‘খল চরিত্র নিয়ে কোনো কনফিউশন ছিল না’

ছোটপর্দার রোমান্টিক ইমেজ ভেঙে ‘গহীন বালুচর’ চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো খল চরিত্রে বড়পর্দায় হাজির হলেন অভিনয়শিল্পী জিতু আহসান। গ্লিটজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানালেন, খল চরিত্রে অভিনয়ের কারণ, দেরিতে চলচ্চিত্রে আসার কারণ ও বর্তমান নাটকের হালচাল।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2017, 02:20 PM
Updated : 30 Dec 2017, 02:29 PM

গ্লিটজ: খল চরিত্রে বড়পর্দায় অভিষেক হল আপনার। ‘গহীনে বালুচর’-এর হানিফ শিকদারকে কীভাবে দেখছে দর্শক?

জিতু আহসান: গতকাল কিছু হলে গিয়েছিলাম। দেখলাম, চরিত্রটি দর্শকরা বেশ পছন্দ করেছে। আমি একটু অবাকই হয়েছি। দর্শকদের উচ্ছ্বাস দেখে ভালো লেগেছে।

গ্লিটজ: চরিত্রটা আপনার কাছে কেমন লেগেছে?

জিতু আহসান: স্ক্রিপ্টা পড়েই হানিফ শিকদারের চরিত্রটি আমার খুব ভালো লাগে। সৌদ ভাইকে একবাক্যে বলেছিলাম, সিনেমাটি আমি করছি।

খল চরিত্রে অভিনয় করছি কিনা-এটা নিয়ে আমার মধ্যে কোনো কনফিউশন ছিল না। সমসাময়িকদের মধ্যে অনেকে হিরোর চরিত্রে কাজ করেছে। কিন্তু আমি ভেবেছি টোটাল রিভার্স একটি কাজ করব। সেই ভাবনা থেকেই কাজটি করা।

গ্লিটজ: খল চরিত্রে নিয়মিত হবেন নাকি?

জিতু আহসান: অবশ্যই বড়পর্দায় কাজ করব। এই স্ক্রিপ্ট পড়ে যেমন চরিত্রটা ভালো লেগেছে ওই ধরনের চরিত্র পেলে করব।

সিনেমাটি দেখে অনেকে বলেছে, ‘ভাই প্লিজ আপনি ভিলেন চরিত্র করেন। বাংলা চলচ্চিত্রে ভিলেন দরকার। দুর্দান্ত লেগেছে।’

সিনেমার শো’  শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি জিতু আহসান।

আমি আসলে কোনো কিছু হিসেব করে কাজটি করিনি। ধরুন, আপনি মার্কেটে গেলেন। একটা শার্ট খুব ভালো লাগল। আপনার ভালো লেগেছে বলে কোনো হিসেব না করেই শার্টটা কিনে ফেললেন। আমার কাছে এই চরিত্রটাও ঠিক তাই।

আমার ভালো লেগেছে বলেই কাজটা করেছি। ভবিষ্যতে যদি ভালো চরিত্র পাই অবশ্যই করব।

ভিলেন হওয়ার জন্য ভিলেন হতে হবে- এমনটা কোনো বিষয় না। ভালো চরিত্র পেলে সেটা ভিলেন হোক কিংবা অন্ধ হোক-সেটা কোনো বিষয় না।

গ্লিটজ: বড়পর্দায় আসতে দীর্ঘ সময় নিলেন..

জিতু আহসান: বয়স যখন কম ছিল তখনও চলচ্চিত্রের অফার পেয়েছি। ২০১৫ সালের দিকে ইন্ডিয়া থেকেও কাজের অফার পেয়েছিলাম। দেশে অনেক নির্মাতা দু’একটা চরিত্রের জন্য আমাকে অফার করেছিল।

অনেক সময় কাছের মানুষের সিনেমায় কাজ না করায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। কিন্তু কাজটা এতদিন করিনি বলে আমার কোনো ধরনের রিগ্রেট নাই।

যখন ভালো লাগেনি তখন আমার কাছে মনে হয়েছে ওইভাবে আমি আসতে চাইনি বড়পর্দায়। আমার সমসাময়িক অনেকে করেছে কিন্তু তাতে আমার কিছুই যায় না, আসেও না। এই চরিত্রটা আমার ভালো লেগেছে বলেই করেছি।

গ্লিটজ: নাটকেও এখন আপনি অনিয়মিত

জিতু আহসান: একসময় একসঙ্গে সাত-আটটা সিরিয়াল করতাম। কিন্তু এখন যে পাণ্ডুলিপিগুলো পাই সেগুলো খুব টানে না।

আমি নিজেও একটু সিলেক্টিভ। আর বয়সও তো হয়েছে। যে কোনো একটা আছে বলেই করতে হবে-এমনটা মনে হয় না।

মানুষজন তো একটা সময় পর্যন্ত আমার কাজ দেখেছে। দর্শক ভালোই বলত। সেই ভালো বলার ইমেজটাই ধরে রাখতে চাই।

খামোখা এমন একটা কাজ করলাম, যেটা দেখে দর্শকরা বিরক্ত হল। তার চাইতে দর্শকদের স্মৃতির মনিকোঠায় যতটুকু আছি সেটা নিয়েই থাকি।

সিনেমার প্রেস কনফারেন্সে।

তারপরও মাঝে মধ্যে কাজ করি। এখন হয়ত মাসে বিশদিন শুটিং করব না, পাঁচদিন করব। তাতে আমার কোনো অসুবিধা নেই।

গ্লিটজ: এখনকার নাটকের মান নিয়ে আপনার অসন্তোষ বেশ স্পষ্ট। আমাদের নাটক এখন কী ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন আপনি?

