ইসিতে অভিযোগ করে যাচ্ছি, জবাব পাচ্ছি না: বিএনপি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে অনিয়মের নানা অভিযোগ করে গেলেও নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2020, 04:13 PM
Updated : 30 Jan 2020, 04:13 PM

নির্বাচন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা একটি ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ করে ক্ষমতাসীনদের বিজয় নিশ্চিত করতে চাইছে, বলেছেন দলটির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার দলেরযুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও কেন্দ্রীয় নেতা বিজন কান্তিকে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু।

তাদের আগেই সিইসির সঙ্গে দেখা করে যায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল।

সিইসির সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আমীর খসরু বলেন, “আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই বড় রকমের আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছে, আমরা বারবার বলেছি, কিন্তু সমাধান হয়নি। শুধু সমাধান হয়নি তা নয়, শেষ দিকে এসে আরও বেশি লঙ্ঘন হয়েছে।

“কমিশন নিজে থেকে এগুলো না দেখার ভান করছে। আমরা বার বার কমিশনে এসে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কিন্তু তাদের কোনো সদুত্তর পাচ্ছি না।”

আচরণ বিধি লঙ্ঘনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “সোহরাওয়ার্দীতে আজ আওয়ামী লীগের জনসভা হচ্ছে। এটা নির্বাচন বিধির সরাসরি লঙ্ঘন। কিন্তু কমিশন এনিয়ে কিছুই জানেন না। অথচ তাদের থাকার কথা ছিল ওয়াচডগের ভূমিকায়। এটা ক্লিয়ারলি ভায়োলেশন।

“ফুটপাতের উপর আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ক্যাম্পের বিষয়ে আমরা বলেছিলাম। তারা বলেছিল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভাঙা হবে। এখন পর্যন্ত কোন অফিস ভাঙা হয়নি। রিটার্নিং অফিসারও দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তারা এক্সিকিউট করতে পারছেন না।

“নির্বাচন পর্যন্ত দৃশ্যমাণ অপরাধ না হলে গ্রেপ্তার হবে না বলে জানিয়েছিল ইসি। কিন্তু গ্রেপ্তার চলছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করা হবে না বলেছিল, কিন্তু সেটিও শুরু হয়ে গেছে।”

বারবার এসব অভিযোগ করে কমিশনের কাছ থেকে কী বক্তব্য পাচ্ছেন- জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, “এসব বিষয়ে কমিশনের কোনো উত্তর নেই। তারা তখন নীরব।”

সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি জিতবে দাবি করে তিনি বলেন, “সেই আশঙ্কা থেকে তারা পর্যবেক্ষকসহ সব কিছু সাজিয়েছে। ইসি সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের নাগরিকের ভোট নিশ্চিত ও সুরক্ষার জন্য। কিন্তু এখন ইসি হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের ভোট সুরক্ষার জন্য।”

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কূটনীতিকরা বাড়াবাড়ি করছেন বলেও ইসিতে অভিযোগ করে যান ক্ষমতাসীনরা।

সে প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, “উনাদের কনসার্নটা আমরা বুঝি। উনারা যেসব পর্যবেক্ষকের তালিকা করেছেন সেটা তাদের দলীয় পর্যবেক্ষক। সারাদিন বসে থাকার পর বিকালে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলা ছাড়া তাদের কোনো কাজ নেই।

“এদের ২২টার মধ্যে ১৮টির ওয়েবসাইট নেই। দুটিতে একই ব্যক্তি চেয়ারম্যান ও অরেকটিতে চিফ এক্সিকিউটিভ। সেই প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর আওয়ামী লীগের এমপিসহ অন্যান্য নেতা। নিজেদের মতো করে একটা নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন করে তাদের ফলাফল তারা পেতে চাচ্ছে। অবজার্ভারসহ সেইভাবে করা হয়েছে।”

“এর মধ্যে যদি বিদেশি মুক্ত চিন্তার মানুষ এসে পর্যবেক্ষণে চলে আসে সেটা অবশ্যই তাদের চিন্তার বিষয়,” বলেন আমীর খসরু।

বিদেশি পর্যবেক্ষকে ভয় সরকারের: ফখরুল

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারচুপি আড়াল করতেই বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা।

বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকের পর ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, “এই ধরনের বক্তব্য প্রমাণ করে যে, তারা একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন করার উদ্দেশ্য নিয়ে সব কাজগুলো করছেন এবং কোনো অবজারভার তারা রাখতে চাচ্ছেন না।

“গত জাতীয় নির্বাচনেই তারা এটা করেছিলেন, তারা অবজারভারদের আসতে দেননি, সরকার তাদের ভিসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাদের মূল যে একটা পরিকল্পনা তারা ফলস ইলেকশন করবে, কারচুপি করবে, ফলাফল তাদের পক্ষে নেবে, পুরো প্রশাসনকে ব্যবহার করে। তারা সেই উদ্দেশ্যেই এইসব কথাগুলো বলছে।”

গত সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রশ্ন তোলার বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তাই একইভাবে তারা যখন নির্বাচন অবজার্ভ করতে চান, সেখানে তারা (সরকার) বাধা দিচ্ছেন। এটাতে প্রমাণিত হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যেটা একই আছে, তারা নির্বাচনটা নিয়ন্ত্রণ করতে চান, নির্বাচনটা তাদের পক্ষে নিয়ে আসতে চান।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির  বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠকে ফখরুল ছাড়াও ছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।