ঢাকাই ছবিতে রবীন্দ্রসংগীত

উপমহাদেশের সংস্কৃতিচর্চায় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর নাম। বাংলার একমাত্র নোবেল বিজয়ী এই কবির মৃত্যুর পরও তার সাহিত্যকে আশ্রয় করে খ্যাতনামা সব নির্মাতারা তৈরি করেছেন নাটক ও সিনেমা। কেবল রবীন্দ্র সাহিত্য নির্ভর নাটক বা সিনেমা নয়, অন্য সিনেমাতেও অনেকবার ব্যবহৃত হয়েছে কবিগুরুর গান। কিন্তু, বাংলাদেশের সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীত এর ব্যবহার কতটুকু?

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2017, 03:40 AM
Updated : 8 May 2017, 11:18 AM

এই প্রশ্নের উত্তরে চমকে যেতেই হবে। নানা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রচর্চাকে খুব উঁচু স্থানে রাখা হলেও আজ পর্যন্ত খুবই অল্পসংখ্যক সিনেমাতেই রবীন্দ্রসংগীত উঠে এসেছে স্ব-মহিমায়।

রবীন্দ্রনাথে পাকিস্তানি অরুচি ও একজন কলিম শরাফী

সত্যিকারের ঢাকাই ছবি বলতে আজ আমরা যা বুঝি, তার জন্ম হয়েছিল ১৯৫৬ সালে বিএফডিসি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ওই সময় থেকেই উর্দুর বলয় থেকে মুক্ত হয়ে বাংলা ভাষায় পূর্ব বাংলার মানুষদের জন্য সিনেমা নির্মাণ শুরু হয় পুরোদমে। ষাটের দশককে তো বলা হয় ঢাকাই ছবির স্বর্ণযুগ। কারণ ওই সময়টাতেই পর্দা কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন রাজ্জাক-কবরী’র মত জনপ্রিয় জুটি, উঠে এসেছেন জহির রায়হান, সুভাষ দত্ত, খান আতাউর রহমানদের মত পরিচালকেরা।

ঢাকাই ছবির মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে স্বতন্ত্র বঙালি চেতনার চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠা হলেও রবীন্দ্রনাথ রয়ে গেলেন আড়ালেই। কারণ, একজন হিন্দুকবি’র আদর্শে যাতে তখনকার বিশ্বের ‘সর্ববৃহৎ ইসলামি রাষ্ট্রে’র সার্বভৌমত্বে ফাটল না ধরে- এই চিন্তা থেকে পূর্ববাংলায় রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তানি সরকার।

এই নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয়েছিলেন প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কলিম শরাফী। সংস্কৃতিচর্চার পাশাপাশি রাজনীতিতেও যেহেতু ছিল তার বলিষ্ঠ পদচারণা, সেহেতু কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন পাকিস্তানি শাসকদের চক্ষুশূল। ফলাফল, ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীতের পাশাপাশি কলিম শরাফীতেও নিষেধাজ্ঞা!

তবে ঠিক তার আগের বছরই অর্থাৎ ১৯৫৭ সালেই ‘আকাশ ও মাটি’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছেলিন তিনি। ১৯৫৯ সালের ‘মাটির পাহাড়’ সিনেমাতেও ব্যবহৃত হয় তার গাওয়া আরেকটি রবীন্দ্রসংগীত।

কলিম শরাফী নিষিদ্ধ হলেও বাঙালির রবীন্দ্রচর্চা থেমে থাকেনি। তার দেখানো পথে ১৯৭০ সালের ছবি ‘যে আগুনে পুড়ি’তে ‘আমি তোমারও সঙ্গে বেঁধেছি আমারও প্রাণ’- গানটিতে কণ্ঠ দেন নিলুফার ইয়াসমীন ও অজিত রায়। খান আতাউর রহমান তার ‘জোয়ার-ভাটা’ সিনেমায় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসেবে ব্যবহার করেন ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ’ গানটির সুর।

‘আমার সোনার বাংলা’ ও জহির রায়হান

জহির রায়হান ‘জীবন থেকে নেয়া’তে ব্যবহার করেন ‘আমার সোনার বাংলা’

