নববর্ষে আতশবাজি, ‘মাশুল গুনল’ ঢাকার বাতাস

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বায়ুমান পর্যবেক্ষণে রোববার ঢাকার পরিবেশ ছিল চরম দূষিত। বায়ুমান সূচকে (একিউআই) বেলা ১টায় রাজধানীর অবস্থান ছিল ২৪৭, যাকে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ‌্যকর’ বলা হয়। ‘জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতার’ এমন পরিস্থিতিতে পুরো জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হতে পারে। এসময় শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্তদের ও শিশুদের খোলা আকাশের নিচে বের হতে মানা করা হয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2022, 04:08 PM
Updated : 3 Jan 2022, 05:47 AM

এমন মারাত্মক বায়ু দূষণের পেছনে নতুন বছর উদযাপনে ফোটানো আতশবাজির অবদান রয়েছে বলে মনে করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রধান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত পাঁচ বছরে নতুন বছরের আগের রাত থেকে পরের রাত ঢাকার বায়ু দূষণ ৩৩ শতাংশ বেড়ে যায় বলে তারা জরিপে দেখেছেন।

তিনি বলেন, এসময় শব্দ দূষণও বাড়ে। থার্টিফাস্ট নাইটে ১১টা থেকে ১টার মধ্যে শোরগোলের (নয়েজ) পরিমাণ বেড়েছে ১১৩ শতাংশ।

শুকনো মৌসুমে ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে এমনিতেই বাতাসের মান খারাপ থাকে। এর মধ্যে আতশবাজি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, “এবার রাত ১০টার পর থেকে আতশবাজি পোড়ানো শুরু হয়। রাত ১১টা পর্যন্ত চারদিক থেকে মুহুর্মুহু আতশবাজির শব্দ শুনেছেন ঢাকার মানুষ। ১২টার দিকে পুরো শহরই তো কেঁপে কেঁপে উঠেছিল।”

ঢাকায় এবারের মতো আতশবাজি আর ফানুস দিয়ে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন আগে কখনো দেখা যায়নি বলে মনে করেনপরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, আতশবাজির শব্দে ঢাকার পাখিরাও ভয় পেয়েছে এরকম তথ্য দিয়েছেন অনেকে। এখানে প্রচুর অসুস্থ মানুষ থাকে, আতশবাজির প্রচণ্ড শব্দ তাদের অস্বস্তি তৈরি করেছে, ঘুমের ব্যঘাত ঘটিয়েছে, শিশুরা ভয় পাচ্ছে। আর ফানুসগুলো অগ্নিঝুঁকি তৈরি করছে।

‘নির্দিষ্ট জোন’ চান ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক

এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ উদযাপনের জন্য এলাকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর রাতে ফানুস সংক্রান্ত অগ্নিকাণ্ডের খবর দিতে ১০টি ফোন এসেছিল। দুটিতে সরাসরি গিয়ে আগুন নেভাতে হয়েছে। বাকিগুলো স্থানীয়ভাবে নেভানো হয়েছে।

এবিষয়ে কোনো বিধিনিষেধের চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “আমি বলতে চাই না সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া হোক। তবে ফানুস উড়ানো বা আতশবাজির জন্য ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট জোন করা যেতে পারে অথবা নিরুৎসাহিত করতে হবে।”

“বন্ধ করে দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। ফানুস উড়ানো নিষিদ্ধ করলে তারা অন্য কিছু উড়ানোর চেষ্টা করবে। সীমিত আকারে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে ব্যক্তিগতভাবে না করে সরকারিভাবে করা যেতে পারে।”