দুই সারথীর ‘আজব সুন্দর’ যাত্রা

টানা সতেরো বছর প্রামান্যচিত্র নির্মাণের পর এবার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র নির্মাণ করতে যাচ্ছেন নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী। ২০১৬-’১৭ অর্থবছরের অনুদানপ্রাপ্তির সাফল্য ইতিমধ্যেই জুটেছে তার এ নতুন যাত্রায়। ‘আজব সুন্দর’ নামের এ নির্মাণে তার সঙ্গী হয়েছেন নির্মাতা, চলচ্চিত্র সংগঠক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সামিয়া জামান। নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটিতে প্রযোজক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন তিনি। সে সূত্রেই এক বিকেলে গ্লিটজ আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন তারা...

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2017, 02:54 PM
Updated : 16 August 2017, 06:05 PM

চলচ্চিত্র ‘আজব সুন্দর’ নির্মাণে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সরকারি অনুদান প্রাপ্তিতে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন আপনাদের। সেই সঙ্গে গ্লিটজ আড্ডায় স্বাগত জানাচ্ছি...

সামিয়া জামান:  আপনাকে ও বিডিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকেও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরাও আগ্রহ, উত্তেজনায় এবং সেই সঙ্গে কিছুটা ভয়ও পাচ্ছি এত বড় চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ, কারণ এটা শবনম ফেরদৌসীর প্রথম ফিকশন ছবি হতে যাচ্ছে। আমি যদিও ছবি করেছি আগে, অন্য একজন ডিরেক্টরের সঙ্গে প্রযোজক হিসেবে কাজ করা আমার জন্য প্রথম। 

আমরা জানি গানের ক্ষেত্রে বাদ্যের সঙ্গে, যন্ত্রীর সঙ্গে একটা সঙ্গত প্রয়োজনহয়। তেমনি মানুষেরও একসাথে চলতে গেলে সেই পারস্পরিক সেই সঙ্গতটা লাগে। প্র্থমেই জানতে চাইবো আপনাদের দু’জনের মধ্যে সেই সঙ্গতটা কবে, কীভাবে হলো-যা আপনাদের একসঙ্গে নির্মাণে প্ররোচিত করেছে..

সামিয়া জামান: সিনেমাও কিন্তু একটা দলগত কাজ। একাও করা যায়, যদি আপনার হাতে একটা ফোন থাকে, এডিট করে করলেন, কিন্তু সিনেমার যে ইতিহাস সেটা আসলে একসঙ্গেই করতে হয়। সেদিক থেকে আমরা দুজনে করছি তার একটা ক্ষুদ্র ইতিহাস আছে। ইতিহাসটা হলো, আমরা একাত্তর টেলিভিশনে প্রায় ছ’বছরএকসঙ্গে কাজ করেছি। আর বৃহত্তরভাবে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট যে ফিল্ম মুভমেন্টটা আছে, আমরা দু’জনেই সেটার অংশ। একেবারে একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকলেও বাংলাদেশে ভালো ছবি নির্মাণে একটা যে প্রচেষ্টা চলে আসছে, বিশেষ করে আশির দশক থেকে, যাকে একেবারে বলা যায় ফসল, সেখানে আমরা দু’জন ছিলাম। তারই একটা ‘পরিণতি’ বলবো না, স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই প্রজেক্টটাতে এসে এক হয়েছি।

সামিয়া জামান, ছবি: সৈকত ভদ্র

অথবা যদি বলি, এক বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছেন। শবনম ফেরদৌসী, এ প্রসঙ্গে আপনার কাছ থেকে জানতে চাইবো..

শবনম ফেরদৌসী: আপা যা বললেন তাই, ব্যাকগ্রাউন্ড তো একই। সেই শর্টফিল্ম ফোরাম মুভমেন্ট থেকে আমি কিন্তু তারই সহযাত্রী। হয়তো কয়েক বছর পর। কিন্তু টেক্সট কিংবা বেড়ে ওঠার জায়গাটা কিন্তু একইরকম। আমার জায়গা থেকে যদি বলেন, এই ছবিটার স্ক্রিপ্টটা আমার তৈরি করা ছিলো কোনোমতে, গতবছর যখন পুরোপুরি তৈরি হলো তখন আপাকে গিয়ে বললাম, আমারতো কোনো প্রোডাকশান হাউজ নেই, আপনি প্রডিউসার হবেন কিনা? আমরা একটা স্ক্রিপ্ট জমা দিতে যাচ্ছি। আপা বললেন, ‘দিবে দাও, ফিকশন নির্মাণ করতে যাচ্ছো?’ একদম এইভাবে। এভাবেই ব্যাপারটা হয়ে গেলো। মজার ব্যাপার হলো, সবাই বলবে দু’জন নারী নির্মাতা একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছে। সেটা হয়তো একটা জায়গা। আসলে আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জায়গাটা হলো- আমার যে কোনো ভাবনার জায়গা আপার সঙ্গে শেয়ার করতে পারি। আর প্রথম ফিকশন হিসেবে আমারও মনে হচ্ছিলো মাথার ওপর এমন একজন দরকার প্রডিউসার হিসেবে যার ছবি নির্মাণের অভিজ্ঞতা আছে। প্রডিউসার তো অনেকেই আছে। শুধু টাকা না, ফিল্মটা বোঝে, আমাকে বোঝে।