 

পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে যুদ্ধের আগেই বাঙালির মনে যে সিনেমাটি জ্বালিয়ে দিয়েছিলো স্বাধীনতার সলতে, সেটি জহির রায়হান-এর ‘জীবন থেকে নেওয়া’। একটি চাবির গোছাকে কেন্দ্র করে এক সংসারের তিন নারীর উপাখ্যানের আড়ালে জহির রায়হান যে বাঙালির স্বাধীনতার আন্দোলনকেই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন, সে কথা অজানা নয় কারো। আর বাঙালির চেতনাকে তুলে ধরতে রবীন্দ্র-নজরুল আর একুশের গান ছাড়া মোক্ষম অস্ত্র আর কীইবা হতে পারে?

কাজী নজরুল ইসলাম-এর ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ দিয়ে বাঙালির বিদ্রোহ যেমন বুঝিয়েছিলেন জহির রায়হান, তেমনিভাবে ভাষার জন্য আত্মত্যাগের ছবিকে তিনি এঁকেছেন প্রভাতফেরিতে যাওয়ার পথে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি দিয়ে। খান আতাউর রহমান-এর ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’র ব্যঙ্গের আড়ালে লুকিয়ে ছিল সামরিক শাসনের প্রতি তীর্যক কটাক্ষ। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে, গ্রামের মেঠোপথে স্বাধীনতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ তিন ভাই-বোনের (আনোয়ার হোসেন, রোজি সামাদ ও সুচন্দা) গেয়ে ওঠা ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি।

 

বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে দেশের প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করার এই গানটি ছুঁয়ে গিয়েছিল প্রতিটি বাঙালির মর্মমূল। একটি গান সিনেমার মত গণমানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ার মাধ্যমে ব্যবহৃত হলে, তার প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে, ‘জীবন থেকে নেওয়া’য় ‘আমার সোনার বাংলা’র ব্যবহার তারই উদাহরণ। পরের বছরই যে দেশাত্মবোধক এই রবীন্দ্রসংগীতকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু; মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস জুড়ে এই গান প্রেরণা যুগিয়ে গেছে স্বাধীনতাকামী মানুষদের।

চাষী নজরুল ইসলাম ও ঢাকাই ছবিতে রবীন্দ্রচর্চা

চাষী নজরুল ইসলাম তৈরি করেছিলৈন রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প অবলম্বনে ‘শাস্তি’ চলচ্চিত্রটি

 

স্বাধীনতার পরপরই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বড়পর্দায় উঠে আসে যে সিনেমা, তা হলো চাষী নজরুল ইসলাম-এর ‘ওরা ১১ জন’। বিষয় স্বাধীনতাযুদ্ধ হওয়ার কারণেই সিনেমাটিতে উঠে এসেছে দেশাত্মবোধক অনেক গান। তারই অংশ হিসেবে প্রয়াত এই নির্মাতা ছবিটিতে ব্যবহার করেছিলেন ‘ও আমার দেশের মাটি’ রবীন্দ্রসংগীতটি।

দেশের গুটিকয় যে নির্মাতা রবীন্দ্রসাহিত্য নির্ভর সিনেমা তৈরি করেছেন, চাষী নজরুল ইসলাম তাদের একজন। ২০০৪ এবং ২০০৬ সালে তিনি তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের দুই ছোটগল্প অবলম্বনে দুই সিনেমা ‘শাস্তি’ ও ‘শুভা’।

‘শাস্তি’তে তিনি সাদী মোহাম্মদ ও রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে ব্যবহার করেছিলেন দুটি গান- ‘ভালোবেসে সখি নিভৃতে যতনে’ এবং ‘আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে’। ‘শুভা’তে ব্যবহৃত হয়েছে বাপ্পা মজুমদারের কণ্ঠে ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’ গানটি।

চাষী নজরুল ইসলাম ছাড়াও রবীন্দ্র সাহিত্য নিয়ে কাজ করেছেন কাজী হায়াৎ। তিনি তৈরি করেন ‘কাবুলীওয়ালা’ ও ‘চারুলতা’ সিনেমাদুটি। এই দুই সিনেমাতেও রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার ছিল লক্ষণীয়।

