প্রচারের শেষ সময়ে দুই পক্ষের অভিযোগ ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ নিয়ে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের শেষ মুহূর্তের জমজমাট প্রচারের মধ্যে ‘বহিরাগত ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ জড়ো করা নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসছে দুই প্রধান রাজনৈতিক শিবির থেকে।

মাসুম বিল্লাহ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2020, 06:16 PM
Updated : 29 Jan 2020, 06:16 PM

আওয়ামী লীগ বলছে, ভোট বানচাল করতে বিএনপি সশস্ত্র সন্ত্রাসী জড়ো করছে ঢাকায়। অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ, ভোটকেন্দ্র দখল করতে আওয়ামী লীগই সশস্ত্র সন্ত্রাসী জড়ো করছে।

দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে; যা নারী ভোটারদের মধ্যে বেশি। অর্ধেক নারী ভোটারের অনেকে বলছেন, তারা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট নিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফেরার মতো পরিবেশের নিশ্চয়তা চান।

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের শুরুতে উত্তেজনা থাকলেও সহিংসতা দেখা যায়নি। কিন্তু দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সহিংস ঘটনাও ঘটেছে।

ভোটের দুই দিন আগে বুধবার গুলশানে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারি বেঁধেছে। আগের দিন মোহাম্মদপুরেও সংঘর্ষ হয় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।

তবে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে এখনও সন্তুষ্ট নির্বাচন কমিশন।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বুধবার এক বৈঠক শেষে ইসি সচিব মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “বিদ্যমান পরিবেশে কমিশনও সন্তুষ্ট, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীও সন্তুষ্ট।”

‘সুন্দর’ পরিবেশে যেন ‘আরও সুন্দর’ হয়, সেজন্য কিছু বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বহিরাগতদের বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন বহিরাগতদের নিয়ে বিধি নিষেধ থাকলেও দুই প্রধান রাজনৈতিক দল থেকেই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তা নিয়ে।

ভোটের দিন কেন্দ্র পাহারার নামে ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা’ ভোটের পরিবেশে বিঘ্ন ঘটাতে পারে বলে বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। একটা বিষয় খুব উদ্বেগজনক, সেটা হচ্ছে নির্বাচনকে সামনে রেখে বহিরাগতদের জড়ো করা এবং অস্ত্রধারীরাও এর মধ্যে আছে।

“খবর আছে- নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে পাহারার নামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিবেশ বিঘ্নিত করতে পারে। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাধা দিতে পারে। সেই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনকে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।”

আওয়ামী লীগের জোট ১৪ দলের পক্ষ থেকে এদিন ইসিতে গিয়েও এই উদ্বেগের কথা জানানো হয়। বলা হয়, বিএনপি ভোট বানচালের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।

অভিযোগ নিয়ে ইসিতে ১৪ দলের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের বক্তব্যের জবাবে অভিযোগের পাল্টা তীর ছুড়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ।

বুধবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এটা অত্যন্ত হাস্যকর। কে না জানে যে বিএনপির প্রার্থীরা, সাধারণ কর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারছে না পুলিশের বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে।

“আমাদের পক্ষে বাইরে থেকে লোক আনা বা কোনো অস্ত্র-শস্ত্র যোগাড় করা- এটা অসম্ভব বিষয়। এটা আমাদের দ্বারা করা সম্ভবও নয়, এটা আমরা করিও নাই।”

সিটি ভোটকে সামনে আওয়ামী লীগই অস্ত্র-শস্ত্র ও ৩০ লাখ কর্মীকে বাইরে থেকে এনেছে দাবি করেন বিএনপি নেতা মোশাররফ।

বহিরাগতদের নিয়ে ইসির নির্দেশনা

ভোটের দিন বহিরাগতদের ভোটকেন্দ্রে না আসার নির্দেশনা ইতোমধ্যে দিয়েছে ইসি।

ইসি সচিব আলমগীর বলেন, অন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে এলাকায় ভোট থাকে, সেই এলাকায় ভোটের দিন বাইরের কোনো লোক অবস্থান করতে পারে না।

“এটা রাজধানী। মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে আসতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে ওইসব বিষয় বন্ধ করা যাবে না। ঢাকায় ভোটার ছাড়া কোনো লোক থাকতে পারবে না বা বাইরের কেউ আসতে পারবে না, এগুলো করা যাবে না।

“বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, প্রথমত- ভোটের দিন যেন যারা ভোটার না, বিশেষ করে ঢাকায় বহিরাগত, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে না আসেন । যদি অত্যন্ত প্রয়োজন না থাকে, তাহলে নিষ্প্রয়োজনে কেউ যেন ঢাকায় অবস্থান না করেন। যাদের জরুরি প্রয়োজন, তাদের তো থাকতেই হবে। তাদেরকে যেন পুলিশ এলাউ করে।”

যদি কোনোই কারণ না দেখাতে পারে, তাদেরকে চলে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে।

ইসি সচিব আলমগীর বলেন, ঢাকায় অবস্থান করেন বিভিন্ন কারণেই, কিন্তু ঢাকার ভোটার নন। তারা যেন অযথা বা অপ্রয়োজনে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে জটলার সৃষ্টি না করেন। সেটা করলে যারা ভোট দিতে আসবেন, তাদের জন্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

অর্ধেকেরই বেশি কেন্দ্রে সতর্ক দৃষ্টি

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকায় অন্তত দেড় হাজার ভোটকেন্দ্র ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিবেচনায় নিরাপত্তা সদস্য বেশি মোতায়েন করা হচ্ছে।

‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচনায় সেসব কেন্দ্রে পুলিশের সদস্য বাড়িয়ে আনসার-ভিডিপিসহ ১৮ জন করে নিরাপত্তা সদস্য রাখা হবে।

সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোকে ১৬ জন করে থাকবে নিরাপত্তা সদস্য।

উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ২হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্রকেই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে ইসিতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭৬টি কেন্দ্রই ‘গুরুত্বপূর্ণ’; বাকি ৪৪২টি কেন্দ্র ‘সাধারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গত ২৬ জানুয়ারি ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের সংঘর্ষ বাঁধে।

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম সাংবাদিকদের বলেন, “সাধারণ কেন্দ্রগুলো ১৬ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে ১৮ জন।”

দক্ষিণে সিটি এলাকায় ১১৫০ কেন্দ্রের মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ৭২১টি এবং ‘সাধারণ’ ৪২৯টি।

দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, “ভোটের দিন যতই এগিয়েছেগুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যাও বেড়েছে। আমরা যেটাকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বলছি আর গণমাধ্যম বলে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে নিরাপত্তা সদস্য বাড়বে ও আমাদেরও সতর্ক দৃষ্টি থাকবে।”

১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই সিটিতে একযোগে সব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)।

ভোটকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন হচ্ছে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম থাকবে মাঠে।

মক ভোটিং বৃহস্পতিবার

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে অনুশীলনমূলক (মক) ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা সংশ্লিষ্ট ভোটাকেন্দ্রে গিয়ে মক ভোট দিতে পারবেন।

কর্মজীবী ভোটারদের বিবেচনায় রেখে এ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

মক ভোটিং কার্যক্রম দেখতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

জমজমাট প্রচারে প্রার্থীরা

প্রায় তিন সপ্তাহের এক টানা প্রচারের শেষ দিকে এসে ব্যস্ততা বেড়েছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের। ভোটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রচার শেষ হচ্ছে। শীত বাড়িয়ে তোলা মাঘের বৃষ্টি উপেক্ষা করে বুধবার সকালে গণসংযোগে নামেন প্রার্থীরা। তাদের পক্ষে কর্মী-সমর্থকদের মিছিল, মাইকিং আর জনসংযোগে সরগরম ছিল রাজধানীর অলিগলি।

এদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস।

পুনরুজ্জীবিত ঢাকা গড়তে নির্বাচনী ইশতেহারে ঐতিহ্য সংরক্ষণ, সৌন্দর্য ও গতিশীলতা বৃদ্ধি এবং সুশাসন ও সমন্বিত উন্নয়নের পাঁচ রূপরেখা হাজির করেন নৌকার প্রার্থী।

নির্বাচনী ইশতেহারে নিজের পাঁচ পরিকল্পনা সবিস্তারে তুলে ধরার পাশাপাশি গত ১১ বছরে ঢাকা সিটির উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত উদ্যোগের ফিরিস্তি তুলে ধরেন তাপস।

ইশতেহার নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেখ ফজলে নূর তাপস।

পুরান ঢাকায় ভোটের প্রচারে ইশরাক হোসেন।

তাপসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন দুপুরে গোপিবাগের বাসায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।

দুপুরে ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুরের বংশাল, নর্থ সাউথ সড়ক, বংশাল, তাঁতীবাজার, রায় সাহেব বাজার, ধোলাইখাল, নতুন রাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি।

ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সবাইকে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইশরাক বলেন, “ভোটারদের সুরক্ষা করার জন্য বিএনপির যা যা করণীয় রয়েছে, সব কিছুই আমরা করবো। আপনারা কোনো ভয় পাবেন না, কোনো বাধা-বিপত্তি মানবে না।”

বেলা ১২টার দিকে গুলশানের শহীদ ফজলে রাব্বি পার্কে নির্বাচনী প্রচারসভার গিয়ে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

