হতাশ করেনি ‘নিয়তি’

‘নিয়তি’র ফেরে কাছে আসা দুজন আবার নিয়তির কাছেই পরাজিত হয়ে চলে যায় বহু দূরে- এমনই এক সংকটময় প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা।

প্রমা সঞ্চিতাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2016, 07:33 AM
Updated : 19 August 2016, 07:33 AM

কিন্তু ঢাকাই ছবির দর্শকদের নিয়তিতে কী লেখা আছে সিনেমাটি নিয়ে? আরিফিন শুভ-জলি জুটির রসায়নে নতুন কিছু পাওয়া কি সত্যিই গেছে, নাকি ফের সেই নতুন বোতলে পুরান পানি?  

‘নিয়তি’র গল্প যেভাবে এগিয়েছে, তাতে নামকরণের দিক থেকে শতভাগ সার্থক নির্মাতা- একথা বলতেই হবে। গল্পের গাঁথুনিতে ছিল নতুনত্ব আর গানগুলোতেও ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। সব মিলিয়ে উপভোগ করার মতই একটি ছবি উপহার দিয়েছেন নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু।

জাজ মাল্টি মিডিয়া ও এসকে মুভিজ-এর যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ ছবির প্রধাণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ (শুভ্র চৌধুরী) ও ফাল্গুনী রহমান জলি (মিলা)। এছাড়া অন্যন্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুপ্রিয় দত্ত, ঈশানী, মৌসুমী সাহা, আরমান পারভেজ মুরাদ, নাদের চৌধুরী প্রমুখ।

ছবিটির সংগীতায়োজন করেছেন ভারতের স্যাভি।

‘নিয়তি’র শুরু হয় একটি মজার দৃশ্য দিয়ে। নায়িকা জলিকে (মিলা) দেখা যায় চোর সেজে আরেক চোরকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ঘরেই টাকা চুরি করতে! এর পর ধীরে ধীরে ছবির কাহিনী মোড় নেয় অন্যদিকে।

সিনেমার গল্প শহুরে এক ব্যবসায়ীর মেয়ে মিলাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে, যে কিনা ঘটনাচক্রে শুভ্র গ্রুপ অব কোম্পানির একমাত্র উত্তরাধিকার শুভ্র চৌধুরীর (আরেফিন শুভ) গাড়ির কাচ ভেঙে পালিয়ে যেতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে যায়। পরে গাড়ির কাচ ভাঙার ক্ষতিপূরণ হিসেবে মিলার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা চায় শুভ্র। তবে মিলার বাবা খুবই কৃপণ, তাই বাধ্য হয়ে এক মাস শুভ্রর গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে চাকরী করে ক্ষতিপূরণ শোধ করার প্রস্তাবে রাজী হয় সে।

সিনেমার প্রথমাংশ দর্শকদের যোগাবে হাসির খোরাক; সেইসঙ্গে শুভ-জলির চমৎকার রসায়ন নজর কাড়তে বাধ্য। কিন্তু দ্রুতই গল্পের মোড় ঘুরে যায় দর্শককে স্তব্ধ করে দেওয়ার মতো একটি ঘটনায়।

‘নিয়তি’ একটি গল্পনির্ভর ছবি। গল্পই এ ছবির প্রাণ। ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য- দুটোই লিখেছেন আবদুল্লাহ জহির বাবু। যদিও মূল গল্প মার্কিন সিনেমা ‘দ্য নোটবুক’ দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে ছবির শুরুতে দেখানো হয়েছে। তবে কাহিনি অনুকরণে যথেষ্ট স্বকীয়তার প্রমাণ দিয়েছেন চিত্রনাট্যকার। মূল ছবির অন্ধ অনুকরণের দেশীয় প্রবণতার বাইরে গিয়ে মানানসই চিত্রনাট্য তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

