গীতিকবি নজরুল ইসলাম বাবুকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ

‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের গীতিকার তিনি। ১৯৯০ সালে ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবু, যার লেখা গান ও স্মৃতি আজও শ্রোতাদের মননে স্থায়ী হয়ে আছে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2016, 03:21 PM
Updated : 14 Dec 2016, 12:41 PM

তার রচিত গান যে কজন শিল্পী গেয়েছেন, সুর করেছেন কিংবা চিন্তায় সঙ্গী ছিলেন। তাদের স্মৃতির আয়নায় অমলিন নজরুল ইসলাম বাবু। সেইসব স্মৃতি ও তার  কর্মময় জীবনের নানা বিষয় নিয়ে প্রকাশ হচ্ছে স্মারকগ্রন্থ। গ্রন্থটির নাম ‘নজরুল ইসলাম বাবু স্মরণে স্মারকগ্রন্থ’।  এটি সম্পাদনা করছেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন ওবায়দুর রহমান বেলাল, শাফাত খৈয়াম ও শাহীন আক্তার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খবরটি জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম বাবুর সহধর্মিনী শাহীন আক্তার।

২০১৭ সালের একুশের গ্রন্থমেলায় বইটি প্রকাশ করা হবে।

এতে গীতিকবি নজরুল ইসলাম বাবুর গানের পাশাপাশি স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান,  সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শেখ সাদী খান, শাফাত খৈয়াম, সৈয়দ আবদুল হাদী, সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, সেলিম আশরাফ, লোকমান হাকিম, মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ,মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন ,কবি জাহিদুল হক, অধ্যাপক দূর্গাদাস ঘোষ, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, সহধর্মীনি শাহীন আক্তার, মেয়ে নাজিয়া ইসলাম ও নাফিয়া ইসলাম।

এতে নজরুল ইসলাম রচিত গানের বাণীও স্থান পাবে।

এ প্রসঙ্গে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেন, “আমরা দুজনই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমার সুরারোপিত দেশাত্মবোধক গানের তালিকায় গীতিকার হিসেবে নজরুল ইসলাম বাবুর নামটি শীর্ষে রয়েছে। আমার ধারণা, আমার বেশিরভাগ দেশাত্মবোধক গানের গীতিকার বাবুই। আমার অস্তিত্বে বাবুর অংশীদারিত্ব অনেকগুণ বেশী। শুধু দেশের জন্য গান- এই ছিল বাবু আর আমার চির শপথ। হয়তো আমরা অল্প পেরেছি কিংবা পারিনি। তবে এ প্রশ্ন বাবুর হয়ে আমি রাখলাম আগামী দিনের কাছে।”

শেখ সাদী খান বলেন, “বাবু তুমি আজ নেই। তোমার লেখা গান মানুষকে প্রতি মুহূর্তে  স্মরণ করিয়ে দেয়। বাবু তার যে কর্ম রেখে গেছে, সে কর্ম এ পৃথিবী যতদিন থাকবে নজরুল ইসলাম বাবুও ততদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে বেঁচে থাকবেন।”

নজরুল ইসলাম বাবু। ছবি: নজরুল ইসলাম বাবুর সহধর্মিনী শাহীন আক্তারের সৌজন্যে

নজরুল ইসলাম বাবুর সহধর্মিনী শাহীন আক্তার বলেন, “প্রয়াত জীবনসঙ্গীর ওপর কিছু বলা বেশ কঠিন। কত মধুর স্মৃতি, কত আলাপচারিতা, কত সুখ-দু:খ বিনিময় করার আবেগঘন মুহূর্তগুলো এখনও আমাকে ঘিরে রাখে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তুরার পাহাড়ে বসে যুদ্ধ প্রশিক্ষনের অবসর মুহূর্তে গান লিখতেন। গীতিকার হিসেবে গানের ভুবনে আসন পাতার পেছনে অনেক কথা ও কাহিনী তার জীবনকে আচ্ছন্ন করে আছে। হঠাৎ করেই তিনি গীতিকার হিসেবে পরিচিতি পাননি। বাংলা গান এবং দেশের গানকে সমৃদ্ধ করার জন্য যে মানুষটি নিজেকে উৎসর্গ করে দিলেন, সেই মানুষটিকে রাস্ট্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে মুল্যায়ন করার তাগিদ অনুভব করি। তার রচিত ‘সবকটা জানালা খুলে দাও না’ গানের সুরকার ও শিল্পীকে একুশে পদক দেয়া হয়। যিনি গানটি লিখলেন তাকেও মুল্যায়ন করা প্রয়োজন।”

গানপ্রিয় নজরুল ইসলাম বাবু  ছোট বেলা থেকেই লিখতেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বেতার এবং ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

নজরুল ইসলাম বাবু রচিত অসংখ্য গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, ‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘আমার গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম’, ‘কাঠ পুড়লে কয়লা হয়’, ‘আমার মন কান্দে ও আমার প্রাণ কান্দে’, ‘ডাকে পাখি খোল আঁখি’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’ ইত্যাদি।

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় জন্ম নেয়া নজরুল ইসলাম বাবু  ১৯৯১ সালে ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’ ছবিতে গীত রচনার জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

তার গান গেয়েছেন বশীর আহমেদ, সৈয়দ আবদুল হাদী, আশা ভোঁসলে , কুমার শানু , সুবীর নন্দী, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, শাম্মী আখতার, দিলরুবা খান, বেবী নাজনীন,  সুখেন্দু চক্রবর্তী, এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, শুভ্র দেবসহ অনেকেই।