জলবায়ু সম্মেলন: অনৈতিক হস্তক্ষেপ’ বন্ধে টিআইবির সুপারিশ

জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর ‘অনৈতিক হস্তক্ষেপ’ বন্ধ করতে নীতি নির্ধারণের জন্য এবারের জলবায়ু সম্মেলেন বাংলাদেশকে সরব হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2021, 04:37 PM
Updated : 28 Oct 2021, 04:38 PM

আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী এ সংগঠনটি বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসার ও প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিতের’ সুপারিশ তুলে ধরে।

আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে বসছে এবারের জলবায়ু সম্মেলন, যা সংক্ষেপে কপ-২৬ নামেই পরিচিতি পেয়েছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের কারণে পৃথিবী উষ্ণ থেকে উষ্ণতর হয়ে উঠছে। এর প্রভাবে বাড়ছে চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া; দাবদাহ, বন্যা ও দাবানলের মতো ঘটনা এবং তীব্রতাও বাড়ছে।

এই বাস্তবতা সামনে রেখে গ্লাসগো সম্মেলনের আগে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু সুপারিশ উপস্থাপন করেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাহফুজুল হক।

২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে শতভাগ জ্বালানি উৎপাদনের লক্ষ্যে উন্নত দেশগুলোকে পর্যাপ্ত জলবায়ু তহবিল, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও কারিগরি সহায়তা দিতে চাপ সৃষ্টির জন্য ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের’ পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে দাবি তোলার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় আলাদা তহবিল গঠন, ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির নীতিমালা প্রণয়ন, ঝুঁকি বিনিময়ে বীমার পরিবর্তে অনুদানভিত্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও সুপারিশ করেছে টিআইবি।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে উন্নত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে শূন্যে নামিয়ে আনার ‘নেট জিরো’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নত দেশগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

কপ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ কার্বন নির্গমন কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। নির্গমন কমানোর কাজে ব্যবহারের জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল তৈরি করার প্রতিশ্রুতি এসেছিল প্যারিস সম্মেলনে।

বৈশ্বিক উষ্ণতা যাতে প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে এবং সম্ভব হলে প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার মধ্যে রাখা যায়, তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতেও রাজি হয়েছিল দেশগুলো।

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্বে থাকায় কপ-২৬ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে একটি আইনি সমঝোতা করার জন্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ফোরামের নেতৃত্বে থাকায় এ সম্মেলনে বাংলাদেশের ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’ রাখার সুযোগ রয়েছে।

“জলবায়ু বিষয়ক নীতি-নির্ধারণে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর অনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, জাপানের মত প্রভাবশালী দেশগুলো আইপিসিসির (ইন্টারগভর্নমেনটাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) সুপারিশ প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে- এর প্রতিবাদ করা উচিত।”

গত ২২ অক্টোবর জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা নিয়ে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন বদলে দিতে এসব দেশ চেষ্টা করছে জানিয়ে এ সংক্রান্ত একটি ফাঁস হওয়া নথি পাওয়ার কথা জানায় বিবিসি।

সেখানে দেখা যায়, দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে দ্রুত সরে আসার প্রয়োজনীয়তাকে কম গুরুত্ব দিয়ে দেখানোর জন্য জাতিসংঘকে অনুরোধ জানাচ্ছে। এছাড়া, সম্পদশালী কয়েকটি দেশ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য গরিব দেশগুলোতে অর্থায়নের বিষয়েও প্রশ্ন তুলছে।

টিআইবির প্রতিবেদনে জীবন-জীবিকা ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ কৌশলগত পরিবেশের প্রভাব নিরুপণ করে এগোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

দেশে কয়লাভিত্তিক কমিয়ে আনার পরিকল্পনা নেওয়া উচিত জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার আছে। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। এর এছনে জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোর লবি থাকতে পারে। আবার দক্ষতার অভাবও থাকতে পারে।”

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশে তালিকায় থাকা বাংলাদেশকে দূষণকারী দেশগুলোর উপর চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি দেশে ‘স্ববিরোধী কার্যক্রম’ না চালানোরও তাগিদ দেন তিনি।

প্রস্তাবিত ‘ইন্ট্রিগেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যানে’ সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে বলেছে টিআইবি। এক্ষেত্রে জ্বালানি খাতে ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের’ বাদ দিয়ে অন্তর্ভূক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে টিআইবি।

আরও পড়ুন: