‘দ্য ফেইট অফ দ্য ফিউরিয়াস’: পল ওয়াকার ছাড়া পানসে যে সিনেমা

গাড়ি, রেইসিং আর সেই সঙ্গে অ্যাকশনে পরিপূর্ণ থ্রিলার- এই তিনের সংমিশ্রণেই বক্স-অফিস সাফল্যের দারুণ এক রেসিপি খুঁজে বের করেছিল ‘ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির নির্মাতারা।একে একে তৈরি করে ফেলেছে ৮ টি সিনেমা! এই সিরিজের সর্বশেষ সিনেমা ‘দ্য ফেইট অফ দ্য ফিউরিয়াস’-এ এসে সিরিজটিকে কিছুটা হোঁচটই খেতে হলো।

সেঁজুতি শোণিমা নদীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2017, 12:12 PM
Updated : 17 April 2017, 12:43 PM

‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ এমন এক সিরিজ, যার সিনেমাগুলো থেকে বুদ্ধিদীপ্ত কাহিনি, অভিনয়ের জৌলুস বা ভাল নির্মাণশৈলী- এর কোনো কিছুই আশা করেনা ভক্তরা। এই সিরিজের সিনেমা মানেই ‍নিখাদ নির্ভেজাল বিনোদন- এমনটা বিশ্বাস করেই দর্শকেরা এতোদিন হলমুখী হয়েছে। তবে সিরিজের একজন অভিনেতাই দর্শকের মনে আলাদা একটি জায়গা তৈরি করতে পেরেছিলেন, আর তিনি হলেন প্রয়াত পল ওয়াকার। তার মৃত্যুর ধকল কাটিয়ে উঠতে নতুন চরিত্র সংযোজন, নতুন ভিলেইন, নতুন নতুন মোচড়- সব কিছুরই ব্যবস্থা করতে চেয়েছেন নির্মাতারা। কিন্তু পল ওয়াকার বিহীন ফিউরিয়াস দলের জৌলুস যেন অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে।

নতুন সিনেমার শুরুতে দেখা যায় ব্রায়ান আর মিয়া’র অবসরের সিদ্ধান্তের পর ডম (ভিন ডিজেল) আর লেটি (মিশেল রড্রিগেজ) বিয়ে করে উড়াল দেয় মধুচন্দ্রিমার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এককালের গতিময় অতীতকে পেছনে ফেলে যে জুটি স্বপ্ন দেখছিল সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনের, তাদের সব স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দেয় সাইফার (শার্লিজ থেরন) নামের এক রহস্যময় নারী। ডমকে সে বাধ্য করে লেটি’র সঙ্গে প্রতারণা করতে, তাকে নিয়ে পরিকল্পনা ফাঁদে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদ চালানোর। আর তখনই পুরনো দলকে একত্রিত করে তারা নামে ডমকে উদ্ধারের মিশনে।

সিনেমাজুড়েই ফিউরিয়াস টিমকে অনেকটা জোর করে একসঙ্গে মাঠে নামানো হয়েছে বলেই মনে হবে। দলের অন্যতম দুই সদ্যস্য লুক হবস (ডোয়েইন জনসন) এবং ডেকার্ড শ (জেইসন স্ট্যাথাম) একে অপরের চিরশত্রু হলেও দলে ঢোকার সাথে সাথেই তারা কীভাবে যেন প্রাণের বন্ধু হয়ে যায়! মাত্র দুটি দৃশ্যের মধ্য দিয়ে লুক আর ডেকার্ডের বন্ধুত্ব দানা বাঁধার ঘটনাটি দেখানো হয়, যা পুরোপুরি বানোয়াটি বলে মনে হবে যে কারোরই।

ওদিকে ডমের পুরোনো দলকে যে দুজন একত্রিত করেছেন, সেই মিস্টার নোবডি (কার্ট রাসেল) ও তার সাগরেদ লিটল নোবডিকে (স্কট ইস্টউড)পুরোপুরি বাহুল্য মনে হয়েছে সিনেমাজুড়ে, যে কারণে এই দুটি চরিত্রের প্রতি দর্শকের নজর একেবারেই পড়ার কথা নয়।

গোটা সিনেমায় ভীষণভাবেই অভাব বোধ হয়েছে পল ওয়াকার-এর। বিশেষ করে আগের সিনেমাগুলিতে যেভাবে তার চরিত্র ব্রায়ান ডমের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে সহায়তা করে এসেছে ফিউরিয়াস দলকে- সেই বিষয়টি ছিল পুরোপুরি অনুপস্থিত। এমনকী ব্রায়ানকে ছাড়া রোমানের (টাইরিস গিবসন) কৌতুকগুলোকেও নিষ্ফল মনে হয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে।

খলচরিত্র সাইফারের ভূমিকায় শার্লিজ থেরন-এর অভিনয় ছিল যথেষ্ঠ ভাল। কিন্তু অস্কারজয়ী এই অভিনেত্রীর প্রতিভা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারেননি নির্মাতা, কারণ চরিত্রটির সংলাপগুলো ছিল অত্যন্ত ক্লিশে। বেশ কিছু দৃশ্যেই সাইফারকে দেখে মনে হয়েছে দারুণ সব অভিব্যক্তি ও অ্যাকশনের মাধ্যমে সাইফার বলছে সবচেয়ে মামুলি কথাগুলোই!

তবে এই সিনেমায় একেবারেই যে কিছু নেই, তা বলাটা খানিকটা অবিচারই হবে। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ মানেই গাড়ি, আর গাড়ি চালনার অ্যাকশন- এই সত্যে যারা বিশ্বাসী, তাদের জন্য সিনেমাটিতে বিনোদনের অভাব ছিলনা। বেশ কিছু দৃশ্যে তো কেবল গাড়ি দিয়েই অ্যাকশনের বাহাদুরি দেখিয়েছেন পরিচালক এফ গ্যারি গ্রে। বিশেষ করে আকাশ থেকে গাড়ি বৃষ্টির দৃশ্যটি ছিল বেশ চমকপ্রদ।

তবে সিনেমার সবচেয়ে বিনোদনপূর্ণ দৃশ্যটি ছিল জেইসন স্ট্যাথাম-এর একটি ছয়মাসের শিশুকে ক্যারিয়ারে করে ভিলেনদের সঙ্গে মারামারির দৃশ্যটি। স্ট্যাথাম-এর চমৎকার সব অ্যাকশন স্টান্টের পাশপাশি শিশুটির মজার অভিব্যক্তি ছিল দৃশ্যটির বাড়তি পাওয়া।

অবশ্য ‘ম্যাড ম্যাক্স: ফিউরি রোড’, ‘জন উইক’ আর ‘মিশন ইম্পসিবল ফাইভ’-এর মতো দুর্দান্তসব অ্যাকশন থ্রিলারের কালে ‘দ্য ফেইট অফ দ্য ফিউরিয়াস’কে মনে হবে নিতান্ত ছেলেখেলা! একবারের দেখায় মধ্যম পর্যায়ের বিনোদন পাওয়ার জন্য সিনেমাটি দেখতে হলে আপনি যেতেই পারেন, তবে আগের সিনেমাগুলির মতো এটিও আপনার মনে দাগ রেখে যাবে- এমন আশা ভুলেও করবেন না।