পঁচাত্তর পরবর্তী সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীত

“পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রচর্চা নিষিদ্ধ ছিল। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়েও এরকম একটি অলিখিত বাধা সরকারের তরফ থেকে ছিল। তাই তখন সিনেমায় রবীন্দ্রনাথের গল্প কিংবা গান ব্যবহারে এদেশের মানুষকে খুবই সতর্ক থাকতে হতো,” এমনটাই বলছিলেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কর্মকর্তা ফখরুল আলম সোহাগ।

তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়, যখন দেখতে পাই সত্তর, আশি আর নব্বইয়ের দশকে সিনেমার রমরমা বাজারের মধ্যেও রবীন্দ্রসাহিত্য নির্ভর সিনেমা একটিও নেই।

ফখরুল ইসলামের ভাষ্যেই, “সত্তরের দশকের শেষে সাইফুল আজম কাশেম নির্মিত ‘সোহাগ’ সিনেমাটি ছিল রবীন্দ্রনাথ-এর উপন্যাস ‘নৌকাডুবি’ অবলম্বনে। কিন্তু সরকারি বাধা এড়াতে সিনেমার কোথাও রবীন্দ্রনাথের নাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকা তো বটেই, সিনেমার গল্পে নৌকাডুবির পরিবর্তে ট্রেন দুর্ঘটনা দেখাতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি!”

এরপরও গুটি কয়েক সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীত-এর ব্যবহার পাওয়া যায় ওই সময়টাতে। এরমধ্যে রয়েছে ১৯৮৪ সালের সিনেমা ‘সুরুজ মিয়া’, যেখানে রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিলেন শিল্পী অজিত রায়। সিনেমাটিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। পরের বছর ‘দহন’ সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিলেন কাদেরী কিবরিয়া।

‘আগুনের পরশমণি’ ও অন্যান্য

হুমায়ূন আহমেদ-এর প্রথম সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’তে ব্যবহৃত ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’র একটি দৃশ্য

 

প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ-এর যে রবিঠাকুরের প্রতি প্রচ্ছন্ন অনুরাগ ছিল, সেটি তার লেখা যারাই পড়েছেন, তাদের সবারই জানা। সেই অনুরাগেরই চূড়ান্ত প্রতিফলন দেখা গেল, তিনি যখন তার প্রথম সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’ তৈরি করলেন।

সালটা ১৯৯৪; যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি তখন অত্যন্ত সক্রিয়। কিন্তু গণমানুষের এই আন্দোলনে যত সাংস্কৃতিক কর্মী, কবি-সাহিত্যিক সেসময় অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সবাইকেই পড়তে হয়েছিল সরকারি রোষানলে। এরকম বৈরি পরিবেশেই হুমায়ূন তৈরি করেছিলেন তার প্রথম সিনেমা; যার বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ।

 

সিনেমার নাম তো বটেই, ব্যবহৃত পাঁচটি গানের মধ্যে তিনটিই ছিল রবীন্দ্রসংগীত। হুমায়ূন আহমেদ তার অতিপ্রিয় দুই জিনিস বৃষ্টি ও জ্যোৎস্নাকে তুলে ধরেছিলেন রবিঠাকুরের গানের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযোদ্ধা বদি (আসাদুজ্জামান) এক ঝড়ের রাতে এসে উপস্থিত হয় মতিন সাহেবের (আবুল হায়ত) মধ্যবিত্ত পরিবারে। একাত্তরের অবরুদ্ধ ঢাকার থমথমে পরিবেশের মধ্যেও কালবৈশাখির ‘নবধারা জল’ যেন ধুইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল সকল গ্লানি- ‘এসো নীপবনে’ গানটি দিয়ে তাই বোঝাতে চেয়েছিলেন হুমায়ূন।

