কী করব তা নিয়ে বাবা-মা কখনও প্রভাবিত করেননি: নন্দনা সেন

বাংলা, ইংরেজি, হিন্দিসহ ভারতের বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় করে কখনো নন্দিত আবার কখনও সমালোচিত হয়েছেন, কাজ করেছেন শিশু নির্যাতন রোধে, লিখেছেন শিশুসাহিত্য-এভাবে স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছেন নন্দনা সেন।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2017, 02:49 PM
Updated : 17 Nov 2017, 03:00 PM

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেনের মেয়ে নন্দনা বললেন, ‘তারকা’ বাবা-মায়ের সন্তান হিসেবে সব সময় বাড়তি মনোযোগে ছিলেন। তবে বাবা-মা কখনও তার জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করেননি।

লিট ফেস্টে যোগ দিতে ঢাকায় আসা নন্দনা শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের কাজ, বেড়ে ওঠা, বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক, পূর্বপুরুষের নিবাস ঢাকার প্রতি ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন।

নিজের কাজ নিয়ে নন্দনা বলেন, চলচ্চিত্রের জগত থেকে বেরিয়ে এসে এখন শিশু সাহিত্য নিয়ে ব্যস্ত তিনি। শিশুদের নিয়ে লিখেছেন চারটি বই। করছেন সম্পাদনা, চিত্রনাট্য রচনা ও কবিতার অনুবাদও। ভারতের পদ্মশ্রী পুরস্কারজয়ী লেখিকা মা নবনীতার বেশ কয়েকটি সাহিত্য অনুবাদ করছেন।

ভারতে বিভিন্ন ভাষার চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূলত চিত্রনাট্য দেখে অভিনয় করি, নানা ভাষায় অভিনয় করেছি আমি। আমার অভিনীত প্রতিটি চলচ্চিত্রেই কোন না কোন সামাজিক দায়িত্ববোধের কথা বলা হয়েছে।”

নন্দনা সেন অভিনয় করেছেন বলিউডের ‘ব্ল্যাক’, ‘মাই ওয়াইফস মার্ডার’, ‘ট্যাঙ্গো চার্লি’, ‘ম্যারিগোল্ড’, ‘রং রসিয়া’, কলকাতার ‘অটোগ্রাফ’সহ গোটা বিশেক চলচ্চিত্রে। বাংলা, হিন্দি ছাড়াও ইংরেজি ও ইতালিয়ান ভাষার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি।

বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রতিটি দেশের চলচ্চিত্রে অভিনয়ে পার্থক্য রয়েছে। হলিউডের সঙ্গে নিউ ইয়র্কের ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কর্মপ্রক্রিয়া আলাদা। প্রতিটি জায়গাতেই কাজ করার অভিজ্ঞতা ভালো। তবে বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের বিষয়টা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা।”

২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত কলকাতার ‘অটোগ্রাফ’ চলচ্চিত্রটি টালিউডে নতুন ভাবনার খোরাক যুগিয়েছিল। সেই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখাতেও সহযোগিতা করেছিলেন নন্দনা।

সেই অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দারুণ অভিজ্ঞতা! অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখাতেও সাহায্য করেছি। সে সঙ্গে বুম্বা দা’র (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) প্রথম অভিনয় করাটাও ছিল দারুণ।”

চলচ্চিত্রে কেন দেখা যায় না-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সময়ে নন্দনা সেন কিন্তু পাঁচটি বই লিখেছে।

চলচ্চিত্র থেকে ক্রমেই দূরে সরে আসা নন্দনা বলেন, “আসলে একটা মানুষ নানাবিধ সৃজনশীল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। এখন বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করার মানে এটা নয় যে, কখনো চলচ্চিত্রে আর অভিনয় করা হবে না। আসলে সব সময় একটা কাজ নিয়ে আগানো উচিত।”

শিশুদের নিয়ে নতুন বই প্রসঙ্গে তিনি জানান, ফ্রান্স ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন বইয়ের কাজ চলছে। ‘আর্থ সং’ শিরোনামের এই বইয়ের জন্য ছবি আঁকবেন একজন ফরাসি শিল্পী। বইটি মূলত জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে শিশুদের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক। এর পাশাপাশি ধারাবাহিক শিশুতোষ চরিত্র ‘ম্যাম্বি’ নিয়ে নতুন আরেকটি উপন্যাসের কাজও চলছে।

আলাপচারিতায় নিজের বেড়ে উঠা নিয়ে নন্দনা বলেন, ‘তারকা’ অভিভাবকের সন্তান হিসেবে সব সময়ই একটি বিশেষ দৃষ্টি তার উপরে ছিল।

“কিন্তু বাবা বা মা-কেউই আমাকে কখনও সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেননি। নিজের মতো করে নিজের জীবনের পথ বেছে নিয়েছি। তাই যখন যেটা মন চেয়েছে, তখন সেটাই করেছি। বর্তমানে শিশুদের নিয়ে কাজ করছি।”

কৈশোরে মা-বাবার বিচ্ছেদের ঘটনা তাকে নাড়া দিলেও কখনও বাবার সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হননি বলে জানান নন্দনা সেন।

“বাবা লন্ডন থেকে কলকাতায় আমাকে চিঠি পাঠাত। আমার ডাক নাম টুম্পা। বাবা কী মিষ্টি করে চিঠি লিখতেন! প্রতি সপ্তাহে বাবার চিঠি আসত। বাবার সঙ্গে যোগাযোগ তো বন্ধ হয়নি কখনও। মা -বাবার বিচ্ছেদের পর খারাপ একটু লেগেছে। কিন্তু আমি যখন বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করি, তখন মা তো আমাকে বাধা দেননি।”

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসে উচ্ছ্বসিত নন্দনা সেন বলেন, “এই ঢাকাতেই তো আমার শেকড়। পুরান ঢাকার লালমোহিনী স্ট্রিটের বাড়িটি আমি অনেক খুঁজে বের করেছি। আমার মনে হয়, আমি নাড়ির টানেই এখানে ছুটে এসেছি।  পিতৃভিটায় দাঁড়িয়ে কী যে ভালো লাগছে!

“বহুবার শুনেছি, বাংলাদেশ আমারই দেশ। এসে মনে হচ্ছে, এটা আমারই দেশ।”