ঢালিউডে ভেঙ্কটেশ: হারানোর চেয়ে ‘প্রাপ্তিই বেশি’

বছরখানেক ধরেই চলছিল গুঞ্জনটা। রাখঢাক না করে এবার আনুষ্ঠানিক ভাবে এল ঘোষণা। এ শীতেই চিত্রনায়ক শাকিব খানকে বাজি ধরে ঢালিউডে তাবু গাড়ছে কলকাতার প্রভাবশালী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস (এসভিএফ)।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2018, 04:25 PM
Updated : 15 Jan 2018, 09:28 AM

শনিবার প্রযোজনা সংস্থাটির ফেইসবুক পেইজে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে নাম নির্ধারণ না হওয়া একটি ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন শাকিব খান। তার বিপরীতে অভিনয় করছেন নুসরাত ও সায়ন্তিকা।

সিনেমার ফার্স্টলুক পোস্টার প্রকাশ করে এসভিএফ জানায়, “এবার বাংলাদেশের বন্ধুদের জন্য হয়ে যাক। বাংলাদেশের মেগাস্টার শাকিব খান অভিনীত একেবারে নিজেদের ছবি নিয়ে প্রথমবারের মতো আমরা বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করছি।”

ইতিমধ্যে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস রাজধানীর মতিঝিলে একটি অফিসও নিয়েছেও বলে খবরে প্রকাশ। প্রতিষ্ঠানটির একজন নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসটির দায়িত্বে আছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, এখন থেকে আর যৌথ প্রযোজনা নয়, স্থানীয় ভাবেই বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে অর্থ লগ্নী করবে প্রতিষ্ঠানটি। মুক্তি পাবে দেশের সিনেমা হলগুলোতেই। পরে সিনেমাগুলো সাফটা চুক্তির আওতায় ভারতেও মুক্তি দেওয়া হবে।

এসভিএফের এ ঘোষণাকে চলতি বছরের সবচেয়ে বড় চমক হিসেবেই দেখছেন ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশিষ্টরা।

টালিগঞ্জের নাম্বার ওয়ান এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে স্বাগতম জানান চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক।

রোববার সন্ধ্যায় গ্লিটজকে এ চিত্রনায়ক বলেন, “দেশে আরও ছবি হওয়া দরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত সিনেমা হচ্ছে না। ওরা লোকাল প্রোডাকশন করলে তা আমাদের জন্য পজেটিভ। নিয়ম মেনে তারা যদি দেশে টাকা লগ্নী করেন তাহলে অবশ্যই আমরা স্বাগত জানাব।”

তিনি নিজেও বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার নারায়ণ ঘোষের পরিচালনায় কলকাতার একটি স্থানীয় সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন বলে জানান।

তিনি জানান, সেই সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে ভারতীয় সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়েছিল। বেশ কিছু নিয়ম-কানুন মেনেই সেখানে কাজ করেছিলেন তিনি।

তেমনি বাইরের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দেশে কাজ করলে সরকার মোটা অংকের ট্যাক্স পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পাশাপাশি আরও কিছু লাভের খতিয়ান খুললেন, আমাদের অনেক আর্টিস্ট বেকার। সেক্ষেত্রে আর্টিস্টরা কাজ পাবে। টেকনিশিয়ানরাও ব্যস্ত হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে সিনেমা নির্মাণ বাড়বে। মানুষও হলমুখী হবে।

বাংলাদেশে এসভিএফের ব্যবসা সম্প্রসারণের কারণ কী?

