নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক, সেটাই চাই: ইশরাক

আগের দিন প্রচারে গোলযোগের পর তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছেন, তিনি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2020, 03:00 PM
Updated : 27 Jan 2020, 03:07 PM

সোমবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নিজের আকাঙক্ষার কথা জানান ধানের শীষের এই প্রার্থী।

রোববার গোপীবাগে ইশরাকের প্রচারের সময় তার কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।

ইশরাক দাবি করেছেন, তার প্রচারে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থকরা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা পাল্টা অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বিএনপি।

ইশরাক বলেন, “আমরা গত ১৮ দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে আসছি শান্তিপূর্ণভাবে। প্রচারণা চালানোর সময়ে নৌকার প্রার্থীদের বিভিন্ন ক্যাম্প আমার সামনে পড়েছে, আমি তাদের ক্যাম্পে ঢুকে গেছি, তাদের একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর সাথে দেখা হয়েছে, আমি সালাম বিনিময় করেছি, কুশল বিনিময় করে দোয়া চেয়ে বেরিয়ে এসেছি।

“গতকাল একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। আমি আমার প্রচারণার কার্যক্রম শেষে বাসায় ফেরার পথে আমাদের ৪১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাম্পের সামনে দিয়ে আসার সময়ে অতর্কিতভাবে নির্মাণাধীন ভবনের দোতলা থেকে ইটপাটকেল এবং অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রি রড-টড নিক্ষেপ করা হয়। সেখানে তিনজন সাংবাদিকসহ আমাদের ১২ জন আহত হয়।”

“আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। আমি আগামী দিনগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হোক, সেটি চাই,” বলেন ইশরাক।

হামলার পর মামলার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি প্রার্থী বলেন, “যে আশঙ্কাটি আমরা করছিলাম, গতকাল রাতে হামলার ঘটনার পরে ওয়ারী থানায় আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে একটা মামলা করা হয় ৫০ জনসহ অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে। সকাল পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“আমরা বলতে চাই, আমাদের প্রচারণা এবং নির্বাচনটা করার সমান সুযোগ দেওয়া হোক। এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে। মামলার মাধ্যমে যাতে আমাদের মাঠ খালি করে দেওয়ার যে একটা করা হয়েছিল জাতীয় নির্বাচনের আগে, সেই কাজটি যাতে না করা হয়, সেটি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।”

ইভিএমে ভোট কারচুপির শঙ্কার কথাও জানান ইশরাক।

ইশরাকের সঙ্গে থাকা তার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে বলতে চাই, বিএনপি একটি মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক দল। আমরা ভোটের মাধ্যমে এদেশের পরিবর্তন চাই, জনগণের মতামতকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।”

সকাল ১১টায় ইশরাক দলের নেতাদের নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলমের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময়ে ক্লাবের সহসভাপতি ওমর ফারুক, কোষাধ্যক্ষ শ্যামল দত্ত, যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, মঈনুল আলম, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহনাজ বেগম উপস্থিত ছিলেন।

পরে সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ইশরাক।

তিনি বলেন, “আমি ঢাকার সন্তান, এই শহরে আমার বেড়ে উঠা, এই শহরের সমস্যাগুলোর মধ্যেই আমি বেড়ে উঠেছি, সমস্যাগুলো আমার জানা রয়েছে। যদি আমি মেয়র নির্বাচিত হই, তাহলে আমি এই নগরীকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য যা যা করণীয় সকল কিছু করব।”

ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক বলেন, “আমি বয়সে নবীন, কিন্তু দেশের জন্য, নগরের জন্য আমার কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যা আমি বুকে ধারণ করি, সেই কাজটা আমি করে যাব।”

সভায় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “প্রেস ক্লাব একটি দল নিরপেক্ষ জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং এখানে সকল রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও নেতৃবৃন্দকে আমরা স্বাগত জানাই।

“আমরা এখানে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেব না। আমাদের বক্তব্য হল, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মিডিয়া তার ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশা করি, নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং এর মধ্য দিয়ে নগরবাসী তাদের যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেবে।”

প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, “আমরা মনে করি, এই মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব যে গণতন্ত্রের পীঠস্থান, জাতীয় প্রেস ক্লাব যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পীঠস্থান, জাতীয় প্রেস ক্লাব যে সকলের সঙ্গে একসঙ্গে চলার একটি আদর্শিক জায়গা, সেটি আবার প্রমাণিত হল।”

তিনি বলেন, “ভোটাররা একটি বাসযোগ্য ঢাকা, যানজটমুক্ত ঢাকা, সবুজ ঢাকা চায়। তারা একটি নিরাপদ ঢাকা, নিরাপত্তার বেষ্টনীঘেরা ঢাকা চায়। যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের কাছে এই প্রত্যাশা থাকবে তারা এটি পূরণ করবেন।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুস শহীদও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, বাকের হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, নুরুউদ্দিন নুরু, কেএম মহসিন, লুৎফুর রহমান বেনু, কাজী রওনক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি নেতাদের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, তৈমুর আলম খন্দকার, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, হারুনুর রশীদ, ওয়ারেশ আলী মামুন, রফিক শিকদার, খোরশেদ আলম, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।  

পরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের নিচতলায় ইশরাক দুই প্রধান দল সমর্থিত সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে যান এবং কুশল বিনিময় করেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন কার্যালয়ে বিএফইউজের মহাসচিব শাবান মাহমুদ ও বিএনপি সমর্থিত কার্যালয়ে বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ তাকে স্বাগত জানান।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের পর ইশরাক ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

ডিআরইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী এবং ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক কাজল হাজরা স্বাগত জানান তাকে।

সিপিবি কার্যালয়ে ইশরাক

দুপুরে পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির কার্যালয়ে গিয়ে দলটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি প্রার্থী ইশরাক।

সেলিমের কক্ষে ঢুকে ইশরাক সালাম দিয়ে বলেন, “চাচা আপনার দোয়া নিতে এসেছি। আমাকে দোয়া করবেন।”

ইশরাকের বাবা সাদেক হোসেন খোকা ছাত্র ইউনিয়নের নেতা ছিলেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সেলিমও একই সংগঠনে ছিলেন। তারা দুজনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

চিনপন্থি ন্যাপ নেতা খোকা পরে বিএনপিতে যোগ দিলেও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে তার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

সেলিম বর্তমান নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে বলেন, “আমরা এই সরকারের বা এই নির্বাচন কমিশনের হাতে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করি না। আমরা ভোটাধিকার সংগ্রামটাকে আরও জোরদার করার প্রয়োজনেই নির্বাচনটাকে সংগ্রামের একটি পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করে মানুষের কাছে যাচ্ছি।

“মানুষকে আমরা বলছি, ভোটাধিকার আদায় করার কাজটা আমাকে বা অন্য আরেকজনকে বর্গা দিয়ে বসে থাকবেন, সে তো হয় না। জমি বর্গা দেওয়া যায়, কিন্তু ভোটাধিকার বর্গা দেওয়া যায় না। যার যার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার জন্য তাকেই রাস্তায় নামতে হবে এবং সাহস করে নামতে হবে।”

সাক্ষাতের সময়ে সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল হোসেন প্রিন্স উপস্থিত ছিলেন।

ইশরাকের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।