সিনেমার টাইটেল গান ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ বেজে ওঠে সিনেমার শেষে, যখন সবার অক্লান্ত চেষ্টার পরও মারা যায় যুদ্ধাহত বদি। তবে সিনেমার ‍যে গানটি সত্যিকার অর্থেই দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছিল, সেটি হলো মিতা হক-এর কণ্ঠে ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’।

যুদ্ধের টালটামাটাল সময়ের মধ্যেও আকাশে ‘থালার মত বড়’ পূর্ণিমার চাঁদ দেখে মতিন সাহেব যখন উঠানে ডাকলেন পুরো পরিবারকে, বালতিতে রাখা পানির ছায়ায় চাঁদের আলো দেখে তার বড় মেয়ে রাত্রি (বিপাশা হায়াৎ) গেয়ে ওঠে ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’। মেয়ের গান শুনে মুহূর্তকালের জন্য হলেও যুদ্ধের বিভীষিকা ভুলে যান সুরমা (ডলি জহুর), বাড়ির ভেতর থেকে এসে বসেন বারান্দায়। জ্বরতপ্ত বদি এই প্রথম পুরো পরিবারকে দেখতে পায় একসঙ্গে। রবীন্দ্রনাথের গান এভাবেই একসুতোয় বেঁধে ফেলে সবাইকে।

হুমায়ূন আহমেদ-এর পাশাপাশি সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীত আর মুক্তিযুদ্ধকে পাশাপাশি উঠিয়ে এনেছেন আরেক খ্যাতনামা নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। হুমায়ূনের উপন্যাস অবলম্বনেই ২০১৫ সালে তিনি তৈরি করেছিলেন ‘অনিল বাগচীর একদিন’ সিনেমাটি। সিনেমাটির সংগীত পরিচালনা করেছেন সানি জুবায়ের। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই সিনেমার এক পর্যায়ে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতিকে গাইতে শোনা যায় ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে’ গানটি।

মোরশেদুল ইসলাম তার আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘খেলাঘর’-এ ব্যবহার করেছিলেন দুটি রবীন্দ্রসংগীত। একটি হলো ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারা’য় এবং আরেকটি ‘তুমি যখন যাবেই চলে’।

এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ের চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত ব্যবহার হয়েছে প্রয়াত নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠু’র ‘গহীনে শব্দ’ সিনেমায়। এই সিনেমায় একটি রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

রবীন্দ্র সংগীতের ব্যবহার বাংলাদেশের সিনেমায় যেমনই হোক, সেটিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে রাজি নন বরেণ্য শিল্পী মিতা হক। তার মতে, রবীন্দ্রসংগীত ধারণ করার বিষয়, সিনেমায় দেখানো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়।

তিনি বলেন, “রবীন্দ্রসংগীত তো দেখবার বিষয় নয়, বুঝবার বিষয়। জানার শোনার এবং অনুভবের বিষয়। আমি তাই এটা একেবারেই মনে করিনা যে সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীতকে তুলে আনতেই হবে।”

বিশ্বব্যাপী শ্রোতাদের কাছে রবীন্দ্রসংগীতের আবেদন প্রতিষ্ঠার জন্য সিনেমার প্রযোজন নেই বলেও মনে করেন তিনি।

“প্রসঙ্গত বলতে পারি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সিনেমায় ব্যবহৃত ‘আকাশ ভরা সূর্য-তারা’র কথা। এই গানটি ঋত্বিক ঘটকের সিনেমায় ব্যবহারের আগেও ভীষণভাবে জনপ্রিয় ছিল, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খ্যাতিমান শিল্পী এটি গেয়েছেন। সুতরাং রবীন্দ্রসংগীতকে প্রতিষ্ঠার জন্য আলাদাভাবে সিনেমার কোনো দরকার আছে বলে আমি মনে করি না,” বলেন তিনি।

রাজনৈতিক কারণেই হোক বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েই হোক, বাংলাদেশী নির্মাতাদের সিনেমায় রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহার খুব বেশি হয়নি। তবে এরপরও আশায় বুক বাঁধা যায়, হয়তো ভবিষ্যতের ঢাকাই সিনেমায় কখনো না কখনো কবিগুরুর গানকে স্মরণ করবেন এদেশের নির্মাতারা।