সামিয়া জামান: শবনম একটা খুব ভালো কথা বললো যে, প্রডিউসার বা প্রযোজকের ভূমিকাটা কী? এটা নিয়ে আমার মনে হয় আমাদের সিনেমা জগতে একটু ভাবা বা কাজ করা উচিত। এটা কিন্তু, আমাদের বিটিভির যুগ থেকে যদি শুরু করেন, তাহলে বলতে হয়, এটা খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আমরা সিনেমায় এসে দেখছি, একটা হলো ছবির ফাইন্যান্স, মানে ছবির টাকাটা কোথা থেকে আসবে..

প্রযোজকের মানে হয়ে গেছে শুধুই অর্থলগ্নিকারী..

সামিয়া জামান: হ্যাঁ, যেমন এই ছবিতে তো আমরা সরকারের একটা সহযোগিতা পেয়েছি। আমাদের হয়তো আরও কিছু অর্থ লগ্নী করতে হবে ছবিটাতে। কিন্তু আরেকটা রোল থাকে, যেটা সারা পৃথিবীতে করে, পুরো ছবিটা যে ঘটবে সেটার দায়িত্ব নেয়া। অর্থের যে প্যাকেজটা, সেটার মধ্যে আমার নিজস্ব কিছু অর্থলগ্নী থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।কিন্তু একজন প্রযোজকের কাজ হলো ছবিটার জন্য প্রয়োজনীয় যে অর্থ সেটা নিশ্চিত করে তারপর ছবিটার কাহিনি অনুসারে ছবিটা এগুচ্ছে কিনা, ডিরেক্টরকে লাইনে রাখা। প্রযোজক-ডিরেক্টর কিন্তু এক লোক হতে পারে যেটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট সেক্টরে হয়, আবার সেটাও কিন্তু খুব কম। আমি নিজেও যেহেতু ছবি করেছি, আমার সিনিয়র-জুনিয়র বিভিন্ন লোকের প্রজেক্টে আমি ছিলাম, আমাদের যেটা হয়েছে, বিশেষ করে আমাদের ইন্ডিপেন্ডেন্ট সেক্টরে, প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমরা এত ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছি, পরিচালক হিসেবে আমার যে দায়িত্বটা সেইখানে আমার সময়টা আমি দিতে পারছি না। প্রডিউসার, এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার এই রোলগুলা কিন্তু খুব ডিফাইন্ড পৃথিবীতে। তো, এইচর্চাগুলো আমাদের করার একটা সময় এসেছে।

শবনম ফেরদৌসী: আমি একটা উদাহরণ দিতে চাই, ঋত্বিক ঘটক ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বানাতে পেরেছিলেন কেননা তার সঙ্গে হাবিবুর রহমানের মতো একজন প্রডিউসার ছিলেন। সাপোর্ট, তুমি ছবিটা বানাও আমি বাকিটা দেখছি। আপা যে শুধু এগুলোই দেখবেন তাই না, এই জায়গাটা এরকম করা যায় কিনা? কন্টেন্টের দিক থেকেও বলছেন,ভাবো..

শবনম ফেরদৌসী, ছবি: সৈকত ভদ্র

সামিয়া জামান:
হ্যাঁ, কিন্তু আলটিমেটলি এটা শবনম ফেরদৌসীর ছবি। সব ছবির ক্ষেত্রেই তাই, সব ছবির ক্ষেত্রেই একটা যৌথ ব্যাপার আছে সিনেমাতে। যিনি ক্যামেরা চালান ডিওপি, তারও একটা মন্তব্য থাকতে হবে। যদি না থাকে তাহলে আমার মনে হয়, কিছু একটা হারায়ে যায়। যিনি সম্পাদনা করছেন তারও একটা মন্তব্য থাকতে পারে।

আপাতত এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছানো যাচ্ছে প্রযোজক হিসেবে ‘আজব সুন্দর’ এর নির্মাণভার অর্ধেক আপনার কাঁধে..

