তবে ২০১০ সালে বিশ্বের শেষ তালিপাম গাছটি মৃত্যুর আগে যে ফল দিয়ে গেছে, সেখান থেকে চারা তৈরি করে এই প্রজাতিকে নতুন জীবন দিয়েছেন বাংলাদেশের গবেষকরা।
দেখতে অনেকটা তাল গাছের মতই। শত বছরের জীবনে মাত্র একবার ফুল ও ফল দেয়। তারপরই মৃত্যু ঘটে তালিপাম গাছের।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর কোথাও আর বুনো পরিবেশে Corypha taliera বা তালিপাম আর দেখা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকা শেষ তালিপাম গাছটিও ফুল দিয়ে মারা যায় ২০১০ সালে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পিএইচডি গবেষণার জন্য দুর্লভ এবং ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ গাছের খোঁজ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের একটি বই থেকে তিনি বুনো তাল বা তালিপাম গাছের কথা জানতে পারেন। এই বুনো তাল পূর্ববাংলার স্থায়ী গাছ।
১৮১৯ সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলে তালিপাম গাছের সন্ধান পেয়েছিলেন ব্রিটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী উইলিয়াম রক্সবার্গ। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের পাশে ১৯৫০ সালে আরেকটি গাছ শনাক্ত করেন অধ্যাপক এম সালার খান।
সে সময় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে আরেকটি গাছ ছিল। সেই গাছে ১৯৭৯ সালে ফুল আসে। শতবর্ষী সেই গাছে হঠাৎ ফুল দেখে স্থানীয়রা চমকে যায়। ‘ভুতের আছর’ ভেবে ফল ধরার আগেই গাছটি কেটে ফেলেন তারা।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছটিকে বুনো পরিবেশে বিশ্বের একমাত্র তালিপাম গাছ হিসেবে ঘোষণা করে।
গাছটি লাগানো হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মের আগে। সে সময় ব্রিটিশ গার্ডেনার রবার্ট প্রাউডলক রমনা জোনকে সাজানোর দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা আসেন। এ এলাকায় তখন অনেক দুর্লভ গাছ রোপন করা হয়। গবেষক আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মতে, প্রাউডলকই হয়ত তালিপাম গাছটি রোপন করেছিলেন।
২০০৮ সালে এই গাছে ধরে মরণ ফুল। জীবনচক্র মেনে ফুল থেকে ফল হয়; ২০১০ সালে মারা যায় গাছটি। তবে মৃত্যুর আগে দিয়ে যায় অনেক ফল।
নীরবে সেই গাছ থেকে ৫ হাজার ফল সংগ্রহ করেন রসায়নের শিক্ষক আখতারুজ্জামান চৌধুরী। সেই ফলের বীজ থেকে তৈরি করেন ৩ শতাধিক চারা।
আখতারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১০ সালে ফল সংগ্রহ করে আমার বাসার বারান্দায় তালিপামের বীজ রোপন করলাম। একটি সন্তান জন্মদানের অনুভূতিই ছিল যখন আমি দেখলাম তিনটি তালিপামের চারা গজিয়েছিল আমার বাসার বারান্দায়।”
তার তৈরি তালিপামের চারা রোপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনসহ অনেকেই। আখতারুজ্জামান এই গাছের চারা ছড়িয়ে দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
তার কাছে এখনো কিছু বীজ রয়েছে। তা দিয়ে চারা বানিয়ে চলেছেন এখনো। তালিপাম নিয়ে গবেষণায় ইতোমধ্যে পেয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রি।
আখতারুজ্জামান বলেন, তালিপামের জীবনচক্র অনুসারে নতুন চারায় ২১১০ সাল নাগাদ ফের ফুল ফুটবে। সে দিয়ে যাবে নতুন বীজ।
এভাবেই বাংলা-আসাম অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতির এই গাছ ফের হাজার বছরের জীবনে প্রবেশ করবে বলে আশা করছেন এই গবেষক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর পর এই গাছে যখন ফুল-ফল আসবে, তখন অমরা থাকব না। তখন নতুন গবেষকরা এই ঔষধি গাছের ফুল-ফল নিয়ে আরো উন্নত গবেষণা করবেন। আমার এতটুকুই প্রত্যাশা”