ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশায় সমাপ্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব

ধর্ম-রাজনীতি-ভৌগোলিক সীমারেখায় দ্বন্দ্বে সারা বিশ্বে চলমান দাঙ্গা-ফ্যাসাদ আর  অগণিত মানুষের মৃত্যুর মিছিলে আতঙ্কিত চলচ্চিত্রকাররা ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষ্যে একাট্টা হওয়ার শপথ নিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2018, 02:05 PM
Updated : 20 Jan 2018, 02:05 PM

তাদের এই শপথ গ্রহণেই শনিবার পর্দা নামলো ষোড়শ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।

‘ভালো ছবি, ভালো দর্শক, সমৃদ্ধ সমাজ’- প্রতিপাদ্যে এ উৎসবের আয়োজন করে রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি। নয় দিনের এ উৎসবে বাংলাদেশসহ ৬৪ দেশের ২১৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়।

বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় সমাপনী অনুষ্ঠানের; এতে বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আরো উপস্থিত ছিলেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা রয়েছে। এটি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে কাছে টানতে পারে, ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে আজ সারাবিশ্বে চলছে হত্যাযজ্ঞ, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি আর রাহাজানি।

“আমরা নিজেদের দাবী করছি আমরা সভ্য। আসলে কি আমরা সভ্য? চলচ্চিত্র এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। চলচ্চিত্র পারে বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে।”

তখন তার সঙ্গে একমত হয়ে দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্রকাররা মানবিক বিশ্ব নির্মাণের শপথ নেন।

এবারের উৎসবে শিশু চলচ্চিত্র বিভাগে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে ইরানের ‘হোয়াইট ব্রিজ’, দর্শক বিবেচনায় সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে ভারতের ‘টোপি’।

নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা বিভাগে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে রাশিয়ার ‘সোফিস্কা’, স্বল্পদৈর্ঘ্যে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘থ্যাঙ্কু ইউ ফর দ্য রেইন’।

সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আফগানিস্তানের ‘পারলিকা’, কাহিনীচিত্রে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে ফ্রান্সের ‘লেস বিগোরনিয়াক্স’, শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র চেক প্রজাতন্ত্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘আনা’।

শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম বিভাগে কাহিনীচিত্রে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ‘পুনঃপৌনিক’, শ্রেষ্ঠ কাহিনীচিত্র হয়েছে ইরাকের ‘দ্য ভায়োলেট’, প্রামাণ্যচিত্রে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে নেপালের ‘এ সঙ ফর বারপাক’ ও শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র হয়েছে যুক্তরাজ্যের ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফট’।

বাংলাদেশ প্যানোরোমা বিভাগে চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন ফিপরেসির সৌজন্যে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হয়েছে লতা আহমেদের ‘সোহাগীর গয়না’ ও তৌকির আহমেদ ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ নির্মাতা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া-এশিয়া কম্পিটিশন বিভাগে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হয়েছে তুরস্কের ‘জার’। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক হয়েছেন তুরস্কের অনুর সায়লাক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হয়েছেন ফিলিপাইনের অ্যানের ডিজোন, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হয়েছেন ইরানের পারিনাস ইজাডায়ার ও মিনা সাদাতি, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক হয়েছেন ইরানের মাসুদ সালামি ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হয়েছেন তুরস্কের অনুর সায়লাক, ডগু ইয়াসার আকাল ও হাকান গান্ডে।

স্পিরিচুয়াল ফিল্মস বিভাগে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হয়েছে রাশিয়ার ‘আমুন’, পূর্ণদৈর্ঘ্যে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে তাজিকস্তানের ‘ব্রেক থ্রু’, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার যৌথ প্রযোজনার ‘এখ : বিয়োন্ড দ্য সুনামি’ এবং সেরা কাহিনীচিত্র ইরানের ‘স্টিল ইয়েট’।

নয় দিনের এ উৎসবে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় এশিয়ান ফিল্ম  ক্রিটিকস অ্যাসেম্বলি কনফারেন্স, যাতে এশীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকাররা অংশ নেন।

এছাড়াও উৎসবের অংশ হিসেবে রাজধানীর পাঠশালায় ছিল অষ্টম ঢাকা আন্তর্জাতিক সিনে ওয়ার্কশপ। ফরাসি নারী নির্মাতা জুলি বার্টুসেলি এবং সিলিনি সিএমার ৭টি ছবি দিয়ে সাজানো ছিল রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগটি। এই বিভাগের সবগুলো চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয় আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তনে।