সামিয়া জামান: আমি মনে করি, প্রযোজক হিসেবে আমার যতটুকু দায়িত্ব আমি সেটা পালনে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাবো। আমার আগের ছবিতেও তো আমি প্রডিউসার রোলটাই প্লে করেছি। ওরও এটা প্রথম ফিকশন, আমিও যে খুব একটা ছবি করেছি তাও নয়। দেখা যাক, এটা আসলে রাস্তা করতে করতে যাওয়া।

‘আজব সুন্দর’ আপনাদের চলচ্চিত্রের নাম।যদি জানতে চাই ‘আজব সুন্দর’ আসলে কী?  কীভাবে দেখা পেলেন ‘আজব সুন্দর’-এর?

শবনম ফেরদৌসী: ‘আজব সুন্দর’ হচ্ছে একটা অনুভূতি, একটা জগত। আজব হচ্ছে একটা রহস্য আমাদের জীবনকে ঘিরে থাকে, আমাদের মুহূর্তগুলো, আমাদের পাল্টে যাবার, বেড়ে ওঠার, বোধের। যেটা আসলে একজন শিল্পী ধরতে চায়, সোজা বাংলায় শিল্পীর অন্বেষণ, যেটা ঘটে যায়, অদ্ভুতভাবে মিস্ট্রিয়াসলি সেটা ঘটে। ‘আজব সুন্দর’ নামটা আসলে আমি নিয়েছি হাছন রাজার একটা গান থেকে। ‘এ এক আজব সুন্দর’ এরকম করে তিনি বর্ণনা করছিলেন। তো, সেই সৌন্দর্যের কথাই বলবার চেষ্টা, সেই বোধের কথাই বলবার চেষ্টা।

সামিয়া জামান: এই ছবিটার স্ক্রিপ্টটা যখন আমি হাতে পাই, শবনম যেটা বললো যখন আমরা সহকর্মী হিসেবে কাজ করি, নানারকম প্রজেক্ট একসাথে করতে হয়েছে, কিন্তু যে যাত্রাটা এই ছবির মধ্যে আছে সেটা হলো, আমাদের খুব গভীরে, খুব শেকড়ে বা জীবনানন্দ দাশ একসময় বলে গেছেন, রক্তের মধ্যে কী এক বোধ কাজ করে, সেটা আমার মনে হয় একটা আবহমান কাল ধরেই মানুষের কাছে একটা প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা আছে।

আমি এখন হয়তো এটা আরও অনেক বেশি অনুভব করতে শুরু করেছি, যেটা খানিকটা বয়সের ব্যাপার, খানিকটা অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকার, কা্জ করার, বসবাস করার অভিজ্ঞতা হয়েছে যা খানিকটা আজব একটা জীবন বলা চলে। কিন্তু আমাদের এই অঞ্চলটা, আমাদের কিন্তু হাজার বছরের একটা জীবনাচরণ আছে। আমাদের এই যে নদী, এই যে ধানক্ষেত, এই যে কৃষিভিত্তিক জীবন, এখানে নারী পুরুষের দিনটা যেভাবে চলে,  তার সাথে আমাদের কৃষিভিত্তিক জীবনের যে ব্যাপারটা।

দেখুন, আমরাতো একশ দুশো বছর হবে শহরের কাছাকাছি এসেছি, এগুলোতো খুবই অল্প দিনের ব্যাপার। আমাদের রক্তের মধ্যে, বোধের মধ্যে যে হাজার বছরের জেনেটিক ছাপ, এই ছবিটার মধ্যে এমন কিছু আছে যা আপনাকে সেই শেকড়ের দিকে টেনে নিয়ে যাবে যেটা আমাদের হাজার বছরের পরিচয়। যেভাবে চারপাশে ধর্মীয় সামাজিক একটা কট্টর অবস্থান আমরা দেখছি সেখানে গানটা আমাদের একটা মুক্তি। আপনি যে কবিতা লেখেন, আপনি দেখবেন, আপনার যে কাব্য এবং দার্শনিকতা সেটা একজন সাধারণ নারী এবং পুরুষ তাদের জীবনে চর্চা করে। অনেক ধরণের বচন জানে, কাব্য জানে। আমাদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভেতর দিয়ে গিয়ে আমরা সেগুলো অনেকটা মিসও করি। কিন্তু ওই জিনিসগুলো আমরা শিখি না। ওই কথাগুলোর সাথে একটা বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে। এখানেই আমি ওই ‘আজব সুন্দর’কে পাই, যেটা আমাদের মধ্যেই আছে, কিন্তু ‘আজব সুন্দর’ আমাদের মধ্যেই আছে, আমরা ওটাকে হারিয়ে ফেলছি। এই ছবিটার মধ্যে আমি একটা অন্বেষণ পাই, যেখানে হাজার হাজার বছর ধরে চর্চিত হয়েছে, সেটার একটা নির্যাস।

