লোকসঙ্গীত উৎসব: শুরুতেই অব্যবস্থাপনার ছায়া

প্রথমবারের মতো ঢাকায় বসলো আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীতের আসর। তিনদিনব্যাপী এ উৎসবের প্রথম দিন অবশ্য অব্যবস্থাপা ছায়া ফেলেছে উৎসবের আনন্দে। শ্রোতাদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরাও নানা অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2015, 09:24 AM
Updated : 13 Nov 2015, 12:15 PM

অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেও এন্ট্রি পাস না মেলার অভিযোগ তো ছিলই। পাশাপাশি উৎসবস্থলে ঢুকতে নানা বিধিনিষেধের কথাও উল্লেখ করা হয়নি আগে থেকে।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টের ফেইসবুক পেইজটি এখন ভরে উঠেছে নানা অভিযোগে।তারেক কবির রাহি নামে একজন বলছেন, অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ এমন নোটিশ দেওয়া হলেও মোবাইলেও যে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ হয়ে গেছে এমন কোনো নোটিশ তাদের দেয়া হয়নি।

এন্ট্রি পাসে ‘ব্যাগ নিয়ে ঢোকা যাবে না’ এমন নির্দেশনা না থাকলেও উৎসবের স্বেচ্ছাসেবকরা এসে জানালেন, ব্যাগ নিয়ে আর ভেতরে ঢোকা যাবে না। এন্ট্রি পাস নিয়েও অনেক দর্শক তাই উৎসব উপভোগ করতে পারেননি।

প্রসেনজিৎ মন্ডল নামে এক দর্শক গ্লিটজকে বললেন, “কোথাও কিন্তু বলা  হয়নি ব্যাগ নিয়ে উৎসবে আসা যাবে না। এটা সত্যি বিরক্তিকর।”

প্রবাল নামের দর্শক বললেন, “এই আয়োজকরা কি সত্যি জানে কিভাবে এত বড় আয়োজন করতে হয়? এদের আসলে শিখে আসা উচিত ছিলো। তারপর দর্শকদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরা ঠিক কিভাবে ব্যবহার করবেন, সে ব্যাপারে আয়োজকরা কোনো নির্দেশনা দেয়নি।  এত লজ্জ্বা আর অপমান, এরা নরকে যাক।”

শিকদার নাজমুল হক বললেন, "আয়োজকদের ব্যর্থতায় খুব দুঃখ পেলাম । এটা আসলে একটা ফাজলামো।"

তারপরও অনুষ্ঠানস্থল শ্রোতায় পরিপূর্ণ ছিলো। সুর-ছন্দে বিভোর হয়ে সবাই অভিযোগের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু মঞ্চে যখন লাবিক কামাল গৌরব-রব ফকির-শফি মন্ডলরা উঠলেন, তখনই বাধল গোল। পারফরম্যান্সের সময় ব্যাপ্তি নিয়ে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বচসাও হয় মঞ্চে ওঠার আগে। গৌরবের ভাষ্যে, তিন লোকসংগীত শিল্পীর পারফর্ম করার কথা ছিলো সোয়া ১ ঘণ্টা। কিন্তু আয়োজকরা তাদের ৪৫ মিনিটের বেশি সময় দিতে নারাজ।

"আমি একা হলে আয়োজকদের কথা মেনে নিতাম। কিন্তু আমার সঙ্গে বাংলাদেশের দুই কিংবদন্তী ফোক গায়ক রব ফকির এবং শফি মন্ডল গাইবেন। তিন শিল্পীর জন্য  আমি একটু বেশি সময়ই চেয়েছিলাম। কিন্তু আয়োজকরা তা করতে দিলো তো নাইই, আমাদের গান চলার মাঝেই তারা আমাদের থামিয়ে দিলো। এটি কোন ধরনের আচরণ? উপস্থাপকরা হুট করে এসে বললো, আমাদের পারফরম্যান্স শেষ। আমরা সত্যি হতাশ।”

শ্রোতারা চাইছিলেন আরো সময় নিয়ে মঞ্চে থাকুক তিন শিল্পী। নির্ঝর বড়ুয়া নামে এক দর্শকের  অভিযোগ, “বাংলা ফোক গানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত  করতেই নাকি এমন আয়োজন ! কিন্তু বাংলা ফোক গানকে তো বিশ্ববাসী জানে।  এ উৎসবে হিন্দি আর উর্দু ফোক গানকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান ও অন্য দেশ থেকে আসা শিল্পীরা পারফর্ম করবেন অনেক বেশি সময় নিয়ে, আর আমাদের ফোক শিল্পীরা পাবেন অল্প সময়, এটাতো মেনে নেওয়া যায় না।”

যদিও ভিন দেশ থেকে আসা শিল্পীরাও মঞ্চে খুব বেশি সময় পাননি। পাকিস্তানি শিল্পী সাই জহুর গাইতে পেরেছেন মাত্র তিনটি গান। ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত সাড়ে ১২টা তখন মঞ্চে ওঠে পাপন অ্যান্ড ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বেস গিটারে কৃষ্ণা, তবলায় কীর্তি, গিটারে পংকজকে নিয়ে মঞ্চে উঠলেন পাপন। গাইলেন ‘দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে’, ‘ও মেঘ কেন চলে যাও’, ‘কে তোকে নজরি লাগায়’, ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার' - এই চারটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ভাঙা বাংলায় টুকটাক কথা চললো দর্শকের সঙ্গে। বললেন, আরো গান গাওয়ার ইচ্ছা ও প্রস্তুতি দুইই ছিল, কিন্তু সময়ের অভাবে ক্ষান্ত দিতে হচ্ছে।

শুক্রবার আসরের দ্বিতীয় দিন গাইবেন মাছরাঙা টিভির রিয়ালিটি শো ম্যাজিক বাওলিয়ানার শিল্পীরা। আসর মাতাতে আরো থাকছেন বাউল ভজন ক্ষ্যাপা, স্বপ্নিল সজীব ও রূপা এবং আজগর আলীম, জহির আলীম ও নূরজাহান আলীম। গাইবেন নাশিদ কামাল, বারী সিদ্দিকী, অর্ণব অ্যান্ড ফ্রেন্ডস, মমতাজ বেগম, ভারতের পবন দাস বাউল, নূরান সিস্টার্স এবং চীনের ইউনান আর্ট ট্রুপ।