দিল্লিতে দূষণ: বাড়ছে ফুসফুসের রোগ

ভারতের রাজধানী দিল্লির হাসপাতালগুলোতে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বায়ুদূষণকে যার প্রধান কারণ বলছেন চিকিৎসকরা। অতিরিক্ত বায়ুদূষণ কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলতে পারে বলে শঙ্কা তাদের।

>>রয়টার্স
Published : 23 Oct 2020, 11:56 AM
Updated : 23 Oct 2020, 11:57 AM

দিল্লির পাঁচটি আলাদা আলাদা হাসপাতালের চিকিৎসকরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, গত দুই সপ্তাহে ব্রঙ্কাইটিসের মত ফুসফুসের রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

প্রতি শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় ধূলা ও ধোঁয়া মিশে দিল্লির বাতাস মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়ে। সে সময় বাসিন্দাদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যাও বেড়ে যায়। তবে সরকারি ডেটা অনুযায়ী, গত দুই বছরের তুলনায় এবছর অক্টোবর মাসে দিল্লির বাতাসে দূষণের পরিমান বেশি।

করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই সময়ে বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়া ভারতের জন্য নিশ্চিত ভাবেই একটি দুঃসংবাদ। কারণ, বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাতেই বায়ুদূষণের সঙ্গে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে দিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট ধীরেন গুপ্তা বলেন, ‘‘বাতাসে দূষণের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা ফুসফুসে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি করে, যেমনটা কোভিড-১৯ এর কারণে হয়।”

দিল্লিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে বায়ুদূষণের কারণে ওই সব রোগীদের শারীরিক জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত ভারতে কোনো গবেষণা হয়নি।

কিন্তু হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে,  প্রতি ঘনমিটার বাতাসে অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা- পিএম ২.৫- এক মাইক্রোগ্রাম বৃদ্ধিতেই করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার ৮ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে।

রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ হেমা গুপ্তা বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ফুসফুসের নানা জটিলতা নিয়ে আগের থেকে অনেক বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। এখন তাদেরও কোভিড-১৯ পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।”

সবচেয়ে দূষিত বাতাসের নগরীর তালিকায় বরাবরই দিল্লির অবস্থান উপরের দিকে। কিন্তু করোনভাইরাসের প্র‍াদুর্ভাবের কারণে এ বছরের শুরুর দিকে ভারতে লকডাউন জারি করা হলে দিল্লির বাতাসে দূষণের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণ কমে গিয়েছিল।

কিন্তু সে অবস্থা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। লকডাউন শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দূষণ বাড়তে থাকে, গত দুইমাসে যা আবারও মারাত্মক রূপ নিয়েছে।

দিল্লিতে পিএম ২.৫ এর মাত্রা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতি ঘনমিটারে গড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ -৩০০ মাইক্রোগ্রামে। এ মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১২ গুণ বেশি।

কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। বর্তমানে দেশটিতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৭ লাখ ৬১ হাজারের বেশি। মৃত্যুর দিক থেকেও দেশটি তৃতীয়-সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে। সেখানে শুক্রবার পর্যন্ত ১ লাখ ১৭ হাজার ৩০৬ জন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

ভারতে মহামারীর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত নগরীর অন্যতম দিল্লি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়লে এ সংখ্যা কেবলই বাড়বে। তাই বিপর্যয় এড়াতে গেলে কমাতে হবে বায়ুদূষণ।

দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই বলেন, নির্মাণক্ষেত্রগুলোতে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে এবং বাতাসে ধূলা ছড়াতে পারে এমন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দিল্লি সরকার বাতাসে দূষণ কমাতে কাজ করছে।