সুন্দরবনে ফের দেখা গেল ‘বাংলার বাঘ’

কেওড়া পাতার ফাঁকে হলুদ প্রাণিটি দেখে বিস্ময়ে ‘থ’ হয়ে যাওয়ার ঘোর কেটেছে বাঘ… বাঘ… চিৎকারে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সুন্দরবনে আবারও দেখা মিলেছে বেঙ্গল টাইগারের।  

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2022, 04:37 PM
Updated : 2 April 2022, 04:37 PM

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনের কটকা অভয়ারণ্য এলাকার খালের পাশে একটি গাছের ডালে আয়েশ করে বসে থাকা বাঘটির দেখা পেয়েছেন একদল আলোকচিত্রী।

সাতজনের এই দলটি গত বুধবার সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের শরণেখোলা রেঞ্জে ছবি তুলতে যান। পরদিন ট্রলারে ঘুরতে বেরিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে গন্তব্য থেকে খানিকটা সরে গিয়েছিলেন।

ঢেউয়ের তোড় থেকে বাঁচতে নিরাপদ একটি খালে ঢুকে পড়ার পর পাখির ছবি তোলার কথা ভাবছিলেন সবাই। গাছের ডালে নজর বুলিয়ে এগুতে গিয়ে হঠাৎ দৃষ্টি আটকে যায় ডোরাকাটা দাগে।

এ দলেরই সদস্য বন্যপ্রাণি আলোকচিত্রী ফরিদী নুমান শুক্রবার নিজের তোলা বাঘের একটি ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করে তুলে ধরেছেন বিরল সে অভিজ্ঞতা।

তিনি লিখেছেন, “সুন্দরবনে কটকা’র সমুদ্রের মোহনায় ঢেউয়ের তোড় না থাকলে বোট নিয়ে এই খালটিতে আমাদের ঢুকতে হতো না। কটকা অফিস পাড়াতেই বিকেলে নামার পরিকল্পনা ছিল।

ছবি: ফরিদী নুমান

“খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রায় ১০ কিলোমিটার সরে এসেছি আমরা। তাই আশে-পাশে ট্রলারে ঘুরছিলাম পাখি খুঁজতে।”

প্রথম একটি শাখা খালে ঢুকেই এই আলোকচিত্রী দেখা পেয়ে যান ‘খয়রাপাখ মাছরাঙা’ বা ‘বাদামি মাছরাঙা’র যার ইংরেজি নাম ‘ব্রাউন-উইংড কিংফিশার’।

পেয়েছেন ‘সাত সহেলি’ বা ‘স্মল মিনিভেট’, ‘ক্ষুদে কাঠঠোকরা’ বা ‘স্পেকলেড পিকুলেট’ ছাড়াও আরও কিছু ছোট পাখি। খানিক পরে আরেকটি খাল ছেড়েই দেখতে পান রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

“শাখা-খালটি থেকে বেরিয়ে বাঁয়ের আরেকটি খালে ঢোকার চেষ্টা করলাম, পানি কম থাকায় সেখান থেকেও বেরিয়ে এসে ডানদিকে কিছুদূর এগোনোর পর কেওড়া পাতার ফাঁকে গাঢ় হলুদ বাঘটিকে দেখতে পাই।

“প্রথম কয়েক সেকেন্ড নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। সত্যিই কি বাঘ দেখছি? একটু পরেই মো. তানজির এইচ রুবেল চিৎকার করে উঠলেন, বাঘ... বাঘ... বাঘ।”

ছবি: ফরিদী নুমান

ফেইসবুকে ফরিদী নুমানের বর্ণনায় এমন নাটকীয়ভাবেই এসেছে সুন্দরবনে হঠাৎ করে দেখা মেলা বাঘ।

“খালের পাড়ে বেশিরভাগই কেওড়া গাছ। মাঝে পানিতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা বাইন গাছের ওপর খুব আয়েশি ভঙ্গিতে ছিল আহ্লাদি এক রাজকুমার, আমাদের প্রিয় বেঙ্গল টাইগার, বাংলার বাঘ।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক ড. মনিরুল এইচ খান জানিয়েছেন বাঘটি বয়সে তরুণ। এই অধ্যাপকের পিএইচডি থিসিসের বিষয় ছিল সুন্দরবনের বাঘের জীবন ও পরিবেশ।

এর আগে ১২ মার্চ সুন্দরবনে পরিবার নিয়ে বেড়াতে গিয়ে কটকা অভয়ারণ্য এলাকার ছিটা কটকার খালে এক সঙ্গে চারটি বাঘের দেখা পেয়েছিলেন একদল চিকিৎসক।

দুই সপ্তাহের মধ্যেই খুব কাছ থেকে বাঘের দেখা পাওয়ায় সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বেড়ে গেল কি না, এমন প্রশ্ন ছিল বাঘ নিয়ে দীর্ঘ সময় গবেষণা করা অধ্যাপক মনিরুল এইচ খানের কাছে।

তিনি বলেন, “ব্যাপারটি সেরকম নয়, একটি বিশেষ এলাকায় কয়েকটি বাঘ দেখে এমন ধারণা পোষণ করা ঠিক হবে না। কারণ ভারতের সুন্দরবনে টাইগার সাইটিং এলাকাগুলোতে অনেক বাঘ দেখা যায়,

“তার মানে সেখানে বাঘ বেড়ে গেছে এটা বলা যাবে না। বাঘের সংখ্যা আসলেই বেড়েছে কি না বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গণনা করেই তা জানা সম্ভব।”