জিতু আহসান: একটা উদাহরণ দিই। দুইদিন আগে টিভিতে একটি ধারাবাহিকে দেখলাম, চা বানানো নিয়ে পুরো একটা পর্ব শেষ! শুধু চা-ই বানাচ্ছে। ‘এই চা ভালো হয়নি। ওকে কী দিব? চা’র মধ্যে কি কিছু থাকতে পারে?’-এই ধরনের কথা বলেই একটা পর্ব শেষ করে দেয়।

তখন বুঝলাম, আমরা খামোখা সুলতান সুলেমান কিংবা ইন্ডিয়ান সিরিয়ালকে কেন দোষ দিব? আমি নিজে যদি চা বানানো নিয়ে একটা পর্ব করি তাহলে দর্শককে কেন দোষ দেব? চা বানানো শেখার জন্য টিভির সিরিয়াল দেখার দরকার পড়ে না।

এখন দর্শককে নাটক দেখানো হয় না, ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেওয়া হয়। চল্লিশ মিনিটের নাটক টেনে আড়াই ঘণ্টায় নিয়ে যাওয়া হয়। সিরিয়ালগুলোর বডি থাকে ষোল মিনিট। এর মধ্যে প্রিভিয়াস সিন, বিজ্ঞাপন তো আছেই।

কিছুদিন আগে এক চ্যানেলে আমার নাটক প্রচার হচ্ছিল। নাটক চলতে চলতে হঠাৎ স্ক্রিণটা ছোট হয়ে গেল। বামে গরু মার্কা ঢেউটিন, জুঁই নারকেল তেলের বিজ্ঞাপন শুরু হল। বিজ্ঞাপনের চাপে নাটকের পাত্র-পাত্রীর চেহারা ছোট হলে গেল। আমার মনে হয় না, পৃথিবীর কোনো দেশে এমনটা আছে।

অভিনয়শিল্পীদের চেহারা ছোট করে ফেলে স্ক্রিণে তেলের, ঢেউটিনের, গরু-ছাগলের বিজ্ঞাপন দেওয়াটা খুব দুঃখের ব্যাপার। আমাদের কাজ কতটা নগন্য পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, আমার নাকের উপর দিয়ে ঢেউটিনের বিজ্ঞাপন দেয়। খুব দুঃখ লাগে।

নাটকে অতিমাত্রায় বাণিজ্যিকীকরণ চলছে। ফলে সেই চা বানানোর মতো সিরিয়াল চালাচ্ছি। অনএয়ার হয়েছে, এখন চেক পেয়ে গেলেই শেষ।

এগুলো অপেশাদার সুলভ আচরণ। কাজটা আমাদের জীবিকার মাধ্যম। তাহলে সেটা সিরিয়াসলি কেন করবেন না? কারও মধ্যে এই ব্যাপারটা নিয়ে তাগিদ নেই। কেমন যেন সব খাপছাড়া।

গ্লিটজ: আর বড়পর্দার কী অবস্থা দেখছেন?

জিতু আহসান: ভালো ছবি হলে মানুষ এখনও উচ্ছ্বাস নিয়ে দেখে। বড়পর্দায় বসে তার হাতে কোনো রিমোট থাকে না। খবরের বিরতি, গানের বিরতি নাই। মানুষ টানটান উত্তেজনা একটা সিনেমা দেখতে পাচ্ছে।

ছোটপর্দায় আমরা অনেক কিছুই করি কিন্তু আনফরচুনেটলি সেটা মানুষের চোখে পড়ে না। ছোটপর্দায়ও আমরা ভালো কাজ করার জন্য অনেক চেষ্টা করি। কেউ খুব একটা দেখেই না।

অন্যদিকে বড়পর্দায় মানুষ কাজ দেখছে। ২০০ টাকা টিকিট কেটে মানুষ হলে ঢুকেছে। যে কারণে সে হলে ঢুকেছে সে খুশি হয়ে বের হচ্ছে। এটাই আসলে প্রাপ্তি।

গ্লিটজ: অভিনয়ে যেহেতু আপনি খুব বেশি সময় দেন না ইদানীং। সেক্ষেত্রে অভিনয়ের বাইরে সময়গুলো কীভাবে কাটছে?

জিতু আহসান: টুকটাক কিছু ব্যবসা আছে। ওগুলোই আপাতত দেখাশোনা করছি।