বর্তমানে কলকাতার চলচ্চিত্রের মন্দাভাবের কারণেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বাজার নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন এ মুক্তিযোদ্ধা।

নিজের চোখে টালিগঞ্জের উত্থান ও পতন দেখেছেন তিনি। জানালেন, এক সময় টালিগঞ্জে কোনও চলচ্চিত্র হত না। পরে আস্তে আস্তে ইন্ডাস্ট্রি মাথা তুলে দাঁড়াতে থাকে।

বাংলাদেশের টেকনিশিয়ান, অভিনয়শিল্পীরা সেখানে গিয়ে কাজ শুরু করলে ইন্ডাস্ট্রি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠে। পরে একসময় কলকাতা ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়।

 

ঘটনাক্রমে এখন আবার কলকাতায় চলচ্চিত্রের ব্যবসা মন্দা চলছে।

তিনি বলেন, “উত্তম-সুচিত্রা আর সৌমিত্রের সেই সোনালী যুগ আর নেই। হয়ত মাঝে মাঝে দু’একটা ভালো সিনেমা হচ্ছে তবে সেখানকার বাজারটা পড়ে গেছে। সেকারণেই কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের মার্কেটে ধরতে চাচ্ছে।”

বিষয়টিতে কীভাবে দেখছেন স্থানীয় প্রযোজকরা?

প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুও স্বাগতম জানালেন ভারতীয় এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে। গ্লিটজকে বলেন, “ভারতীয় প্রযোজকরা বলছিল, দেশে হিন্দি সিনেমা আসবে। কিন্তু আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন। আমাদের আর্টিস্টরা কাজ করুক। টেকনিশিয়ানরা আরও ডেভলপ করুক। ভালো ছবির অভাব দেশে। ভালো সিনেমা হলে অবশ্যই মানুষ দেখবে।”

সেক্ষেত্রে লোকাল প্রডিউসাররা কী করছেন?

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার দিকে ইঙ্গিত তুলে তিনি বলেন, “লোকাল প্রডিউসাররা তো জিম্মি। আমি নিজের টাকায় সিনেমা বানিয়ে চালানোর সময় এক জনের ধর্না ধরে থাকতে হবে। উনি দয়া করলে হল পাবো অন্যথায় পাবো না।

আগে বছরে দু’তিনটা সিনেমা করতাম। কিন্তু এই জিম্মি দশায় বন্দি হয়ে আর সিনেমা করছি না।”

শুধু এসভিএফই নয়, তিনি চান, রিলায়েন্স ও মুকেশ ভাটরাও বাংলাদেশি সিনেমায় অর্থলগ্নী করুক।

এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রযোজকরা হুমকির মুখে পড়বে কি?

 “দেশে তো সিনেমাই নির্মাণ হচ্ছে না পর্যাপ্ত। বছরে যেখানে ছবি লাগে ১২০টি। সেখানে ৬০টিরও কম ছবি নির্মাণ হচ্ছে। সেখানে স্থানীয় প্রযোজকদের জন্য ঝুঁকির কিছু দেখি না আমি।”

‘জিম্মি দশা’ নিয়ে প্রযোজক খসরুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

বিষয়টি তাকে জানালে তিনি বলেন, “হল পাওয়ার জন্য আমার পেছনে ঘুরতে হয় না। তবে যারা মনে করতেছে আমার পেছনে ঘুরতে হয় তারা হলে মেশিন বসাক। তারা মেশিন বসালেই পারে।”

নানা ইস্যুতে চিত্রনায়ক ফারুক, প্রযোজক খসরু ও প্রযোজক আবদুল আজিজ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ালেও এসভিএফ ইস্যুতে এক কাতারেই দাঁড়ালেন তারা। খসরু, ফারুকদের মতো কলকাতার এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে আবদুল আজিজও স্বাগতম জানালেন ঢাকায়। তার ভাষ্যে, এতে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হবে।

কীভাবে?

“ওরা যদি বড় বড় ছবি বানায়, আমাদের ছবি তো ছোট ছোট তাই চলে না। পাবলিক দেখে না। ওরা যদি বিগ বাজেটের ছবি করে তাহলে হলগুলো বাড়বে।”

গত বছর ‘ডুব’-এর মতো বিগ বাজেটের চলচ্চিত্রও তো বানিয়েছে জাজ মাল্টিমিডিয়া? আবদুল আজিজ বলেন, “আরও বিগ বাজেটের ছবি হইলে ভালো।”