দীর্ঘদিনের বন্ধুকে হারালাম: সৌমিত্র

দীর্ঘ রোগভোগের পর শুক্রবার সকালে ৮৩বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন সুপ্রিয়া দেবী। তার মৃত্যুতে টলিউডে নেমেছে শোকের ছায়া।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2018, 08:55 AM
Updated : 26 Jan 2018, 11:55 AM

অভিনেত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার বালিগঞ্জের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়,  প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মুনমুন সেন, রাইমা সেন, পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস প্রমুখ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টজন।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দুপুর তিনটের সময় শেষযাত্রায় নিয়ে যাওয়া হবে সুপ্রিয়া দেবীকে। তারপরে রবীন্দ্রসদনে শায়িত রাখা হবে সুপ্রিয়ার মরদেহ। সাড়ে ছ’‌টা পর্যন্ত সাধারণে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন তাকে। পরে তার দেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মী অভিনেতা, অভিনেত্রী, কলাকুশলীরা ।

শোকাহত কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘ দিনের বন্ধুকে হারালাম ।বিধ্বস্ত লাগছে। বাংলা ছবি স্বর্ণযুগের একজন অন্যতম স্থপতি ছিলেন। অনেক ছবিতে এক সঙ্গে কাজ করেছি। এখন আমি কথা বলার অবস্থায় নেই।”

“ভাবতেই পারছি না। আর কিছু বলার অবস্থায় নেই আমি।” বললেন বর্ষীয়ান সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ।

চলচ্চিত্র নির্মাতা তরুণ মজুমদার বললেন, “সুপ্রিয়ার চলে যাওয়ার শোকটা ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না।”

‌অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় বলেছেন, “খুবই দুঃখের খবর। আমি দিদি বলে ডাকতাম। আত্মীয়ের মতোই সম্পর্ক ছিল আমাদের। খুবই প্রাণবন্ত ব্যবহার ছিল দিদির। আমি মর্মাহত। এ কষ্ট বলে বোঝানো যাবে না। শুধু এটুকু বলতে পারি, কাজ দিয়েই মানুষ ওকে মনে রাখবেন।”

নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, “আমার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের পরিচয় ছিল ওর। সকালে শুনলাম উনি আর নেই। এ তো ভাবতেই পারছি না। বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।”

প্রসেনজিত বললেন, “এই ক্ষতির কোনও পরিমাপ হয় না। আমি ওর আত্মার শান্তি কামনা করি।”

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেছেন, “খারাপ খবর দিয়ে দিন শুরু হল। মায়ের মতো ছিলেন। আমার ভালবাসার মানুষ। অনেক সৌভাগ্য আমার যে ওর স্নেহ পেয়েছি। অনেক স্মৃতি, অনেক গল্প, অনেক আদরের কথা মনে পড়ছে। উনি সকলের কথা ভাবতেন। অনেক বড় মনের মানুষ ছিলেন। যা রেখে গেলেন, যা শিখিয়েছেন তার একটুও করতে পারলে খুশি হব। ওর আরও সম্মান পাওয়া উচিত ছিল।”

১৯৩৫ সালের ৮ জানুয়ারি বর্তমান মিয়ানমারের মিতকিনায় জন্ম সুপ্রিয়া দেবীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় চলে আসে তার পরিবার।

মাত্র সাত বছর বয়সে প্রতিবেশী চন্দ্রাবতী দেবীর হাত ধরেই অভিনয়ের জগতে পা রাখেন তিনি। ছোট থেকেই নাচ ও অভিনয়ে পারদর্শী ছিলেন তিনি।

১৯৫২ সালে ‘বসু পরিবার’ চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের সঙ্গে অভিনয় করে তার আত্মপ্রকাশ। উত্তমকুমারের সঙ্গেই ‘সোনার হরিণ’(১৯৫৯) সিনেমায় অভিনয় করেই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ।

তারপরের বছরেই ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০)  ছবিতে অভিনয় করে তিনি বাঙালি মনে চিরকালের জায়গা করে নেন । এই চলচ্চিত্রে তার বিখ্যাত সংলাপ, ‘দাদা, আমি বাঁচতে চাই’ এখনো মানুষের মনে নাড়া দেয় ।

‘বাঘবন্দি খেলা’, ‘চিরদিনের’  ‘চৌরঙ্গি’  ‘বনপলাশির পদাবলী’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’ , ‘দেবদাস’, ‘দুই পুরুষ’ একের পর এক জনপ্রিয় বাংলা ছবিতে তিনি অভিনয় করে চলচ্চিত্রে তার আসন পাকা করে নিয়েছেন ।

তার অভিনয় স্বীকৃতিস্বরূপ পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০১১ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ এবং ভারত সরকার ২০১৪-এ ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারে সম্মানিত করে।

‌‌

সূত্র: আনন্দবাজার, আজকাল পত্রিকা