পুড়ছে চিরহরিৎ আমাজন, পৃথিবীর ক্ষতি কতটা? 

বিপুল পরিমাণ কার্বন ধারণ করে বৈশ্বিক উষ্ণতার গতি খানিকটা শ্লথ রাখা বিশ্বের সবচেয়ে বড় চিরহরিৎ বনাঞ্চল আমাজন নিজেই এখন জ্বলছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2019, 08:10 PM
Updated : 24 August 2019, 03:30 AM

দাবানলে নিদারুণভাবে পুড়েছে ব্রাজিলের উত্তরের রোরাইমা, একর, আমাজোনাস এবং রোনডোনিয়া এলাকার বনাঞ্চল। কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, ব্রাজিলের একেবারে উত্তরের রাজ্য রোরাইমা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে আছে।

আমাজোনাস ও রোনডোনিয়া রাজ্যের বনে লাগা আগুনের ধোঁয়া দুই হাজার ৭০০ কিলোমিটারের বেশি পথ অতিক্রম করে সাও পাওলোতে পৌঁছানোর পর গত সোমবার বিকাল ৩টার সময়ই শহরটি ঘণ্টাখানেকের জন্য ডুবে ছিল অন্ধকারে।

আর বৃহস্পতিবার সাড়ে ৯ হাজারের বেশি জায়গায় আগুনের শিখা দেখার কথা জানিয়েছে ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্পেস রিসার্চ (ইনপে)।

ইন্টারনেটে ‘প্রে ফর আমাজনস’ হ্যাশট্যাগে দাবানলের বহু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। তবে এর সবগুলোই আমাজনের নয়। কোনো কোনো ঘটনা এক দশক আগের। কোনোটি আবার অন্য কোনো দেশের বলে জানিয়েছে বিবিসি। 

তবে গত এক দশকের মধ্যে এই বনাঞ্চলে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল। ইনপের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর রেকর্ড সংখ্যক দাবানলের ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলে।

তাদের স্যাটেলাইট ডেটা বলছে, এ সংখ্যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮৫ শতাংশ বেড়েছে।

ব্রাজিল সরকারের তথ্য অনুযযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসেই ৭৫ হাজার দাবানলের ঘটনা ঘটেছে ব্রাজিলের বনে। ২০১৩ সালের পর থেকে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজারের কম। 

জুলাই থেকে অক্টোবরে ব্রাজিলের বনাঞ্চলে দাবানলের ঘটনা স্বাভাবিক। বজ্রপাতের মত প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি গবাদিপশুর চারণভূমি বাড়াতে কাঠুরে ও কৃষকরাও কখনও কখনও ইচ্ছে করে আগুন লাগিয়ে দেয়। 

পরিবেশ সংরক্ষণবাদীদের অভিযোগ, ব্রাজিলের কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনেরোর মনোভাব বনের আগুনে ঘি ঢালছে। তিনি ব্রাজিলের ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে আমাজনের ক্ষতির পরিমাণও দ্রুত হারে হয়েছে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে ফেইসেবুক লাইভে এসে আগুন লাগার পেছনে উল্টো এনজিওদের হাত থাকার অভিযোগ করেছেন বোলসোনারো।

তবে তিনি বলেছেন, দাবানলের কারণ তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এও স্বীকার করেছেন, এ আগুন নেভানোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাব আছে তার সরকারের।

বিবিসি জানিয়েছে, এই দাবানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চল।

২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে উত্তরের চারটি অঞ্চলেই দাবানলের ঘটনা বেড়েছে। রোরাইমাতে ১৪১ শতাংশ, একরে ১৩৮ শতাংশ, রোনডোনিয়াতে ১১৫ শতাংশ আর আমাজোনাসে ৮১ শতাংশ বেড়েছে দাবানলের ঘটনা।

দেশটির সবচেয়ে বড় রাজ্য আমাজোনাসে ইতোমধ্যে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হয়েছে।

ছাই হতে চলা আমাজনের একাংশ বিশ্বের জন্য কতটা দুঃসংবাদ বয়ে আনবে তা বোঝার চেষ্টা করেছে বিবিসি।

আগুনের ছাইভস্ম বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগজনক তথ্যও উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস অ্যাটমোস্ফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস (সিএএমএস) জানিয়েছে, দাবানলের ধোঁয়া আটলান্টিক তট পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে।

আগুন থেকে ছড়িয়ে পড়ছে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড। এ বছর ২২৮ মেগাটন পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড যোগ হয়েছে সেখানকার পরিবেশে। ২০১০ সালের পর থেকে এই হিসাব সর্বোচ্চ।

শুধু কার্বন ডাইঅক্সাইড নয়, ছড়িয়ে পড়ছে কার্বন মনোক্সাইডও। কাঠ যখন পুড়তে থাকে, অক্সিজেনের যখন অভাব হয়, ধোঁয়ার সাথে তৈরি হতে থাকে প্রাণঘাতি এই গ্যাস।

সিএএমএসের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিষাক্ত এই গ্যাস দক্ষিণ আমেরিকার সমুদ্র তট ছাড়িয়ে বাতাসে মিশে যাচ্ছে।

আমাজন অববাহিকা ৩০ লাখ প্রজাতির গাছপালা ও প্রাণির আবাসভূমি। এখানে বাস করে ১০ লাখ আদিবাসী।

রোনডোনিয়া অঞ্চলের আদিবাসী নেতারা বলেছেন, বনে আগুন লাগার পর তারা বন্যপ্রাণীদের প্রাণভয়ে বন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসতে দেখছেন।

পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয় আমাজনকে, যা ঠেকিয়ে রাখছিল বৈশ্বিক জলবায়ু উষ্ণতা বৃদ্ধি।

কিন্তু যখনই গাছপালা কাটা ও পোড়ানো হয়, যে কার্বন তারা শোষণ করে রাখে তা পরিবেশে ছড়িয়ে যায়।

আর তাতে এই রেইনফরেস্টের কার্বন শোষণ ক্ষমতাও কমে আসছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।   

কেবল ব্রাজিল নয়, আমাজন পুড়তে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আরও অনেক দেশ।

আমাজন অববাহিকার ২ দশমিক ৯ বর্গ মাইল এলাকায় আরও কয়েকটি দেশে এ বছর ঘন ঘন দাবানলের ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে ভেনেজুয়েলায় ২৬ হাজার বারের বেশি এবং বলিভিয়াতে ১৭ হাজার বারের বেশি দাবানলের ঘটনা ঘটেছে।

বলিভিয়ার পূর্বাঞ্চলের আগুন নেভাতে সরকার এয়ারট্যাঙ্কার ভাড়া করেছে। এই দাবানলের আগুন ৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকার বনভূমি ও চারণভূমিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

আগুন নেভানোর কাজে সাহায্য করতে বাড়তি জনবলও পাঠানো হয়েছে ওই অঞ্চলে। আগুন থেকে বাঁচতে বেরিয়ে আসা প্রাণিদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে সেখানে।

আরও পড়ুন