দাবি আদায়ে রাজপথে টেলিভিশন শিল্পীরা

নানা প্রতিকূলতা, অ‌নিশ্চয়তা ও বি‌দেশি সংস্কৃ‌তির আধিপত্য থেকে দেশের টেলিভিশনকে রক্ষার পাঁচ দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2016, 10:49 AM
Updated : 30 Nov 2016, 11:18 AM

ফেডারেশন অব টেলিভিশনস প্রফেশলানস অর্গানাইজেশনসের (এফটিপিও) ব্যানারে বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশে মিলিত হন তারা।

‘শিল্পে বাঁচি, শিল্প বাঁচাই’ স্লোগানে এ সমাবেশের স্বাগত ভাষণে এফটিপিওর আহ্বায়ক অভিনেতা-নির্দেশক মামুনুর রশীদ বলেন, “এই ভূখণ্ডের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ-ভাবনা ও চেতনাকে সুরক্ষিত রাখতেই আমাদের এই আন্দোলন।

“আমরা আমাদের কিছু দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেছি, আর কিছু দাবি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কাছে। আমরা চাইছি, আমাদের দাবিগুলো শিগগিরই মেনে নেওয়া হোক।”

পাঁচ দাবি

  • দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বাংলায় ডাবকৃত বিদেশি সিরিয়াল ও অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করা।
  • টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতিত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
  • টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির নূন্যতম ও যৌক্তিক হার পুনঃনির্ধারণ করতে হবে।
  • দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ করতে হবে
  • ডাউনলিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশিয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে।

সমাবেশে এফটিপিওর সদস্য সচিব নির্মাতা গাজী রাকায়েত তাদের সংগঠনের ধারণাপত্র পাঠ করেন।

তিনি চ্যানেল মালিকদের প্রতি বলেন, “আপনার ব্যবসা করবেন সে ভালো কথা, কিন্তু ব্যবসার পাশাপাশি শিল্পকেও ভালোবাসুন। শিল্প নিয়ে ব্যবসা করবেন তা হবে না।”

একটি ‘বিশেষ’ মহলকে ইঙ্গিত করে গাজী রাকায়েত বলেন,  “কেউ আমাদের প্রযোজক-নির্মাতা ও কলাকুশলীদের মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে চাইছে।  তাদের উদ্দেশ্য কখনও সফল হবে না।”

চিরতরে হারানো টেলিভিশন নাটকের নির্মাতা, শিল্পী-কলাকুশলীদের উদ্দেশ্যে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন অভিনেত্রী সানজিদা প্রীতি।

অভিনেতা–নির্দেশক-প্রযোজক সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, “অনেক ক্লায়েন্ট ও এজেন্সি শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্দেশক ও প্রযোজকদের উপর তাদের মতামত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা খুব অমানবিক।”

প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, “কোনো একটি শক্তি আমাদের ইচ্ছামতো চালাতে চাইছে, দমন করতে চাইছে আমাদের। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।  শিল্পী ও কলাকুশলীদের সমস্যার সমাধান করতেই হবে।”

বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতে বিদেশী শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণের নিন্দা করেন অভিনেতা আবুল হায়াত। বিদেশি শিল্পীরা এ দেশে কাজের ক্ষেত্রে কতটা নীতিমালা মানছে, তাদের কাছ থেকে আদৌ কোনো লভ্যাংশ আসছে কি না তা পর্যবেক্ষণের অনুরোধও করেন সরকারের প্রতি।

টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত গানের অনুষ্ঠানে বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আসাকেও ভালো চোখে দেখছেন না তিনি। এসব অনুষ্ঠানে প্রায়ই ‘নিম্নমানের বিদেশি’ শিল্পীকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

‘অবহেলিত’ বাংলাদেশ টেলিভিশনকে সক্রিয় করে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন বিটিভিকে নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের। বিটিভি ওয়ার্ল্ডে আমাদের নাটকগুলো সঠিকভাবে প্রচার করতে হবে।”

নাটকে পারিশ্রমিক ‘তারতম্য’ সমস্যার সমাধানে প্রযোজকদের প্রতি অনুরোধ জানান নাট্যব্যক্তিত্ব ইনামুল হক।

নির্মাতা বৃন্দাবন দাস বলেন, “আজকের এই সংকট আমাদের পেশার, সংস্কৃতিরও।  আমাদের পরিচয়হীন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।  সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমাদের আজকের এই আন্দোলন।”

এই আন্দোলনের সঙ্গে দর্শকদেরও সম্পৃক্ততা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অভিনেত্রী ডলি জহুর।

ফেডারেশনস অব টেলিভিশনস প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের অন্তর্ভুক্ত ডিরেক্টরস গিল্ড, টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, অডিও ভিজ্যুয়াল টেকনিক্যাল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, টেলিভিশন মেকআপ আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, শুটিং হাউজ অব বাংলাদেশ, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ ছাড়াও বাংলাদেশ নাট্যাঙ্গন থিয়েটার বুধবারের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছে।