ছোটবেলার পূজার দিনগুলো মিস করি

শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বিদের যাপনচিত্র সম্পূর্ণ ভিন্নরকমের। দুর্গোৎসবের শৈশব-স্মৃতি নিয়ে লিখলেন কলকাতার মডেল ও অভিনেত্রী মৌমিতা হরি ।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2017, 11:30 AM
Updated : 29 Sept 2017, 07:53 AM

পূজা এসেছে, এটা শুনেই ভালো লাগছে। যদিও আমি সব উৎসবই উপভোগ করি। সেটা হোক পূজা, ঈদ কিংবা বড়দিন। পূজার পাঁচটা দিন একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে।

মহালয়ার দিন থেকেই পূজা পূজা আমেজ আর গন্ধ থাকে। শরৎ আকাশে কাশফুলের দোলা । ভোরবেলা শিউলি ফুলের গন্ধে ঘুম ভাঙে। আহা! সত্যিই একটা অদ্ভুত ভালোলাগা।

ছোটবেলার পূজাগুলোই সব থেকে ভালো কেটেছে। স্কুল ছুটি থাকত পাক্কা বিশ দিন। পূজার সময় পড়াশোনা নিয়ে বাড়িতে কেউ বকাবকি করতো না। আর মাসদুয়েক আগে থেকেই পূজার শপিং শুরু হয়ে যেত। কোন দিন কোন পোশাক পরবো, আর কবে শাড়ি পরবো-এ নিয়ে চলতো প্রতিযোগিতা।

ষষ্ঠীর দিন ভোরে পাড়ার মেয়েরা মিলে ফুল তুলতে বেরুতাম। সকাল সকাল পূজার গোছগাছ সেরে ফেলতাম। প্রসাদ দিতাম সবাইকে। আমাদের বাড়ির একদম পাশেই পূজা হয়। এখনো সেখানেই মন্ডপ বানানো হয়। ছোটবেলা থেকে এখনো অবধি সব পূজা পরিবারের সঙ্গেই কাটিয়েছি।

সব থেকে ভালো লাগে সকালে অষ্টমী পূজার অঞ্জলি । আমরা মেয়েরা শাড়ি পরতাম আর পাড়ার সব ছেলেরা পরতো পাঞ্জাবী। সবাই মিলে অঞ্জলি দিতাম। 

পূজার মধ্যেই কোনো একরাতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরুতাম। আর আমার চোখে পূজার বিশেষ মুহূর্ত হলো বিজয়া দশীর দিনের সিঁদুর খেলা। পাড়ার সব বউদের সঙ্গে আমার মা, ছোটমাও ঠাকুর বরণ করতেন। আর আমরা তাদের প্লেট থেকে সিঁদুর নিয়ে একে ওকে মাখাই। সঙ্গে চলতো ধুনুচি নাচ। সবাই মিলে পাগলের মতো নাচতাম।

তারপর রাত বারোটা-একটার সময় শুরু হয় বিসর্জন। বিসর্জন শেষে বাড়িতে এসে বড়দের প্রণাম করে মিষ্টি খাই। পরদিন সকালে খুব মন খারাপ হত। এখনো হয়। মনে হতো পূজাটা পাঁচদিন না হয়ে দশদিন হতে পারে!

ছোটবেলার পূজায় যা করতাম, এখনো তাই করি। কিন্তু এখন আগের সেই আমেজটা আর নেই।এখন সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। পূজার সময় সবার সঙ্গে দেখা হয়। যারা বাইরে থাকে তারা ছুটিতে বাড়িতে আসে। খুব মজা করি। কিন্তু ছোটবেলার ব্যাপারগুলো সত্যিই মিস করি।

এবারের পূজা নিয়ে এখনো কোনো পরিকল্পনা করিনি। তবে আমি দুইদিন আমার পরিবারের সঙ্গে আর কিছুদিন বন্ধুদের সঙ্গে কাটাবো কলকাতাতে। আমি আসলে শৈশব থেকে গ্রামের পরিবেশে বড় হয়েছি। গ্রামের সবাই এখনও একসঙ্গে মিলেমিশে বাস করে। বাড়িতে নানা রকম রান্নাবান্না হয়। কিন্তু কলকাতায় সেই ব্যাপারটা হয় না। বন্ধুরা মিলে ঘুরি আর কোনো রেস্টুরেন্টে বসে খাই। আড্ডা দেই। এই শেষ।

কিন্তু পূজা তো পূজাই। সেই পাঁচদিন সব কাজ বাদ। পাঁচটা দিন কেমন যেন দেখতে দেখতেই কেটে যায়। এবারও দশমীতে ঠাকুর চলে যাওয়ার পর থেকেই মনটা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু সব ঠিক থাকবে। ‘আসছে বছর আবার হবে’। সবাইকে আমার তরফ থেকে অগ্রীম শারদীয়া প্রীতি ও শুভেচ্ছা।