পেশাগত জীবনে তামিল সিনেমার মহাতারকা হলেও তার জন্ম এক মারাঠি পরিবারে। বাবা রামোজি রাও গায়কোয়াড় ছিলেন পুলিশ কন্সটেবল আর মা জীজাবাঈ ছিলেন গৃহিনী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রজনীকান্ত ছিলেন সবার ছোট। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে কুলি, দিনমজুর ও বাস কন্ডাক্টরের মতো কাজও করতে হয়েছে তাকে। পাশাপাশি পাড়ার নাটকেও চালিয়ে যেতেন শখের অভিনয়। পরবর্তীতে এক বন্ধুর সহায়তায় মাদ্রাজ ফিল্ম স্কুলে অভিনয়ের উপর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। সেখান থেকেই নজরে পড়েন সে সময়ের খ্যাতিমান পরিচালক কে. বালাচরণের।
বড়পর্দায় অভিষেক ও উত্থান:
১৯৭৫ সালের আজকের দিনে(১৮ অগাস্ট) কে. বালাচরণের ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’ সিনেমার মাধ্যমে তামিল সিনেমায় অভিষেক ঘটে ‘থালাইভা’র। প্রথম ছবিতেই বাজিমাৎ করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তরুণ রজনীকান্ত। এরপরও দক্ষিণী সিনেমায় নিজের শক্ত অবস্থান গড়তে তাকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। প্রখম দিকে খ্যাতিমান অভিনেতা কমল হাসানের সঙ্গী হিসেবেই সিনেমাতে দেখা গেছে তাকে। পরবর্তীতে বেশ কিছু সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নেন এ মহানায়ক।
রজনীকান্ত অভিনীত চরিত্র ও তার অভিনয় জাদু:
অনেকেই বলেন রজনীকান্তের অভিনয়ে রয়েছে জাদু। ক্যারিয়ারের প্রথম দিন থেকেই তার অভিনয় জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন সবাইকে! তার প্রথম জীবনের মতোই ছিলো তার প্রথম দিকের সিনেমাগুলোর চরিত্র। অত্যাচারিত কৃষক, দিনমজুর ও কুলি’র চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন দর্শকের মনে। ৪২ বছরে ১৬৪টি সিনেমার করার রেকর্ড খুব কম অভিনেতারই রয়েছে।
নিম্নবিত্ত ও শোষিত শ্রেণির প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হিসেবে জনপ্রিয়তা পেলেও সব ধরণের চরিত্রেই মানিয়ে যান এ অভিনেতা। সর্বশেষ ‘কাবিল’ সিনেমাতে তার প্রমাণ পেয়েছেন দর্শক। তার প্রথম দিকের সিনেমা ‘ভুবন ওরু কেলভিকুরি’, ‘নেত্রীকান’,‘মুল্লুম মালারুম’য়ের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক সিনেমা ‘এন্থিরান’, ‘কাবিল’ কিংবা মুক্তি প্রতিক্ষীত ‘টু পয়েন্ট জিরো’ ও ‘কালা’র তুলনা করলে দেখা যাবে একজন কৃষক, মুটে কিংবা দিনমজুর চরিত্রের পাশাপাশি প্রেমিক রোবট, কিংবা মারকুটে গ্যাংস্টার সব চরিত্রে সমান পারদর্শী তিনি।
রজনীকান্ত মানেই সিনেমা সুপারহিট। তাই নির্ভয়ে তার পেছনে কোটি কোটি টাকা লগ্নি করতে রাজী যে কোনো প্রযোজক। কিন্তু তা সত্ত্বেও তরুণ ও নবাগত নির্মাতাদের সঙ্গে অভিনয়ের জন্য নিজের পারিশ্রমিক কমিয়ে নেন তিনি। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ নামী দামী পুরস্কারের পাশাপাশি ভূষিত হয়েছেন সম্মানজনক ‘পদ্মভূষণ’ (২০০০)ও ‘পদ্মবিভূষণ’ (২০১৬) পুরস্কারে। অর্থ ও খ্যাতির পাশাপাশি পেয়েছেন দর্শকের অকুন্ঠ ভালোবাসা। তাইতো প্রিয় এ তারকাকে ‘থালাইভার’ বলেই ডাকতে বেশি পছন্দ করেন ভক্তরা। তামিল এ শব্দটির অর্থ ‘স্যার’ ও ‘গুরু’।