ওই প্রকল্পের জন্য জমি বরাদ্দ আদালত আপাতত স্থগিত করলেও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বলছে, তারা দেখতে চায় বনের জমিতে স্থাপনা নির্মাণের জন্য কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হল।
সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ঝিলংজা বনভূমির ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়।
প্রতিবেশগতভাবে সঙ্কটাপন্ন ওই স্থানে সরকারি প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিরোধিতা স্থানীয় পর্যায়েও হচ্ছিল।
২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বঙ্গবন্ধু একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নির্মাণের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে অনাপত্তিপত্র চায়; সংস্থাটি ওই বছরই বিভিন্ন শর্তে অনাপত্তিপত্র দেয়।
ওই এলাকাকে ১৯৩৫ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮০ সালে এটাকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা ঘোষণা হয়। ২০০১ সালে দেশের বনভূমির যে তালিকা করা হয়, তাতেও ঝিলংজা মৌজা বনভূমি হিসেবে আছে।
১৯৫০ সালের ‘স্টেট একিউজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্টেও’ বলা হয়েছে বনের জমি ‘নন-রিটেইনেবল’। অর্থাৎ বনের জমি কোনো সংস্থা বা ব্যক্তির ধরে রাখার সুযোগ নেই। ১৯২৭ সালের ফরেস্ট অ্যাক্টেও বলা হয়েছে, সংরক্ষিত বনভূমি বন বিভাগের নামে খতিয়ানভূক্ত হবে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওই প্রকল্প বাতিলের সুপারিশ করা হয়। মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
গত ১১ অক্টোবর হাই কোর্ট ওই জমি বরাদ্দ স্থগিত করে। আদারত একটি রুলও দিয়েছে, চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই জমিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্পের আওতায় সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ১০০ একর সৃজিত বাগান রয়েছে; ২০-২০০ ফুট পর্যন্ত বিভিন্ন উচ্চতার পাহাড় রয়েছে।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গর্জন, চাপালিশ, তেলসুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে ওই এলাকায়। এলাকাটি হাতি, বানর, বন্য শূকর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ ও পাখির আবাসস্থল।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই এলাকায় প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ‘মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ।
তারপরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে; যদিও বন অধিদপ্তর প্রায় শুরু থেকে এই জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা সবসময় বলে আসছি, প্রশাসনের জন্য একাডেমি নির্মাণ হোক, তবে যে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেখানে নয়।
“আদালত এই বরাদ্দ স্থগিত করেছে। এটা এখন আদালত যে বিষয়টা দেখছে, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো কথা নেই। কিন্তু আমরা দেখতে চাই, এই যে সংরক্ষিত বনভূমি, সেটা ভূমি মন্ত্রণালয় কীভাবে বরাদ্দ দিল? এটা তো ভূমি মন্ত্রণালয়েরই জমি নয়। তাহলে কী ঘটলো? সেটাই সংসদীয় কমিটি খুঁজে দেখবে।”
সাবের হোসেন বলেন, “যদি কেবল জমির দাগ ও খতিয়ান দেওয়া হয় এবং ভূমির আকার ও প্রকৃত বর্ণনা না করে, তাহলে এটা হতে পারে। আমরা মনে করছি সেটাই হয়েছে। এটা আমরা দেখবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে যে অনুমতি এসেছে, সেই দপ্তরও হয়ত এই বিষয়টি পুরোপুরি জানে না।”
সাবের বলেন, “সংরক্ষিত বন হিসেবে এই জমির মালিক জেলা প্রশাসন। আর এ জমি কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্তযোগ্য নয় বলে রিমার্ক থাকে। অর্থাৎ এই জমি কোনো অবস্থাতেই বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে না। কাজেই এই জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার সুযোগ নেই।”