সিটি ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক-এর ছাত্র সৌদ জুবায়ের-এর সিনেমাটির গল্প একটি গরুকে ঘিরে। একটি হিন্দু পরিবারে দেবীর পূজা পাওয়া গরুটি যখন হাত বদল হয়ে এক মুসলমান মালিকের ঘরে আসে, তখনই সে দেখতে পায় মুদ্রার উল্টো পিঠ। এখানে দেবী নয়, মানুষেরই খাদ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে সে!
এমন এক ব্যতিক্রমধর্মী গল্পই কেন বেছে নিলেন সৌদ তার পরিচালিত সিনেমাটির জন্য?
উত্তরে তিনি বলেন, “যখন ছোট ছিলাম, তখন দেখতাম, বাবা কুরবানির ঈদের বেশ কিছুদিন আগেই গরু কিনে নিয়ে আসতেন। আমাকে বলতেন গরুটিকে খাওয়াতে, যত্ন করতে। অথচ ঈদের দিন মসজিদের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে সেই তিনিই এই ক’দিনের আদরের গরুটিকে জবাই করতেন! ছয়-সাত বছরের একটি ছোট্ট শিশু ছিলাম আমি তখন, আমার চোখের সামনেই ঘটতো এই ঘটনা।”
“কিন্তু শিউরে ওঠার মতো এই ঘটনা দেখে আমি কার কাছে মুখ লুকাতে যাবো? মায়ের কাছে গিয়ে কোনো লাভ নেই, কারণ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মা নয়, বাবাই ছিলেন পরিবারের প্রধান। বাবার কাছে যাব? কিন্তু তিনিই তো ছিলেন এই গরু হত্যাচক্রের হোতা,” ছোটবেলার কথা মনে করতে করতে বলে যেতে থাকেন সৌদ।
“আমি বড় হয়েছি শীর্ষেন্দু, সমরেশের উপন্যাস পড়ে পড়ে। সেখানেও বার বার বলা হতো, কালী মন্দিরের সামনে পাঁঠা বলির মতো বর্বরতা বন্ধ করার কথা। কিন্তু আমাদের এখানে কুরবানির নামে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার কথা কে বলবে? আর কিছু বলতে গেলে তো ধর্মব্যবসায়ীরা খোঁচা দিয়ে এটাকে আরও বড় করে তুলবে। অন্তত ছোট শিশু কিংবা বৃদ্ধ মানুষদের সামনে তো এরকম নির্মমভাবে গরু জবাই বন্ধ হোক- এই চিন্তা থেকেই এই সিনেমাটি তৈরি করা,” বললেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের রিল সিটি ফিল্ম ফেস্টিভাল এবং সিইউএনওয়াই ফিল্ম ফেস্টিভালে পুরস্কার জেতা ‘জড়েশ্বর’ ১৯ থেকে ২৬ মে ফ্রান্সের কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম বিভাগে দেখানো হয়। মূল প্রতিযোগিতার বাইরের এই বিভাগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রযোজনা সংস্থা থেকে বিচারকেরা আসেন সম্ভাবনাময় নতুন নির্মাতা খুঁজতে। গতবছর এই বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছিল অমিতাভ রেজা চৌধুরীর সাড়াজাগানো সিনেমা ‘আয়নাবাজী’।
এরকম একটি আসরে নিজের ছবি প্রদর্শনের অভিজ্ঞতা কেমন?
সৌদ বলেন, “আমার ছবিটি যে থিয়েটারে দেখানো হয়েছিল, তার আসন ছিল ৭৯টি, যার মধ্যে ৭৪ টি আসনই পূর্ণ ছিল। সিনেমার শেষে যখন ক্যামেরা কুরবানি দেওয়ার আগে গরুটির চোখের দিকে ফেরানো হয়, সেই দৃশ্যটি দেখে আবেগ সামলাতে না পেরে চারজন দর্শক হল থেকে বের হয়ে যান। তারা তখন কাঁদছিলেন। আরও অনেকের চোখে সেদিন আমি অশ্রু দেখেছি। এটাই আমার বিরাট পাওয়া।”
কানের প্রদর্শনীর পর এরমধ্যে টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভাল থেকে ডাক পেয়েছেন সৌদ। এছাড়াও ভারতীয় একটি প্রযোজনা সংস্থাও তার সিনেমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান তিনি।
৪৭ মিনিটের চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন সামিন সাবাবা এবং মাহমুদ আলম। বাংলাদেশ ও পোল্যান্ডের যৌথ প্রযোজনার এই সিনেমাটির চিত্রগ্রাহক ছিলেন ইয়ান সিওয়ার্ন।