লক্ষ্মীকুঞ্জে রাজ্জাকের স্বজনদের সান্ত্বনায় তারকারা

নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুর খবরে তার গুলশানের বাসায় ছুটে গেছেন চলচ্চিত্রাঙ্গণে তার সহ-অভিনেত্রী, প্রযোজক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও অনুজ নায়ক-নায়িকারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 August 2017, 06:53 PM
Updated : 22 August 2017, 09:17 AM

সোমবার বিকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজ্জাককে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা তার মৃত্যুর কথা জানান।

মরদেহ হাসপাতালে রাখা হলেও সন্ধ্যার পর নায়কের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে গুলশানে তার বাসা ‘লক্ষ্মীকুঞ্জে’ ছুটে আসেন নায়ক আলমগীর, জাহিদ খান, উজ্জল, রিয়াজ ও ফেরদৌস। এসেছিলেন নায়িকা ববিতা, অঞ্জনা, অরুণা বিশ্বাস ও কেয়াসহ আরও অনেকে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রযোজক মুজিবুর রহমান চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু এবং শিমুল ইউসুফও যান লক্ষ্মীকুঞ্জে। অসংখ্য ভক্তও ভিড় করেন বাসার প্রবেশমুখে।

সেখানে অরুণা বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, “উনি আমার ওস্তাদ ছিলেন। চাপাডাঙার বউ সিনেমায় তিনি আমাকে নিয়ে এসেছিলেন। উনার মতো একজন বড় মাপের মানুষ চলে গেছেন মানে আমাদের সত্যিকার অর্থেই বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। এটা যে বলার জন্য বলা, তা কিন্তু না।”

ব্যক্তি হিসেবে রাজ্জাককে একজন ‘অসাধারণ মানুষ’ বলে অখ্যায়িত করেন অরুণা।

“একজন অভিনেতা হিসাবে তো উনার মাপকাঠি বলার মতো মানুষ আমি নই। আমি তো অতবড় শিল্পীই হতে পারিনি। উনি ব্যক্তিগত জীবনে আমার বাবা ছিলেন। ক্যামেরার সামনে ছিলেন আমার গুরু।”

বাংলা চলচ্চিত্রে রাজ্জাকের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আজ আমাদের চলচ্চিত্রের যে অবস্থা, তাতে উনি খুব দুঃখ নিয়ে চলে গেছেন। আমরা সারাক্ষণই ঝগড়া করছি, আমাদের শিল্পীদের কেউ ভালোবাসছি না। এটা উনি কখনই চাইতেন না।

“আমার দেখা মতে আমি দেখেছি- কখনও কোন জুনিয়র শিল্পী যদি উনার বাড়িতে আসতেন, তাহলে উনি গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন। উনি এতো বড় শিল্পী ছিলেন, তেমনি বড় মনের মানুষও ছিলেন।”

রাজ্জাকের একসময়ের নায়িকা অঞ্জনা বলেন, “উনার কারণেই আমি অঞ্জনা। উনার সঙ্গে আমার বহু স্মৃতি। ৩৫টি সিনেমা উনার সঙ্গে আমার।”

একপর্যায়ে আবেগের বাঁধ ভেঙে যায় অঞ্জনার। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “মহানায়ক চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে, মহানায়ককে দেশ-জাতি কোনদিন ভুলবে না। তিনি চলে গেলেন, চলচ্চিত্রের একজন মহানায়ক চলে গেলেন। তার শূণ্যতা কখনো পূরণ হবে না।”

পরে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ষাটের দশকে যখন দেশে পাকিস্তানিদের ব্যাপক প্রভাব, তখন রাজ্জাককে কেন্দ্র করেই বাংলা চলচ্চিত্রের উত্থান হয়।

“তার মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতিসত্ত্বার বিকাশ ঘটেছিল। এভাবে বাঙালি জাতির আত্ম-অনুসন্ধানের যে প্রক্রিয়া, সেখানে আমাদের চলচ্চিত্র একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল।

“চলচ্চিত্রকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা রেখে গেছেন তিনি। আগামী দিনের তরুণ প্রজন্ম সিনেমায় তার অবদান নিয়ে গবেষণা করবে, সেই মোতাবেক এগিয়ে নিয়ে যাবে বাংলা চলচ্চিত্রকে।”