শস্যখেকো এই পোকার দল নিয়ে এখন আলোচনাও করতে চান না বাংলাদেশের কৃষি কর্মকর্তারা; তাদের ভয়, এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে পারে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ দিক থেকে আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া ও সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে পঙ্গপাল।
এ বছরের শুরু থেকে পঙ্গপাল নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির সরকার গত ৩১ জানুয়ারি এনিয়ে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। পঙ্গপাল সামাল দিতে চীন থেকে বিশেষ ধরনের হাঁসও আনতে যাচ্ছে দেশটি।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের ২২ হাজার একর জমির ফসল ধ্বংস করে ভারতের পাঞ্জাবেও আক্রমণ করে পঙ্গপালের ঝাঁক।
শস্যখেকো এই পতঙ্গের দল আরও পূর্বে সরে বাংলাদেশেও আসতে পারে কি না- তা জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখার পরিচালক ছাব্বির বিন জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পঙ্গপাল বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বার্তা তারা পাননি। তাই এখনই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করাটা তারা সমীচীন মনে করছেন না।
তবে ছাব্বির গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের একটি চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে পঙ্গপালের আক্রমণ সংক্রান্ত সতর্কতা এবং প্রস্তুতি রাখার জন্য।
তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছিল, “আমাদের আশঙ্কা পাকিস্তান ও ভারতের পর বাংলাদেশেও আসতে পারে এই পঙ্গপাল। তবে আমরা যতটা বুঝতে পারি এ বছরে তেমন ঝুঁকি নাই, কিন্তু আগামী বছরের জন্য আমাদের সতর্ক হতে হবে।”
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, যেহেতু পঙ্গপালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বাতাসের উষ্ণতার গতি অনুযায়ী এরা চলাফেরা করে এবং এক জায়গার খাবার ফুরালেই নতুন জায়গার খোঁজ করে তারা, সে কারণে বাংলাদেশেও আক্রমণ হতে পারে।
তার এক সপ্তাহ বাদে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে ভিন্ন কথা বলেন ছাব্বির।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মনে করি, পঙ্গপাল নিয়ে এখনই আলোচনা শুরু করা উচিৎ নয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের এখনও কিছু জানানো হয়নি।
“তবে সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে কৃষিকর্মীরা আছেন। তারা সব সময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।”
এ বছরের ৬ জানুয়ারি পঙ্গপাল নিয়ে একটি সতর্কতামূলক মানচিত্র প্রকাশ করে জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ।
সেখানে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, ইরিত্রিয়া ছাড়াও সুদান, কেনিয়া, সৌদি আরব, ইরান ও ওমানকে পঙ্গপাল আক্রান্ত দেশ হিসাবে দেখানো হয়।
পাশাপাশি ভারতীয় উপমহাদেশের পাকিস্তান ও ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে এর তীব্র আক্রমণের চিত্র দেখানো হয়।
কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ”এফএও এ বিষয়ে আমাদের সতর্কতামূলক কিছুই জানায়নি।
“তবে আমরা আমাদের দেশের দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখেছি যে, এখানে পঙ্গপালের আক্রমণের কোনো সম্ভাবনা নেই।”
কেন নেই- প্রশ্নে তিনি বলেন, “পঙ্গপাল শুষ্ক আবহাওয়ার প্রাণি; মরুভূমির প্রাণি। সে কারণে আমরা মনে করি, এখানে পঙ্গপালের আক্রমণের সম্ভাবনা নেই।”
পঙ্গপাল কী?
পঙ্গপাল আর ঘাসফড়িং দেখতে একই এরকম। দুটো ক্ষুদে শিংওয়ালা এই পতঙ্গটি আধা থেকে তিন ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাক্রিডিডে (Acrididae)।
একা থাকলে আচরণে ঘাস ফড়িংয়ের মতোই নিরীহ হয় এরা। কিন্তু ফসল ও প্রজননের মৌসুমে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়।
আর এই সময় এরা ‘দানবের মত ক্ষুধার্ত’ হয়ে ওঠে বলে জানাচ্ছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।
দল বেঁধে উড়তে উড়তে পঙ্গপাল পাড়ি দিতে পারে মাইলের পর মাইল। ১৯৫৪ সালে পঙ্গপালের একটি ঝাঁক উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকা থেকে গ্রেট ব্রিটেন পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। এরপর ১৯৮৮ সালে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে হানা দিয়েছিল এরা।
মরুর পঙ্গপালের একেকটি ঝাঁকের আকার হতে পারে ৪৬০ বর্গ মাইল। আর প্রতি আধা বর্গমাইলের একটি ঝাঁকে থাকতে পারে চার থেকে আট কোটি পতঙ্গ।
একেকটি পতঙ্গ প্রতিদিন নিজের ওজনের সমান ফসল খেতে পারে। আর পঙ্গপালের একটি ঝাঁক প্রতিদিন ৪২ কোটি পাউন্ডের বেশি ফসল সাবাড় করে দিতে পারে।
পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে এভাবে ক্ষেত উজাড় হলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে আক্রান্ত অঞ্চলে।
পাকিস্তানে পঙ্গপালের এবারের ‘অস্বাভাবিক’ আক্রমণকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল বলেও মনে করছেন অনেকে।
তবে মানুষ ও প্রাণীকে পঙ্গপাল আক্রমণ করেছে অথবা প্রাণীর শরীরে পঙ্গপাল থেকে রোগের বিস্তার ঘটেছে এমন কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানাচ্ছে এফএও।