নায়করাজের জন্মদিনের কেক কাটলেন কবরী

মৃত্যুর পর নায়করাজ রাজ্জাকের ৭৭তম জন্মবার্ষিকীর কেক কাটলেন কবরী। মঙ্গলবার এ উপলক্ষে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি নিজ কার্যালয়ে জন্মদিন উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন করা হয়।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2018, 01:49 PM
Updated : 23 Jan 2018, 01:49 PM

নায়করাজ নেই, তার মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিনে তাই তার অনুপস্থিতির শূন্যতাই যেন বাজছিলো সবার মনে। সেই শূন্যতা পূরণ করতে শিল্পী সমিতিতে উপস্থিত হলেন রাজ্জাকের জুটি চিত্রনায়িকা কবরী।

চিত্রনায়ক আলমগীর, ফারুকসহ এসময় উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা সুজাতা, ফেরদৌস, রিয়াজ, মিশা, সওদাগর, জায়েদ খান, ও পরিচালক আজিজুর রহমান, মুসফিকুর রহমান গুলজারসহ আরো অনেকে।

জন্মদিনের এ আয়োজনে উপস্থিতি ছিলোনা নায়করাজ পরিবারের। তবে ভিডিও কনফারেন্সে তারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এছাড়াও সমিতির পক্ষ থেকে কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ ও এফডিসিতে তার প্রতিফলকে ফুল দিয়েও শ্রদ্ধা জানানো হয় শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে।

বিকেল ৪টায় কেক কেটে রাজ্জাকের জন্মদিন উদযাপন করেন নায়িকা সারা বেগম কবরী, চিত্রনায়ক আলমগীর ও ফারুকসহ আরও অনেকে। এর আগে পরিচালক সমিতির সভা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন তারা।

সভায় চিত্রনায়িকা আলমগীর বলেন, “নব্বই দশকের আগে রাজ্জাক ভাইয়ের কোনো জন্মদিন আমার মিস হয়নি। প্রতিটি জন্মদিন আমরা অনেক মজা করে পালন করতাম।

কিন্তু নব্বই দশকে রাজ্জাক ভাইয়েরই কোনো এক জন্মদিনে রাজ্জাক ভাই-ই আমাকে ফোন করে জানালেন, আমার মা নেই, এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন।

তার পর থেকে আর কোনো জন্মদিনে রাজ্জাক ভাইয়ের বাসায় যাওয়া হয়নি। আজ রাজ্জাক ভাইয়ের মৃত্যুর পর এখানে আসতেই হলো।”

তিনি আরও বলেন, “আমি চলচ্চিত্রে এসেছিলাম উত্তম-সুচিত্রাকে দেখে। সিনেমা দেখে আসার পর আয়নায় নিজেকে দেখতাম আর অভিনয় করার চেষ্টা করতাম।

কিন্তু চলচ্চিত্রে কাজ করতে এসে বুঝলাম, এখানে উত্তম কুমার হয়ে লাভ নেই, এখানে হতে হবে রাজ্জাক। তার পর থেকেই রাজ্জাক ভাইয়ের স্নেহ নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম।

নায়করাজ কখনো হতে পারব না। কারণ, রাজ একজনই, তবে আমরা সফল সৈনিক হয়ে কাজ করেছি। যত দিন চলচ্চিত্রে কাজ করেছি, ভালো একজন সৈনিক হওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো করে যাচ্ছি ।”

নায়করাজের সঙ্গে ক্যারিয়ারের নানা দিক ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করে চিত্রনায়িকা কবরী বলেন, “আমাদের মধ্যে কেমিস্ট্রিটা ছিল অনেক ভালো, একজন আরেকজনকে ভালো বুঝতাম। যে কারণে পর্দায় আমাদের দেখে দর্শক পছন্দ করতেন।

আমাদের মধ্যে রসায়ন ভালো থাকলেও কাজের বিষয়ে আমাদের এক ধরনের হিংসা কাজ করত। তবে এই হিংসা ছিল পজিটিভ।

আমরা একে অপরের সঙ্গে যে হিংসা ছিল, সেটি কে কার চেয়ে ভালো কাজ করতে পারে সেই হিংসা। যা দিয়ে আমরা নিজেকে ভালো অভিনয়শিল্পী বানানোর চেষ্টা করেছি।”

শুধু তাই নয়, নায়করাজ ভয়ও পেতেন কবরীকে। বললেন, “রাজ্জাক ভাই আমাকে যেমন পছন্দ করতেন, তেমনি ভয় পেতেন। কারণ, আমি সব সময় মুখের ওপর কথা বলতাম।”

তিনি আরো বলেন, “আমাদের মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব ছিল, তেমনি প্রতিযোগিতাও ছিল। আমি নতুন প্রজন্মকে বলব, কাউকে সরিয়ে দিয়ে নয়, নিজের যোগ্যতা দিয়ে কাজ করলে অবশ্যই কাজের স্বীকৃতি আসবেই।”  

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এই কিংবদন্তি অভিনেতার জন্ম ১৯৪২সালের ২৩জানুয়ারি অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। তার পুরো নাম আবদুর রাজ্জাক।

পাঁচশর বেশি চলচ্চিত্রের এ অভিনেতা বাংলাদেশের মানুষের কাছে খ্যাত ছিলেন নায়করাজ নামেই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সাদা কালো যুগ থেকে শুরু করে রঙিন যুগ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন তিনি।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ২৫ বছর প্রায় একাই টেনে নিয়ে গেছেন এই চিত্রনায়ক। শেষ দিকে অন্য চরিত্রে অভিনয় করলেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন তাকে চিরসবুজ নায়ক হিসেবেই দেখে।