উৎসবে-সম্মাননায় তারেক স্মরণ

প্রখ্যাত নির্মাতা তারেক মাসুদের ৬১তম জন্মবার্ষিকী আজ। অকালপ্রয়াত এ নির্মাতার সম্মানে দু’দিন ব্যাপী জন্মোৎসব পালন করা হচ্ছে তার জন্মস্থান ফরিদপুরে।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2017, 12:59 PM
Updated : 6 Dec 2017, 12:59 PM

স্বাধীন চলচ্চিত্রের অন্যতম রূপকার অকাল প্রয়াত নির্মাতা তারেক মাসুদের জন্মদিন উপলক্ষে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপলজেলার নূরপুর গ্রামে দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

তারেক মাসুদের পরিবারের পক্ষ থেকে চলতি বছর প্রবর্তন করা হয়েছে ‘তারেক মাসুদ সম্মাননা’। ২০১৭ সালে এ সম্মাননা পাচ্ছেন দেশের ৪গুণী ব্যক্তিত্ব- চলচ্চিত্র পরিচালনায় নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সংগীতে খায়রুল আনাম শাকিল, অভিনয়ে রোকেয়া প্রাচী, সাহিত্যে টোকন ঠাকুর।

দু’দিন ব্যাপী জন্মোৎসবের আজ উদ্বোধন করবেন তারেক মাসুদের মা নুরুন্নাহার মাসুদ। জন্মদিনের সংগীত সন্ধ্যায় ‘তারেক মাসুদ সম্মাননা-২০১৭’ প্রদান করা হবে খায়রুল আনাম শাকিলকে। বিষয়টি গ্লিটজকে নিশ্চিত করেছেন তারেক মাসুদের ভাই সাঈদ মাসুদ।

তিনি বলেন, “দু’দিনব্যাপী উৎসবের আজ উদ্বোধন হলো। আট তারিখে আমাদের মূল অনুষ্ঠানটি হবে।আমরা যাদের সম্মাননা দিচ্ছি তাদের মধ্যে শাকিল ভাই সেদিন উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে আজ তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।

৮ তারিখে বাকি তিন গুণী শিল্পীদের সম্মাননা জানানো হবে। পাশপাশি সারাদেশ থেকে শতাধিক কবিরা আসবেন। তাদের নিয়ে কবিতা উৎসব-২০১৭ ও মাদুলি পত্রিকার ‘তারেক মাসুদ সংখ্যা’ প্রকাশ করা হবে।”

‘তারেক মাসুদ সম্মাননা’ প্রাপ্তিতে পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী।

তিনি বলেন,“ মোরশেদুল ইসলামের ‘দুখাই’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আমার হাতেখড়ি। কিন্তু তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আরেকটি যাত্রা শুরু হয়।তার সঙ্গে কাজ করে আমি অনেক সমৃদ্ধ হয়েছি।

সেই তারেক ভাইয়ের অকালপ্রয়াণে শুধু আমি না, পুরো চলচ্চিত্র অঙ্গনই অভিভাবকশূন্য হয়েছে।

সে জায়গা থেকে তার পরিবার ও ট্রাস্ট যে ধরনের সাংস্কৃতিক উদ্যোগগুলো নিচ্ছে তার মধ্যে আমাকে সম্মাননা জানানো আমার জন্য অনেক বড় আশীর্বাদ, অনেক সম্মানের।”

তিনি আরও বলেন, “তারেক ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ছিল অনেকটা ছাত্রী-শিক্ষকের মতো। আমি এখনও মনে করি তিনি আছেন তার কাজের মধ্য দিয়ে। তার নামে সম্মাননা প্রাপ্তিতে আমি অনেক কৃতজ্ঞ তার পরিবারের কাছে।”

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে যিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন, তিনি ‘মাটির ময়না’র পরিচালক তারেক মাসুদ। জাতীয় আত্মপরিচয়, লোকজ ধর্ম ও সংস্কৃতি তার সিনেমায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

১৯৫৬ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় জন্মগ্রহণ করা তারেকের শিক্ষাজীবনের শুরুটা ছিল মাদ্রাসায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি।

১৯৮৯ সালে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে ‘আদম সুরত’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তারেক মাসুদ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ১৯৯৫ সালে তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’ (১৯৯৬) প্রশংসিত হয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।

এরপর ২০০২ সালে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিক অ্যাওয়ার্ড পায়। স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ছিলেন এই চলচ্চিত্রের সহ পরিচালক।

নিজেদের প্রোডাকশন হাউজ অডিও-ভিশন থেকে এরপর ‘অন্তর্যাত্রা’ (২০০৬) ও ‘রানওয়ে’ (২০১০) নামে আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন মাসুদ ও ক্যাথরিন।

১৯৪৭-এর দেশভাগ নিয়ে ‘কাগজের ফুল’ নামে আরেকটি সিনেমা বানানোর কাজে হাত দেওয়ার পরপরই ২০১১ সালের অগাস্টে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার।