‘নিত্যপুরাণ’ এক বীরের নির্মম পরাজয়ের গল্প

২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ মহিলা সমিতিতে মঞ্চস্থ হবে ‘নিত্যপুরাণ’ এর ৫৯তম মঞ্চায়ন।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2017, 02:15 PM
Updated : 23 Nov 2017, 02:15 PM

দ্বিতীয় দফার যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, ১৪ বছর পর তারই ধারাবাহিকতায় ৫৯তম বারের মতো ঢাকার মঞ্চ মাতাতে আসছে মাসুম রেজার জনপ্রিয় নাটক ‘নিত্যপুরাণ’| নাটকটি প্রথম মঞ্চস্থ হয়েছিল আঠারো বছর আগে। সে সময় দর্শক সমাদৃত হয় নাটকটি। নাটকের মূল চরিত্র একলব্যর ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন দিলীপ কুমার। পরে এই অভিনেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে থমকে যায় ‘নিত্যপুরাণ’ এর পথচলা।

এরপর একলব্য চরিত্রে মামুন চৌধুরী রিপনের অভিষেকের মধ্য দিয়ে ১৪ বছর পর মঞ্চে ফেরে ‘নিত্যপুরাণ। ১১ ও ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয় নাটকটি। এতে একলব্য চরিত্রে রূপদান করেছেন মামুন চৌধুরী রিপন, ব্যাসদেব চরিত্রে আসিফ হাসান, যুধিষ্ঠিরের চরিত্রে কামাল আহমেদ, ভীমসেন চরিত্রে ফিরোজ আলম, অর্জুনের চরিত্রে লরেন্স উজ্জ্বল গমেজ, নকুল চরিত্রে হোসাইন নিরব, সহদেবের চরিত্রে মাইনুল হাসান মাঈন, দ্রোণাচার্যের চরিত্রে সমাপন সরকার এবং দ্রৌপদীর চরিত্রে অভিনয় করছেন বন্যা মির্জা।

নাটকে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দ ‘সেই’, যার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে নারীর ভেতরে লুকিয়ে থাকা অজস্র আর্তনাদ। অনেক সত্য উচ্চারণ বুকের ভেতর চাপা দেওয়ার একমাত্র হাতিয়ার এই একটি উচ্চারণ ‘সেই’। গল্পে দেখা যায়, একলব্যর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দ্রৌপদী লুকানোর চেষ্টা করে ‘সেই’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। একলব্য ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে বলে, “পুনরায় সেই বলে কিছু নেই মহিষী। সত্য স্বীকার করুন। ভালো লাগে শর্ত? যে শর্তের জালে আপনি আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা! পঞ্চপতির এক ভার্যা। ভালো লাগে দ্রৌপদী?'” একলব্য  দ্রৌপদীর সামনে আয়না হয়ে দাঁড়ায়। আয়নার সামনে যেমন চেহারা ভেসে ওঠে ঠিক তেমন অরণ্যচারী যুবক একলব্যর সামনে উন্মোচিত হয় পাণ্ডবভার্যার অন্তরের সত্যকথন।

দ্রৌপদী বলে ওঠে, “'ভালো লাগে না একলব্য, একটুও ভালো লাগে না।” যে একলব্য কোনোদিনও প্রেম পায়নি, কিন্তু তার সেই কথার সারমর্মই “প্রেম পেলে যুদ্ধ থামে”'। নিষাদরাজ হিরণ্যধনুর পুত্র অরণ্যে কাটানো জীবনে কোনোদিন শুনতে পায়নি রমনীয় কণ্ঠস্বর। প্রেমের কি বোঝে সে?- এ প্রশ্ন ছিল পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যমপান্ডব অর্জুনের।

মহাবীর বলে জগৎজোড়া খ্যাতি যার, খ্যাতিময় অহংকার যার বুকে, সেই অর্জুনের এমন উচ্চারণ নিমিষেই উড়িয়ে দিয়ে প্রেমের বর্ণনা করে একলব্য। সমস্ত পাণ্ডবের চোখে স্বভাবসুলভ হিংসা ছড়ায়। শুধু প্রেমে ডোবে পাঞ্চালী। পঞ্চপাণ্ডবের এক ভার্যা পাঞ্চালী। ক্ষণকাল আগে একলব্যর সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়েছে অর্জুন। শর্ত অনুযায়ী মৃত্যুই যখন পঞ্চপাণ্ডবের একমাত্র পরিণতি, ঠিক তখন দেখা দেয় নতুন গোলযোগ। পঞ্চপাণ্ডবদের একযোগে হত্যার উদ্দেশ্যে একলব্য পাঁচটা তীর রেখেছিল। কিন্তু তার অরণ্যের সখা শ্যোনপাখি খেলাছলে একটি তীর নিয়ে যাওয়াতেই এ সঙ্কট।

এরপরই একলব্যর চাওয়া অনুযায়ী সর্জবনে আগমন ঘটে দ্রৌপদীর। একলব্যর নতুন শর্ত দ্রৌপদীর ইচ্ছাতেই বাঁচবে এক পাণ্ডবের জীবন। হিরণ্যধনুর পুত্রের শত অনুনয়েও দ্রৌপদীর অন্তর সত্য উচ্চারণ করে না। বলতে পারেনা পঞ্চপাণ্ডবের কোন পান্ডবকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।

পঞ্চপাণ্ডবও বলতে পারেনা তাদের ভেতর কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে পাঞ্চালীকে। এভাবেই এগিয়ে যায় মাসুম রেজার ‘নিত্যপুরাণ’।