বাংলাসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব নিয়ে কারো মনে সংশয় থাকার কথা নয়। উপমহাদেশের সাহিত্যজগতে প্রথম নোবেলপ্রাপ্তি ঘটে তারই হাত ধরে। তবে বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্বকে কেবল পুরস্কার প্রাপ্তির নিরিখে মাপা হলে তার প্রতি সুবিচার করা হয় না। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন প্রায় অনুপস্থিত। পশ্চিমবঙ্গে কিংবা বলিউডে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যতটুকু কাজ হয়েছে সে অনুপাতে বাংলাদেশে তিনি রয়ে গেছেন অনেকটাই উপেক্ষিত।
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে হাতে গোনা যে ক’টি ছবি বানানো হয়েছে তার প্রায় সবগুলোই নির্মিত হয়েছে ইমপ্রেস টেলিফিল্মস এর ব্যানারে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘শাস্তি’ (২০০৪), ‘সুভা’ (২০০৬), ‘কাবুলীওয়ালা’ (২০০৬) এবং ‘অবুঝ বউ’ (২০১০)। সরকারী উদ্যোগ কিংবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসায়িকভাবে খুব কমই কাজ হয়েছে রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রবীন্দ্রসাহিত্য নিয়ে কাজ করতে এগিয়ে আসেন চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথের ‘শাস্তি’ গল্প অবলম্বনে ‘কাঠগড়া’ নামের একটি ছবির কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। তবে নানা জটিলতায় কাজটি শেষ করতে পারেননি তিনি। পরে সেই একই গল্প ২০০৪ সালে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের হাত ধরে উঠে আসে ‘শাস্তি’ ছবির মাধ্যমে। এভাবেই নির্মিত হয় বাংলাদেশের প্রথম রবীন্দ্রসাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র। এ ছবির গুরুত্বপূর্ণ চার চরিত্রে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, চম্পা, রিয়াজ ও পূর্ণিমা। । এ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারও জিতে নেন চম্পা ও ইলিয়াস কাঞ্চন।
রবীন্দ্রসাহিত্যের আরেক জনপ্রিয় ছবি হলো কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘কাবুলিওয়ালা’। এতে কাবুলিওয়ালা চরিত্রে ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়ক মান্নার অভিনয় নজর কেড়েছিলো সবার। মিনি চরিত্রে শিশুশিল্পী দীঘির অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছিলো সর্বমহলে। এ ছবির জন্য সেরা শিশুশিল্পী চরিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পায় দীঘি। পরবর্তীতে সাইফুল ইসলাম মান্নু পরিচালিত ‘চারুলতা’ ছবিতে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, কুমকুম হাসান, সজল নূর প্রমুখ। তবে খুব একটা সাড়া ফেলতে পারেনি ছবিটি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্রসাহিত্য নির্ভর এখনও পর্যন্ত সর্বশেষ ছবি নারগিস আখতার পরিচালিত ‘অবুঝ বউ’। রবীন্দ্রনাথের ‘সমাপ্তি’ ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিতে ছবিতে অভিনয় করেন ববিতা, ফেরদৌস, শাকিল খান ও নিপুণ। এ ছবির জন্য সেরা পচিালক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার জেতেন নারগিস আখতার। এ ছাড়া সংগীতায়োজক হিসেবে পুরস্কৃত হন সুজেয় শ্যাম। সেরা সম্পাদনা বিভাগেও পুরস্কৃত হয় ছবিটি।
স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বাংলাদেশে রবীন্দ্রসাহিত্য নির্ভর ছবির দীনতা চলচ্চিত্র নির্মাণে আমাদের অপরিপক্কতারই পরিচয় বহন করে। কাব্য কিংবা কথাসাহিত্যে যতটা প্রাধান্য পেয়ে থাকেন রবীন্দ্রনাথ চলচ্চিত্রে ঠিক সেভাবে উপস্থাপিত হননি তিনি। ওপার বাংলার ‘চোখের বালি’, ‘নৌকাডুবি’, কিংবা ‘চার অধ্যায়’য়ের বিপরীতে বাংলাদেশের ছবিগুলোকে বিচার করা হলো এ দীনতার জায়গাটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রসাহত্যের উপস্থাপনায় নির্মাণ কৌশল ও সৃজনশীলতা দু’দিক ধেকেই পিছিয়ে বাংলাদেশি নির্মাতারা।