ছবির সব চেয়ে শক্তিশালি দিক হল- গল্পের নতুনত্ব। তবে এই গল্পও আরেকটু গুছিয়ে বলা সম্ভব ছিল। শেষের দিকে ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটতে থাকে, ফলে অনেক জায়গায় খেই হারিয়ে ফেলতে হয়েছে। এছাড়াও মিলার চার বছর ‘কোমা’তে থাকার ঘটনাটিও আরেকটু বিশ্বাসযোগ্যভাবে দেখানো সম্ভব ছিল। তবে পুরো ছবিতে শুভ-জলির চমৎকার পর্দা-রসায়ন পুষিয়ে দিয়েছে অনেক ভুল-ভ্রান্তি।

কিছু কিছু দৃশ্যে জলির অভিনয় বেশ দুর্বল বলে মনে হয়েছে। শেষের দিকে মানসিক রোগীর চরিত্রে তার অভিনয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি ছিল অনেকটাই। এছাড়াও ‘ডায়ালগ থ্রোয়িং’-এ বেশ কিছু ক্ষেত্রে তার কণ্ঠে অভিব্যক্তির ঘাটতি চোখে পড়েছে। তবে আকর্ষণীয় সাজে আধুনিক মেয়ের চরিত্রে এ ছবিতে বেশ মানিয়ে গেছেন তিনি।

অন্যদিকে আরিফিন শুভর অভিনয় ছিল এক কথায় অনবদ্য। সাজ-পোশাক, অভিব্যাক্তি ও অভিনয়- সব দিক দিয়েই সাবলীল ছিলেন তিনি।

ছবির খলনায়ক আরমান পারভেজ মুরাদের অভিনয় ছিল প্রসংশনীয়। এছাড়া অনান্য কলাকুশলীদের অভিনয় ছিল চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এ ছবির সবচেয়ে বড় সম্পদ হল এর গানগুলো। ভারতীয় সংগীত পরিচালক স্যাভির সংগীতায়োজনে ছয়টি গানই ছিল এক কথায় অসাধারণ। বিশেষ করে নাচে-গানে ভরপুর ‘ঢাকাই শাড়ি’ ও ‘অনেক সাধনার পরে’ গানটির রিমেক ভার্সনে যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় পা্ওয়া গেছে।

রুনা লায়লার গাওয়া ‘যতন করে’ গানটিও ঘটনার প্রেক্ষাপটে ‘সিচুয়েশনাল সং’ হিসেবে বেশ সার্থক।

ছবির শিল্প নির্দেশনা ও রূপসজ্জার কাজ ছিল বেশ উন্নত। শেষ দৃশ্যে মিলার রেপ্লিকাগুলো বেশ জীবন্ত বলে মনে হয়েছে। এছাড়া অপারেশনের পর মিলার পুরো মাথায় ব্যান্ডেজের বিষয়টিও বেশ বাস্তবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে বৃদ্ধ শুভ্র’র সাজ আরেকটু নিখুঁত হতেই পারত।

ছবির সেট ও লোকেশন নির্বাচনেও বিচক্ষণতার পরিচয় পা্ওয়া যায়। ছবির দৃশ্যধারণ ও লাইটের ব্যবহার ছিল যথোপযুক্ত। বিশেষ করে হাসপাতালের কোমা রুম থেকে বেরিয়ে আসার পরে রাতের বেলা শুভ্রর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে মিলার অস্থির কাতরতার দৃশ্যধারণে যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন চিত্রগ্রাহক সাইফুল শাহীন।

ছবির মহরতে নির্মাতা বলেছিলেন, “ছবিটি দেখে হতাশ হবেন না দর্শক।”

এখনও পর্যন্ত বক্স অফিসও সে কথাই বলছে। হাস্য-রসাত্মক সংলাপ, চমকপ্রদ কাহিনি, আকর্ষনীয় জুটি- একটি ব্যবসা সফল ছবির সব উপকরণই আছে ছবিটিতে।

এখন দেখার বিষয় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘নিয়তি’র নিয়তিতে শেষ পর্যন্ত কী লেখা আছে!