি চাকরি করছি। সংসার আছে, ছেলে আছে, মান্নারও অনেক কাজ বাকি আছে-সবগুলোই এক হাতে সামলাচ্ছি। আমি জানি, মান্না বেঁচে থাকলে কাজগুলো আমার করা লাগত না। সত্যি বলতে, উনি বেঁচে থাকাকালীন পৃথিবীতে কখনোই একা মনে হয়নি নিজেকে। এখন সত্যি বড্ড একা লাগে।
শেলী মান্না: আমি মান্নার স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছি। আমার পরিচয় হলো, আমি মান্নার স্ত্রী। আমাদের একটি ছেলে আছে, আমার একটা সোসাইটি আছে। মান্নার রেখে যাওয়া কাজগুলো করা আমার জন্য অনেক বড় একটা দায়িত্ব।
অনেকে স্বামীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার বিয়ের চিন্তা করে। কিন্তু আমি বলি, বিয়েটায় কি সব? এর বাইরে জীবনের আর কোনো অধ্যায় নেই? একটা বিয়ে করলেই সব সমস্যার সমাধান হয় না।
বিয়ে করলে আবার আরেকটা মানুষের দায়দায়িত্ব এসে পড়বে আমার কাঁধে। আমার স্বামীর সবকিছু মিশে যাবে। আমি চাই না। আমি বিয়ের পক্ষপাতি আমি নই। স্বামীর স্মৃতি নিয়েই বাঁচতে চাই।
গ্লিটজ: নায়ক পরিচয়ের বাইরে স্বামী হিসেবে মান্না আপনার চোখে কেমন?
শেলী মান্না: যখন আমাদের বিয়ে হলো তখন তো ও তুমুল ব্যস্ত অভিনয়শিল্পী। অভিনয়েই প্রচুর সময় দিতে হত। আমিও চাকরি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছি তখন। দিনভর যে যেই কাজই করি না কেন দিনশেষে দু’জন ছিলাম শুধুই দু’জনার। আমাদের ছোট্ট সংসারে সুখ আর প্রশান্তিটা ছিল।
শেলী মান্না: সব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই কিন্তু পলেটিক্স থাকে। যেকোনও কোম্পানীতেই চাকরি করেন না কেন, আপনি যদি ভালো করেন ইর্ষা তো থাকবেই। ব্যাপারটা সেরকম ছিল।
আমি ওর পার্সোনাল ব্যাপারে খুব বেশি শেয়ার করিনি। আমিও শুনতে চাইনি। কারণ একটা মানুষের নিজস্ব একটা স্পেস আছে। তাকে ছাড় দিয়েছি। সে যখন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিল তখন অশ্লীলতার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করেছেন। আমি ছাড় দিয়েছি। ভেবেছি, আন্দোলনটা তখন দরকার ছিল।
গ্লিটজ: তার মৃত্যুর পর গত দশ বছর চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে কেমন দেখছেন?
শেলী মান্না: চলছে আরকি! একজন মানুষ চলে গেলে তো আর চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যায় না। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে সংকট দেখেছি-এটা সত্য। সিনেমা হল কমে গেছে। সবমিলিয়ে আগের অবস্থায় তো আর নেই ইন্ডাস্ট্রি।
গ্লিটজ: পারিবারিক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘কৃতাঞ্জলি কথাচিত্র’র হাল ধরেছেন আপনি। প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন কোনো চলচ্চিত্র করছেন?
শেলী মান্না: নাহ। কেমন কোনো চলচ্চিত্র করা হয়নি। কারণ বাইরে থেকে যখন দেশে ফিরলাম, তখন দেখলাম চলচ্চিত্রের অবস্থা খুব ভালো না। অনেক হল বন্ধ হয়ে গেছে। তার উপর যাদের দিয়ে সিনেমা করাবো সেই চাষী ভাইরাও নাই। সেকারণেই কাজ করা হয়নি। তবে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি। এবছরই একটি ছবির ঘোষণা দেব।
গ্লিটজ: মান্না ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম কেমন চলছে?
শেলী মান্না: ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ারপারসন চাষী নজরুল ইসলাম চলে গেছেন। আমার একার পক্ষে অনেক কিছুই করা যায় না। তবে প্রোডাকশন হাউসের পাশাপাশি ফাউন্ডেশনটাও চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
গ্লিটজ: এফডিসিতে স্থাপিত ‘মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্স’ থেকে মান্নার নাম সরিয়ে ফেরার প্রতিবাদে সোচ্চার ছিল মান্না ফাউন্ডেশন। সৃষ্ট জটিলতার কোনো সুরাহা পেয়েছেন কি?
শেলী মান্না: নাহ! ওটা নিয়ে তো আর কিছু হয়নি। প্রথমে ফলকের নামটা দিয়েছিল আবার দেখলাম ফলকের নাম উঠিয়ে দিয়েছে। ফাইনালি কিছু জানি না। এটা প্রক্রিয়ার মধ্যেই হয়েছে কিনা এটা জানতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠান তো যেকোনো নামফলক চাইলেই দিতে পারে না যতক্ষণ সেটি সরকারিভাবে পাশ না হয়। আমার মনে হয় আন্দোলনের মুখে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে।
শেলী মান্না: সিয়াম দেশের বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া অ্যান্ড ফিল্ম স্টাডিজে পড়াশোনা করছে। শেষ হতে আরও তিন-চার বছর লাগবে। সে কী হবে সেটা ওর উপরই নির্ভর করছে। ও সাংবাদিকতা করতে পারে, আবার নির্মাণও করতে পারে। তবে অভিনয়ের খুব একটা আগ্রহ দেখিনি আমি। এটা নিয়ে আমিও খুব একটা গা করছি না। ওর যা ইচ্ছা তাই হোক।
ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া।