সংঘর্ষের কারণে ওই সভা পণ্ড হওয়ার মহাখালী টিবি গেট, ওয়্যারলেস গেট, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, সাততলা বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভায় যোগ দেন তিনি। সন্ধ্যায় মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন তিনি।

বিকালে পল্লবী সিটি ক্লাব মাঠে জনসভায় কর্মীদের উদ্দেশে আতিক বলেন, “আর দুইটা দিন বাকি আছে। ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বোঝান, নৌকা ছাড়া আর কোনো মার্কা নেই। একটি মাত্র মার্কা যেটা দিচ্ছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট। সেই মার্কা দেবে সুস্থ, সবল, আধুনিক ঢাকা।”

ভোট দিতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “নয় মাসে কঠিন অনুশীলন করেছি। অনুশীলন যদি সুন্দর হয়, ফাইনাল খেলাও তাহলে ভালো হয়। ১ ফেব্রুয়ারি ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছর টেস্ট খেলার সুযোগ করে দেবেন আশা করি।”

মগবাজারের আতিকুল ইসলামের পক্ষে প্রচারে নারীকর্মীরা।

নয়াটোলায় প্রচারে তাবিথ আওয়াল।

আতিকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল সকালে মাঘের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারিধারা ডিওএইচএসের দক্ষিণ গেইট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন।

পরে কালাচাঁদপুর, নতুন বাজার বাসস্ট্যান্ড হয়ে ভাটারা থানার বাঁশতলা এলাকা গণসংযোগন করেন ধানের শীষের প্রার্থী।

উত্তরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে খিলবাড়িরটেক এলাকা, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের ছোলমাইদ এলাকা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের নয়ানগরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য দেন ধানের শীষের প্রার্থী। পরে মগবাজারের নয়াটোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে নামেন তাবিথ।

ভোটের পরিবেশ নিয়ে তাবিথ বলেন, “পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে, ভোটের দিন নিয়ে আমি এখন কিছু আশা করতে পারছি না। তবে জনগণের যে জোয়ার দেখছি তাতে আশা করছি, ভোট বানচালের কোনো চেষ্টা থাকলেও তারা তা রুখে দেবে।”

কী বলছেন পর্যবেক্ষকরা

গত ২০ দিনের ভোটের প্রচারকে বিগত কিছু নির্বাচনের তুলনায় উৎসবমুখরই মনে করছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা; কয়েকটি মারামারিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবেই বর্ণনা করছেন তারা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শুধু এই নির্বাচনের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা দেখি, তাহলে আচরণবিধির অনেক ব্যত্যয় আমরা দেখেছি। যেমন পোস্টারের সাইজ, ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রচার চালানো, যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত হলেও দুয়েকটা হামলার ঘটনা ঘটেছে।

“তবে অতীতের নির্বাচনগুলো বিবেচনা করলে পরিস্থিতি বেশ ভালোই ছিল। প্রচারণার ব্যাপকভাবে বাধা দেখিনি। আবার পুলিশি হয়রানির ব্যাপক ঘটনার কারণে বাড়িছাড়া হয়ে যাওয়ার মতো বিষয় অতীতে দেখা গেলেও এবার তা ছিল না।”

শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ”প্রচারণা আমাদের প্রত্যাশার চাইতে ভালো হয়েছে। আমরা অংশগ্রহণমূলক যে নির্বাচন দেখতে চাই, অনেকদিন পর সেটার আমেজটা পাওয়া গেল।

“যথেষ্ট উৎসাহ আছে ভোটারদের মধ্যে। সো ফার সো গুড। ‘অংশগ্রহণমূলক’ ভোটে কিছু ব্যতিক্রম-বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে মোটা দাগে ক্যাম্পেইন সুন্দরভাবেই চলছে।”

তবে আচরণবিধি লঙ্ঘন আর সংঘর্ষের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আগের মতোই নিষ্ক্রিয় থেকেছে বলে মনে করছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা।

সুজনের সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার বলেন, “নির্বাচন কমিশন হামলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আরও তৎপর হতে পারত। তাদেরকে অতীতের মত নিষ্ক্রিয় দেখেছি।”

দুই সিটি নির্বাচন ঘিরে ৪৩ জন নির্বাহী হাকিম নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান ছিল না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রচারণার এই পরিস্থিতি যেন ভোটের দিনও থাকে, সেই প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখনও একটা আশঙ্কা আছে পোলিং এজেন্টরা কেন্দ্রে যেতে পারবে কি-না, কিংবা কেন্দ্রের সামনে অতীতের জটলা সৃষ্টি হয়ে থাকবে কি-না। এসব বিষয় ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখবে।”

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ওবায়দুর মাসুম, কাজী মোবারক হোসেন ও জয়ন্ত সাহা)