-
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগারের পর চিত্রা হরিণের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। পর্যটকদের জন্য সেখানে বাঘের দেখা পাওয়া কঠিন হলেও হরিণের বিচরণ সর্বত্র। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে চিত্রা হরিণের সংখ্যা এক থেকে দেড় লাখের মতো।
-
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে খুব কাছ থেকে হরিণ দেখা যায়। ভাটার সময় সেখানে দলে দলে হরিণ, বানর আর বন্য শুকরেরা খাবারের খোঁজে নামে বলে পর্যটকদের আনাগোনাও বেশি থাকে। মহামারীর বিরতিতে সেই উপদ্রব না থাকায় হরিণের বিচরণ আরও বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। কটকার অফিস পাড়ের এই কেওড়া বনে নভেম্বরের মাঝামাঝি দুই দিন অবস্থান করে খুব কাছে থেকে দেখা গেছে মাত্র একটি চিত্রা হরিণ।
-
কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ট্রেইলের একেবারে পেছন দিকে অনেক দূর থেকে কিছু হরিণ দেখা গেলেও তাদের সন্ত্রস্ত মনে হয়েছে। অথচ এখানে পর্যটকরা খুব কাছে থেকেই সবসময় দলে দলে হরিণ দেখতে পেতেন।
-
কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের টাইগার টিলা লাগোয় এই প্যারাবনে ভাটার সময় রীতিমত হরিণের মেলা দেখা গেছে গত জানুয়ারি মাসেও। অথচ নভেম্বরে হরিণের দেখা মিলছে হাতে গোনা কয়েকটি।
-
কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ওয়াচ টাওয়ারের নিচে এই ঘাস বনে সকাল-বিকাল দলে দলে হরিণের বিচরণ দেখা যায়। এবার চুপিসারে ওয়াচ টাওয়ারে বসে থেকেও হরিণের দেখা মিললো না সেভাবে।
-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলছেন, কটকায় হরিণের সংখ্যা কমতে পারে দুটি কারণে। প্রথমত চোরা শিকার, দ্বিতীয়ত রোগবালাই। রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাবে হরিণ মারা পড়তে থাকলে সেটি জানা সহজ ছিল, কিন্তু তেমন কিছু ঘটেনি। সে কারণে অধ্যাপক মনিরুলের সন্দেহ চোরা শিকারীদের নিয়ে।
-
বরগুনার বিভিন্ন এলাকা থেকে বলেশ্বর ও বঙ্গোপসাগর হয়ে সহজেই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারে চোরা শিকারীরা। মহামারীর মধ্যে সুন্দরবনে মানুষের আনাগোনা কম থাকায় চোরা শিকারীরা সেই সুযোগটি নিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অধ্যাপক মনিরুল।
-
মহামারীর কারণে আট মাস সুন্দরবনে পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ১ নভেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞা ওঠার দিনই কটকা অভয়ারণ্যে গিয়েছিলেন বন্যপ্রাণী আলোচিত্রীদের দুটি দল। কমপক্ষে পনের জন আলোকচিত্রী সেখানে দুইদিন অবস্থান করেও হরিণের দেখা খুব একটা পাননি বলে জানিয়েছেন ।
-
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ফরিদী নুমান লকডাউন শুরুর আগেই কটকা অভয়ারণ্যে গিয়ে শত শত হরিণের দেখা পেয়েছিলেন। কিন্তু নভেম্বরের শুরুতে সেখানে গিয়ে অনেকটা হরিণশূন্য কটকা চিন্তায় ফেলেছে তাকে। তিনি বলেন, কটকার হরিণগুলো পর্যটকদের দেখে অভ্যস্ত, বিচলিত না হয়েই অনেকটা কাছাকাছি চলে আসত। কিন্তু এবার যে গুটিকয় হরিণের দেখা তিনি পেয়েছেন, সেগুলো ছিল অনেকটাই সন্ত্রস্ত।
-
কটকায় হরিণ এবার কম কেন জানতে চাইলে ফরেস্ট অফিসের এক বনরক্ষী বললেন, “হরিণ তো অনেক আছে, আপনাদের দেখে দূরে চলে গেছে।” নাম জানতে চাইলে আর কোনো কথা না বলেই তিনি চলে গেলেন।
-
কটকায় হতাশ হতে হলেও শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি এলাকার জঙ্গলে খুব কাছে থেকেই দেখা গেল দলে দলে হরিণ।
-
কোকিলমনি এলাকার একটি খালের পাড়ে খাবার খাচ্ছিল হরিণগুলো। পর্যটকদের আনাগোনা তারাও পর্যবেক্ষণ করছিল উৎসুক দৃষ্টিতে।
-
কোকিলমনির বনে পুরুষ এই হরিণটি খুব কাছে দাঁড়িয়েই দেখে নিল বাইরে থেকে আসা মানুষগুলোকে।
-
সুন্দরবনের কোকিলমনি জঙ্গলে উৎসুক হরিণ, সামনেই নদীর চরে রৌদ্রস্নানে তার চিরশত্রু লোনা পানির কুমির।
-
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের তাম্বুলবুনিয়া এলাকার বনে হরিণ দেখা গেল আগের মতই। পর্যটকের সাড়াশব্দে ঘন জঙ্গলের ভেতর থেকে উঁকিঝুকি মারতে দেখা যায় তাদের।
-
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হারবারিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের ট্রেইলের পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকা চিত্রা হরিণের দল। লকডাউনের অবসরে এ জায়গায় বন্যপ্রাণীর বিচরণ বেড়েছে।
মহামারীর মধ্যে প্রায় আট মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি জঙ্গলে দলে দলে চিত্রা হরিণের দেখা মিললো। কিন্তু যে কটকা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে হরিণের বিচরণ থাকে সবচেয়ে বেশি, সেখানে এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র।