বক্সঅফিসে ‘আয়নাবাজি’র রাজত্ব!

সেপ্টেম্বরের শেষে সারাদেশের ২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে র্নিমাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরীর প্রথম সিনেমা ‘আয়নাবাজি’। মুক্তির পর থেকেই বক্সঅফিসে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে সিনেমাটি। গ্লিটজের অনুসন্ধানে রাজধানীর বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপকদের কথায় উঠে এসেছে এমন চিত্রই।

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2016, 07:31 PM
Updated : 13 Oct 2016, 12:31 PM

‘আয়নাবাজি’ সিনেমাটি নাকি বহুদিন পরে প্রেক্ষাগৃহ বিমুখ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির দর্শকদের ফিরিয়ে এনেছে- এমনটাই বললেন রাজধানীর বলাকা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক মোঃ আক্তার হোসেন।

গ্লিটজকে তিনি বলেন, “আমাদের হলে ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার টিকেট বিক্রি ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন চারটি করে শো হচ্ছে। মুক্তির প্রথম দিন থেকে আজ পর‌্যন্ত সবগুলো শোই হাউজফুল। সব শোতেই দর্শকের অনেক বেশি চাপ থাকছে, যা সিনেমা মুক্তির পর থেকেই নিত্য দিনের ঘটনা।”

তিনি আরও জানালেন, টিকেট কাটতে অনেকে আগ থেকেই বুকিং দিয়ে রাখছেন। তারপরও

টিকেটের জন্য হাহাকার লেগেই আছে।

তার ভাষ্যে, “এক কথায় ‘আয়নাবাজি’ ব্যবসা সফল সিনেমা। বিগত বারো-তেরো বছরের মধ্যে কোনো বাংলা সিনেমার টিকেট বিক্রি এমনভাবে বিক্রি হয়নি। এই বছর আমরা ঈদের সময় যৌথ প্রযোজনার সিনেমা থেকে ব্যবসায়িকভাবে যতটা লাভবান হয়েছি তার তুলনায় ‘আয়নাবাজি’র মতো দেশীয় প্রযোজনায় সিনেমা থেকে অনেক বেশি লাভবান হয়েছি।”

বলাকা সিনেমা হল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যতদিন দর্শকদের কাছে এই সিনেমার চাহিদা থাকবে  তত সপ্তাহ হলটিতে এই সিনেমা চলবে।

বক্সঅফিসে ‘আয়নবাজি’র রাজত্বের একই ধরনের চিত্র ফুটে উঠল রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ম্যানেজার মাসুদ পারভেজের কথায়।

গ্লিটজকে তিনি বলেন, “মুক্তির প্রথম সপ্তাহের প্রথম দিন (২৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার) আমরা ‘আয়নাবাজি’র তিনটি শো প্রদর্শিত করেছিলাম। দশর্কের বিপুল চাহিদার কারনে শো-য়ের সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিতীয় দিন (শনিবার) থেকে শো-য়ের সংখ্যা করা হয় চারটি। এরমধ্যে এই সিনেমার প্রতি দশর্কের আগ্রহের দিকটি বিবেচনা করে আমরা দ্বিতীয় সপ্তাহে শুক্রবারে শো-য়ের সংখ্যা সাতটি ও শনিবার থেকে আটটি করে শো চালাচ্ছি। পরে এই সংখ্যা আরো বেড়ে মঙ্গলবার ও বুধবার এই দুইদিনে এগারটি হয়েছে। এখন আমাদের চারটি হলে আয়নাবাজি চলছে।”

একই সুরে কথা বললেন রাজধানীর রাজমণি প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক ওয়াহিদ।

গ্লিটজকে তিনি বলেন, “এই সিনেমা থেকে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। প্রতিটি শো-য়ের ডিসি আসনগুলো ফুল থাকছে। টিকেট বিক্রি গড়পড়তার ভালোই হচ্ছে। আমাদের প্রেক্ষাগৃহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না হওয়া সত্ত্বেও সিনেমা প্রেমীরা গরমের মধ্যে কষ্ট করে ‘আয়নাবাজি’ সিনেমাটি দেখছেন।”

‘আয়নাবাজি’র ভেলকিবাজি রাজমণির মতো মধুমিতা প্রেক্ষাগৃহকেও ছুঁয়েছে। গ্লিটজকে এমন কথাই শোনালেন প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, “এই (আয়নাবাজি) সিনেমাটি দেখার জন্য আমাদের প্রেক্ষাগৃহে দর্শক বেশ ভালো আসছেন। বিশেষ করে যারা বহুদিন ধরে বাংলা সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, তারাই বহুদিন পরে এই সিনেমার মাধ্যমে আবারো প্রেক্ষাগৃহমুখী হলেন। যদিও এটা সকল শ্রেণির দর্শকের সিনেমা নয়, বলা যেতে পারে একটি নিদিষ্ট ঘরানার দর্শকদের জন্য, কিন্তু তারপরেও প্রতিটি প্রদর্শণীতে হাউজফুলের প্রায় কাছাকাছি দর্শক থাকছে।”

অন্যদিকে রাজধানীর শ্যামলী সিনেপ্লেক্সের চলতি সপ্তাহের প্রতিটি প্রদর্শনীর টিকেট নাকি এরমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গ্লিটজকে এমনটাই জানালেন শ্যামলী সিনেপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আহসানুল্লাহ হাসান।

তিনি বলেন, “চলতি সপ্তাহের প্রতিটি শোয়ের টিকেট ইতমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। মুক্তির দিন থেকেই প্রতিদিনের চারটি প্রদর্শণী হাউজফুল। এখন টিকেটের এমন অবস্থা আগামী সপ্তাহের শনিবার কিংবা রবিবারের টিকেটও যদি কেউ অগ্রিম ক্রয় করতে চায় সেই টিকেট হয়ত কাউকে দেওয়া যাবে না!”

তিনি আরও বলেন,“ এই সিনেমা (আয়নাবাজি) তো সেই রকম ব্যবসা করছে। সিনেমা তো সুপারহিট। বহুদিন পরে এমন একটা সিনেমার ব্যবসা করলাম। আমরা তৃতীয় সপ্তাহেও এই সিনেমার প্রদর্শণ করবো। সত্যি বলতে এমন ধরনের সিনেমা যদি বছরে দশটি র্নিমান করা হয় তাহলে আমাদের সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলো টিকে যাবে।”

‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং মডেল ও উপস্থাপিকা মাসুমা রহমান নাবিলা। সিনেমায় অন্যান্যদের মধ্যে অভিনয় করেছেন পার্থ বড়ুয়া, লুৎফর রহমান জর্জ, গাউসুল আলম শাওন, এজাজ বাপ্পী, হীরা চৌধুরী সহ আরও অনেকে।

কনটেন্ট ম্যার্টাসের প্রযোজনায় র্নিমিত ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার মূল কাহিনি ও ভাবনা গাওসুল আলম শাওনের। এছাড়াও অনম বিশ্বাস-এর সঙ্গে সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন শাওন।