শবনম ফেরদৌসীর কাছে জানতে চাইবো, চলচ্চিত্রটির কাহিনি, চিত্রনাট্য সংলাপ সবই  আপনি লিখেছেন। নির্মাণও আপনি করছেন। আমাদের বলবেন, ‘আজব সুন্দর’-কেমন গল্পের ছবি?

শবনম ফেরদৌসী: বলবো? (প্রডিউসারের দিকে তাকিয়ে)

সামিয়া জামান: একটু তো বলাই যায়। খুব বেশি না বলে বলো..(হাসি)

শবনম ফেরদৌসী: এটা একদম এই সময়ের গল্প। আমাদের দেখা চারপাশের বাংলাদেশের গল্প। এটা একজন রকস্টারের কাহিনি। একজন শিল্পী, ডায়নামিক চরিত্রের একজন। জনপ্রিয়তা যার একদম তুঙ্গে। তাকে ঘিরেই গল্পটা। সে নানা জায়গায় শো করতে যাওয়ার সুবাদে তার মধ্যে যে পরিবর্তনগুলো হতে থাকে, এবং সে যে আজব সুন্দরের দেখা পায়, সেটাই জানাবার চেষ্টা।

এ পর্যন্ত ননফিকশনই নির্মাণ করেছেন আপনি। বেশকিছু প্রামান্যচিত্র আলোচিতও হয়েছে। চলচ্চিত্রে ফিকশন-ননফিকশন বিভাজন না করেই জানতে চাইছি, ননফিকশনে এই যে আপনার দীর্ঘ জার্নি, এটি ফিকশন নির্মাণে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?

শবনম ফেরদৌসী: অবশ্যই ফেলবে। আমি চাই একটা প্রভাব ফেলুক।  আপা আমাকে সবসময় বলেন, শবনম ছবি কিন্তু ফিকশন হবে, তুমি কিন্তু ডকুমেন্টরি ফিল্ম মেকার হিসেবে যে এসেন্সগুলো থেকে ছবিটা এসেছে-ওই এসেন্সটা একটু থাকা চাই। তো এটা অটোমেটিক্যালি কিন্তু থাকবে এ ছবিতে। ট্রিটমেন্ট হিসেবে সেটা রাখা হবে। আবার ওই যে বিভাজনের বিষয়টি উল্লেখ করলেন, সতেরো বছর আগে একটা ফিল্ম দেখেছিলাম ওটার নাম ছিলো ‘থিন ব্লু লাইন’। সতেরো বছর ধরে আমি ডকুমেন্টরি বানাই। তো, সেখান থেকেই বলি, ফিকশন-ননফিকশনের মধ্যে পার্থক্যটা হলো ‘থিন ব্লু লাইন’।

সামিয়া জামান: এখানে আমি একটু যোগ করতে চাই, আমাদের এখানে প্রামান্যচিত্র বলতে একটা ন্যারো ধারণা চালু আছে। যেমন এই যে দ্রুম রেস্টুরেন্ট নিয়ে(যে রেঁস্তোরায় বসে আলাপ হচ্ছিলো) যদি একটা তথ্যচিত্র হয় সেটা শুধু ধারাবর্ণনা হবে। কিন্তু ডকুমেন্টরি যে কোনো জায়গায় চলে গেছে, এবং এরা, মানে শবনম ফেরদৌসীসহ বাংলাদেশেই যে ধরনের ডকুমেন্টরিগুলো হচ্ছে, সেটা আসলে কাহিনিই কিন্তু বলছে তারা।

‘জন্মসাথী’ দেখে মনেই হচ্ছিলো আসলে একটা গল্প দেখছি...

