পুলিশ বলছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সঙ্গী নেতা-কর্মীরা সরু রাস্তায় মুখোমুখি হওয়ায় উভয় পক্ষে ‘ঠেলা ধাক্কাধাক্কি’ হয়েছে। প্রচারের বিষয়ে পুলিশকে আগে জানালে এমন পরিস্থিতি হত না।
নির্বাহী হাকিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাবিথের অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধ সংশ্লিষ্ট; যার বিচার ভ্রাম্যমাণ আদালতে করা যায় না।
মঙ্গলবার সকালে দারুস সালাম থানাধীন পর্বতার কলাবাজার এলাকায় প্রচারে গেলে হামলার মুখে পড়ার অভিযোগ করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ।
বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতে তার উপর চালানো এই হামলায় জড়িত ছিলেন ৯ নং ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সারোয়ার মাসুমের কর্মী-সমর্থকরা।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা সন্দেহ করছেন, সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি এই হামলার ঘটনা সাজিয়েছে। নৌকার মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামও একই সন্দেহের কথা জানিয়েছেন।
বিএনপি ও তাবিথের অভিযোগ পেয়ে নির্বাচন কমিশন ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেমকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
সেই নির্দেশ পেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ এবং নির্বাহী হাকিম ইমরান শাহরিয়ারকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন দুটো পাওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা কাসেম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবেদনে বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করা যাবে না। এটার জন্য সময় প্রয়োজন।
“তাই প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়ে দেব। কমিশন আইনগত ব্যবস্থা নেবে।”
অভিযোগ আমলে নিয়ে ইসি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা দেখার জন্য ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন জানিয়েই তাবিথ বলেছেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদী।
যেভাবে ‘ঠেলা ধাক্কা’
পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থানায় না জানিয়ে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ ২০০-৩০০ জন নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে মিছিলের মতো নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে বড়বাজার এলাকায় গিয়েছিলেন।
ওই এলাকায় ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুমের নেতৃত্বে ২০০ জনের মতো নেতাকর্মী ওই সময়ে প্রচার চালিয়ে গলি পথ থেকে বেরিয়ে প্রধান সড়কে উঠলে দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়ে পড়ে।
“সরু রাস্তায় দুই দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকেরা মুখোমুখি হওয়ায় তাদের মাঝে ঠেলা, ধাক্কা-ধাক্কি হতে থাকে মর্মে জানা যায়। দুই দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা মুখোমুখি হয়ে পড়লে টহলে থাকা পুলিশ তাৎক্ষণিক উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষকে দুই দিকে দুই রাস্তায় সরিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে উভয় পক্ষ প্রচারণা চালায় নিজেদের মতো করে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, “এ ধরনের ঘটনাকে অধর্তব্য অপরাধ বলে স্থানীয় প্রকাশ্যে ও গোপনে জিজ্ঞাসাবাদে প্রতীয়মান হয়। এ সংক্রান্তে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
নির্বাহী হাকিমের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধ সংশ্লিষ্ট, যা মোবাইল কোর্টে নয়, দণ্ডবিধি-১৮৬০ মতে বিচার্য। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
আগে পুলিশের অনুমতি লাগবে
তাবিথের ঘটনায় দুই প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বিধি মেনে চলার জন্য সব প্রার্থীকে চিঠি দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
চিঠিতে বলা হয়, কোনো প্রার্থী প্রচারণামূলক পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে হলে প্রস্তাবিত সভার কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা আগে তার স্থান ও সময় সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আচরণবিধির এ সংক্রান্ত বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের তাগিদ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।