৩০ শতাংশের কম ভোট পড়তে পারে, ধারণা সিইসির

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের হার ৩০ শতাংশের নিচে থাকতে পারে বলে মনে করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা।

সাবিকুন্নাহার লিপিসাবিকুন্নাহার লিপিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2020, 02:18 PM
Updated : 2 Feb 2020, 11:29 AM

শনিবার দিনভর ভোট শেষে ঢাকার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই ধারণার কথা তিনি বলেন।

ভোটার উপস্থিতির যে চিত্র সারা দিনে সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তাতে শেষ পর্যন্ত ভোটের হার কত হয়েছে, সেই প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের। 

উত্তর দিতে গিয়ে ইভিএমে ‘ভালো ভোট হয়েছে’ দাবি করে সিইসি বলেন, “নির্বাচন ভালো হয়েছে। পার্সেন্টেজ আমি জানি না। পার্সেন্টেজ বোধ হয় ৩০ এর নিচে থাকবে; এর বেশি যাবে না আমার মনে হয়।”

পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটিতে একদিনেই ভোট হয়েছিল। তাতে ব্যালট পেপারে গড়ে ভোট পড়েছিল ৪৩%।

সেবার ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ৩৭%; দক্ষিণ সিটিতে ৪৮% এবং চট্টগ্রামে ভোট পড়েছিল ৪৭%।

আর ২০১৯ সালে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদের উপ নির্বাচনে ৩১% ভোট পড়ে।

এবারের ঢাকা সিটি ভোটে এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি। বয়স্কদের আঙুলের ছাপ মেলানো নিয়ে হয়েছে বিড়ম্বনা। তবে ভোট শেষ  হয়েছে বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই।

সিইসি দাবি করেন, ঢাকার এই ভোটে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারেনি, এজেন্ট বের করে দেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগও তিনি পাননি।

“এজেন্ট বের করে দেওয়ার বিষয়ে কোনো এজেন্ট অভিযোগ করেনি যে আমাদের বের করে দিয়েছে। আমি যেখানে গিয়েছি এজেন্ট ছিল সব দলের, বিএনপি আওয়ামী লীগের ছিল। কেন্দ্রে যাওয়ার দায়িত্ব এজেন্টদের, গিয়ে বের হয়ে গেলে অভিযোগ করতে হবে। এমন আমরা পাইনি।”

ইভিএম নিয়ে বিএনপি নানা অভিযোগ করলেও সিইসি নূরুল হুদা এর সঙ্গে একমত নন।

“যারা ইভিএমে ভোট দিয়েছেন, তাদের কেউ ইভিএমের বিরোধিতা করেননি। কেউ বলেছে জটিল, বা দেরি হয়েছে। অধিকাংশই বলেছেন- স্বচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন; সহজেই ভোট হয়। কখনও একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে না। একবার ভোট দেওয়া হয়ে গেলে ওই লোক আরেকবার পারে না।”

সিইসি বলেন, “কোনো ভোটার ভোট না দিয়ে আসেননি। কেউ বলেননি যে ভোট দিতে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি।”

আসল ভোটারের আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর তার বদলে আরেকজন ভোট দিয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সিইসি বলেন, “এ রকম অভিযোগ আমি পাইনি।”

সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগ তুলে সিইসির পদত্যাগের যে দাবি কেউ কেউ করছেন- সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে একজন জানতে চান নূরুল হুদা পদত্যাগ করবেন কি না।

উত্তরে সিইসি বলেন, “না।”

মাহবুব তালুকদার যে অর্জন দেখছেন

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, “ইভিএম ব্যবহার করে এই নির্বাচনে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে এতে কোনো কেন্দ্রে ১০০% ভোট পড়েনি এবং নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভর্তি করার সুযোগ ছিল না। এই অপবাদ থেকে আমরা মুক্ত।”

শনিবার ভোট শেষে নির্বাচন ভবনে নিজের কক্ষে ‘আমার কথা’ নামে নিজের একটি লিখিত বক্তব্য তিনি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

মাহবুব তালুকদার বলেন, “উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৫% এর নিচে ভোট পড়েছে। নির্বাচন খুবই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কোনো মারামারি বা রক্তক্ষয় হয়নি। ভোটের মাঠে এক পক্ষ ব্যতীত অন্য পক্ষগুলোকে দেখা যায়নি। তাদের অনুপস্থিতির কারণ আমার অজ্ঞাত।”

নিজের ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত ১২টি কেন্দ্র তিনি পরিদর্শন করেছেন।

“এই কেন্দ্রগুলোতে সরকারি দলের মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট ছাড়া কারও এজেন্ট দেখতে পাওয়া যায়নি। সকাল ৮টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রগুলোতে ১০% ভোট পড়েছে।”

মাহবুব তালুকদার বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে দৃশ্য দেখা গেছে, তাতে আমি মর্মাহত। আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আচরণবিধি থাকা না থাকায় কোন পার্থক্য থাকে না।”