বিপন্ন পাহাড়ি কচ্ছপ বাড়ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়

হলুদ শরীরের ভেতর থেকে হঠাৎ হলদেটে মাথা বের করে এদিক সেদিক দেখে, চোখ দুটো কালো রঙের। পিঠের ওপর খোলসের হলদে কালো কালো ছোপ।

মিঠুন চৌধুরীমিঠুন চৌধুরী চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Sept 2020, 03:56 AM
Updated : 8 Sept 2020, 03:56 AM

এক পশলা বৃষ্টির পর রোদ উঠেছে; বড়দের নড়াচড়া কম। খাবার নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যেই ছোটরা রোদের খোঁজে চলেছে খাঁচার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।

কচ্ছপের ছোট খাঁচাটা চিড়িয়াখানায় প্রবেশপথের ডানপাশে সীমানা দেয়ালঘেঁষা। সেখানে তেমন ভিড় নেই, কয়েকজন শিশু উঁকি দিয়ে দেখছে ব্যতিক্রমী কচ্ছপগুলোকে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এই খাঁচাতেই বাড়ছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত অতি বিপন্ন এই ‘হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ’ পরিবার।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে চট্টগ্রামের কোনো পাহাড়ি অঞ্চল থেকে তিনটি হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ আনা হয়েছিল চিড়িয়াখানায়।

“এর মধ্যে ২০১৩ সালের শেষ দিকে চারটি কচ্ছপের বাচ্চার জন্ম হয়। এখন মোট সাতটি হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ আছে। যার মধ্যে চারটি পুরুষ আর তিনটি মেয়ে। তিনটি বড় কচ্ছপের বয়স ২০ বছরের মতো। ছোটগুলোর বয়স সাত বছর প্রায়।”

তবে ২০১৩ সালের পর আর ডিম দেয়নি কচ্ছপগুলো। হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপের ইংরেজি নাম Elongated tortoise আর বৈজ্ঞানিক নাম Indotestudo elongata

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেটের চিরসবুজ বনে এদের দেখা মেলে। পাহাড়ি ঘন বন, ঝোঁপঝাড় ও ছড়ার আশেপাশে থাকে। কিন্তু অন্য কচ্ছপের মতো পানিতে নয় বরং ডাঙাতেই বেশিরভাগ সময় কাটে তাদের।

বাংলাদেশে ছাড়াও ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড উপদ্বীপ, মালয়েশিয়া, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ চীন অঞ্চলে এদের বাস।

আইইউসিএনের ২০১৫ সালের তালিকায় লাল তালিকাভুক্ত বিপন্ন এই হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ। ২০২০ সালের তালিকা অনুসারে এরা অতি বিপন্ন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‍“বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আগে এদের দেখেছিলাম। এরা সংখ্যায় খুবই কম হওয়ায় ইদানিং সচরাচর চোখে পড়ে না। এরা মূলত ডাঙাবাসী কচ্ছপ।”

হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপের বৃদ্ধি ধীরে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে বংশবৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে আমরা গবেষণা ও বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারব। স্বাভাবিক চলাফেরার সুযোগ পেলেও এদের বংশবৃদ্ধি ঘটবে।”

প্রাপ্ত বয়স্ক হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ তিন থেকে চার কেজি ওজনের হয়। সদ্য ফোটা বাচ্চারা চার সেন্টিমিটার লম্বা আর ওজন হয় ৩৫ গ্রামের মতো।

এদের প্রজননকাল মে থেকে অক্টোবর। স্ত্রী কচ্ছপ প্রতিবারে দুই থেকে চারটি ডিম দেয়। ১৩০ থেকে ১৯০ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

হলুদ পাহাড়ি কচ্ছপ শাকসবজি, কচি পাতা, ফলমূল, খোলস ছাড়া শামুক, মাংস, ডিম, পোকামাকড় আর ছত্রাক খায়।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. রুহুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিপন্ন প্রজাতির এই কচ্ছপ সংরক্ষণ করতে পেরে আমরা খুশি। কীভাবে এদের সংখ্যা আরও বাড়ানো যায়, সেজন্য আমরা উদ্যোগ নেব।

“বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিলে অবশ্যই তা অনুসরণ করা হবে। এই প্রজাতির কচ্ছপের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটাতে পারলে সেটাই হবে সাফল্য।”

এই প্রজাতির পুরুষ কচ্ছপ চার বছরে আর স্ত্রী কাছিম ছয়-আট বছরে বয়োঃপ্রাপ্ত হয়।

চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত বলেন, এই কচ্ছপদের জন্য একটা বড় খাঁচার পরিকল্পনা করে আগেই স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল। করোনাভাইরাস সঙ্কটের কারণে আর খাঁচা তৈরি সম্ভব হয়নি। এখন কাজ শুরু হবে।

“২০১৩ সালে জন্ম নেয়া কচ্ছপগুলো বয়োঃপ্রাপ্তির কাছাকাছি সময়ে আছে। এগুলো থেকে ডিম ও বাচ্চা পাওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি সফল হব।”

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বিরল সাদা বাঘসহ, সিংহ, এশিয়ান ভালুক, মিঠাপানির কুমির, আফ্রিকান জেব্রা, গয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ ও নানা রকম দেশি-বিদেশি পাখি আছে।