স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় চলমান বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) বুধবার দুই দেশের পক্ষ থেকে আকস্মিক এ ঘোষণা আসে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
বিরল এব যৌথ ঘোষণায় দুই দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, বাতাসে কার্বন গ্যাসের নির্গমন কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে চলতি দশকেই আরও উদ্যোগ নেবে তারা।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখার জন্য কার্বন গ্যাস নির্গমন কমানোর যে অঙ্গীকার দেশগুলো করেছিল, সে কথা স্মরণ করে ‘একসঙ্গে কাজ করার’ প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
ওই লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টার যে ঘাটতি রয়ে গেছে, তাও পূরন করার প্রতিশ্রুতি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যৌথ ঘোষণায়।
শক্তি তৈরির জন্য যখন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হয়, সেখান থেকে বাতাসে মেশে বিভিন্ন কার্বন গ্যাস, এর বেশিরভাগটাই কার্বন ডাইঅক্সাইড। এসব গ্যাস সূর্যের আলো থেকে তাপ ধরে রাখে। ফলে বাড়তে থাকে পৃথিবীর তাপমাত্রা।
এই বাড়তি তাপমাত্রাই বদলে দিচ্ছে জলবায়ু, এক দিনে বরফ গলে যাচ্ছে, আরেক দিকে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। চরম আবহাওয়া ডেকে আনছে মৃত্যু আর ধ্বংস।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনকারী দেশের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে চীন আর যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন করছে, চীন বাতাসে ছড়াচ্ছে তার দ্বিগুণ গ্যাস। তবে ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি গ্যাস নির্গমন ঘটিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ।
জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলায় কার্বন গ্যাস নির্গমন কমানোর কোনো উদ্যোগই সফল হবে না, যদি এই দুটো দেশকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করা না যায়। তবে নানা ক্ষেত্রে দুই দেশের ভিন্ন অবস্থান এবং সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে এবারের সম্মেলনেই এরকম একটি যৌথ ঘোষণার প্রত্যাশা কেউ করেননি।
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঠিক কী সমঝোতা হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যৌথ ঘোষণায় যে প্রতিশ্রুতি দুই দেশ দিয়েছে, সেখানেও আহামরি কিছু নেই। কিন্তু দুই দেশ যে একটি সমঝোতায় আসতে পেরেছে, সেটি একটি বড় ঘটনা।
দুই দেশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, জলবায়ু সম্মেলনে আসা যৌথ ঘোষণাটি চীনের শীর্ষ জলবায়ু দূত শি জেনহুয়া এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু দূত জন কেরির গত কয়েক মাসের দফায় দফায় বৈঠকের ফসল। গ্লাসগোতে এসেও প্রায় প্রতিদিনই তারা বৈঠকে বসেছেন।
শি জেনহুয়া সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতভিন্নতা যা রয়েছে, তার চেয়ে মতৈক্যই বেশি।
আগামী সপ্তাহেই একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের।
বুধবারের যৌথ ঘোষণায় মিথেন গ্যাস নির্গমন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে এসে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো এবং কার্বন নির্গমন রোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে যৌথ পদক্ষেপ নিতে সম্মত হওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।
জন কেরিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে মতপার্থক্যের ‘অভাব নেই’। কিন্তু জলবায়ুর সঙ্কট নিরসনে সহযোগিতাই ‘একমাত্র উপায়’।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন কতটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছে, তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইংগিতটি পাওয়া যায় ‘জয়েন্ট ডিক্লারেশন অন এনহেন্সিং ক্লাইমেট অ্যাকশন ইন দি টোয়েন্টি টোয়েন্টিস’ শীর্ষক ওই যৌথ ঘোষণার শিরোনামের শেষ অংশে।
কারণ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি সত্যি সত্যি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখতে চাইলে আগামী এক দশকে কার্বন নির্গমন কতটা কমিয়ে আনা হবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।