সামিয়া জামান: হ্যাঁ তাই বলছি, শুধু ‘জন্মসাথী’ই নয়, আমাদের একাত্তর টেলিভিশনেই যে ডকুমেন্টরিগুলো দেখানো হলো-শবনম সেটার দায়িত্বেই আছে। শুধু ও না, অন্যরাও যেগুলো বানিয়েছে, ছোটবেলা থেকে ডকুমেন্টরি এগুলো তার মধ্যেই পড়ে না।

শবনম ফেরদৌসী: ফিল্মমেকার হচ্ছেন একজন স্টোরি টেলার, প্রতিটা ফিল্মমেকারের চেষ্টা থাকে আসলে পোয়েটিক স্টোরি টেলার হওয়া যায় কিনা। কতোটা কাব্যিক করা যায়। ব্যাসিকেলিতো স্টোরি টেলার। সিনেমা নির্মাতাতো স্টোরি টেলার। ডকুমেন্টরিও তাই। আমি যে জীবনটা তুলে আনলাম তাতে কি একটা গল্প দেখাচ্ছি না? আমি কি পুরো চল্লিশঘন্টাই দেখাচ্ছি? না, চল্লিশ ঘন্টাকে চল্লিশ মিনিটে আমি আমার মতো করে বয়ানটা দিচ্ছি। ওটার সাতে কাহিনিচিত্রের তফাৎটা আপনি কি করবেন? আমি যখন শুটিংয়ে যাই তখন কিন্তু একটা গল্প মাথায় নিয়েই যাই। তাহলে কি? আমি কিন্তু গল্পের ছাঁচেই বাস্তবকে উপস্থাপন করছি। এখানে তফাৎ শুধু এই, একটা বাস্তবের চরিত্র একটা কল্পনার চরিত্র।

ছবি: সৈকত ভদ্র

যদি বলি নির্মাতা হিসেবে ছবিটা আমাদের আগেই আপনার দেখা হয়ে গেছে। সেই অর্থে ‘আজব সুন্দর’ কেমন ছবি হতে যাচ্ছে? কোন শ্রেণির দর্শক আসলে ছবিটা দেখতে আগ্রহী হবে?

শবনম ফেরদৌসী: আপার সাথে আমার খুব একটা মিল হলো আপারও সবকিছুতে একটা পরিমিত বোধ আছে, আমারও আছে। দুটো মিলে আসলে আমাদের জার্নিটা এখনও চলছে। আপাও খুব পরিষ্কার দেখতে পায় একটা জিনিস, আমিও না দেখে হাঁটি না। আমি খুব পরিষ্কার জানি যে এই ছবিটা কি ছবি হতে যাচ্ছে। এটা একটা মিডল সিনেমা। যেখানে সব মানুষই কমুনিকেট করতে পারবে।  যে গল্পটা বলা হচ্ছে তাতে দর্শক এন্টারটেইনডও হতে পারে, একটা বোধও নিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ যার যেটা বুঝবার, যার আনন্দ নেবার সে আনন্দ নেবে, যার মেসেজ নেয়া দরকার সে মেসেজটা নেবে। মিডল সিনেমায় যা হয়, আমার প্রথম ছবিটা আমি এভাবেই বানাতে যাচ্ছি। দর্শকতো খুব আনপ্রেডিক্টেবল একটা জায়গা তারা দেখবে কিনা তা আগে থেকে বলা যায় না।

ছবির শুটিংয়ের কাজ কবে শুরু হচ্ছে?

শবনম ফেরদৌসী: এই বছরেই আমাদের শুটিংয়ের কাজ শুরু করতে হবে। অক্টোবর নাগাদ একটা লটের শুটিং হবে। তারপরের অংশটা পরবর্তী বছরে চলে যাবে।

আর লোকেশন?

শবনম ফেরদৌসী: আসলে আমার ছবিটাতো রিসার্চ করার মধ্য দিয়েই আসা। ফলে লোকেশন তো মাথায়ই আছে। আমি আবার লোকেশনটা রিভিজিট করবো। ঈদের পরপরই সেটা শুরু করবো আমরা।

এবার চরিত্র প্রসঙ্গে, রকস্টার চরিত্রে কাকে দেখতে পাচ্ছি? কিংবা অন্যান্য চরিত্রগুলোতে..

শবনম ফেরদৌসী: রকস্টার চরিত্রটিতে আমরা আসলে দু’একজনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছি, এখনও ফাইনাল হয়নি..

সামিয়া জামান: আসলে সবগুলো চরিত্রে কাস্টিং শেষেই আমরা জানাতে চাইছি। একটু আনুষ্ঠানিকভাবে এটা সবাইকে জানাবো আমরা..