ভোটের দুদিন আগে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধলক্ষ সদস্য

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটের দুই দিন আগে থেকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2020, 03:26 AM
Updated : 22 Jan 2020, 03:26 AM

সেক্ষেত্রে ৩০ জানুয়ারি থেকে মাঠে নামবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অর্ধ লক্ষের মতো সদস্য। ১ ফেব্রুয়ারি ভোট শেষে পরদিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে তারা।

বুধবার হতে যাওয়া নির্বাচন কমিশনের আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় এমন প্রস্তাবই দিয়েছে ইসি সচিবালয়।

ইসি নির্বাচন পরিচালনা শাখা প্রস্তাবটি তৈরি করেছে। এতে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অর্ধ কোটিরও বেশি ভোটারের দুই সিটি নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর অর্ধ লক্ষের মতো সদস্য কেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে মোতায়েন থাকতে পারে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে বুধবারের সভায় এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।  

এ সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তি, সংস্থা, বিভাগের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট পুলিশ-প্রশাসনের প্রতিনিধি ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের মতামত আসবে।

সব কিছু বিবেচনা করে ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাব কমিশন অনুমোদন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ভোটের আগে-পরে অন্তত চার দিনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা পরিকল্পনায় নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়ে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, এপিবিএন সদস্য। আর পুলিশসহ অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপির সদস্যরা থাকবে কেন্দ্রে ।

সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে র‌্যাবের প্রয়োজনীয় সংখ্যক টহল দল এবং ৩/৪ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবে। প্রায় আড়াই হাজার কেন্দ্রের প্রতিটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৬-১৮ জন সদস্য থাকবে।

সিইসি নূরুল হুদা ইতোমধ্যে বলেছেন, ভোটের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী থাকছে না। তবে ভোটকেন্দ্রে ইভিএম এর কারিগরি দিক সামলানোর জন্য তারা থাকবেন।

আইন শৃঙ্খলা সভার জন্য ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাবে রয়েছে- ভোটের আগে দুইদিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরেও একদিনসহ মোট চার দিন মাঠে থাকবেন তারা। এছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বিজিবি-র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। এক্ষেত্রে বিজিবির টহল টিমের সঙ্গে থাকবেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।

এছাড়া ভোটের আগেই চিহ্নিত অপরাধী-সন্ত্রাসী ও ভোটে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে এমন দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।

ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চার দিনের জন্য নিয়োজিত থাকলেও অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপির সদস্যদের ৫ দিনের জন্য রাখার পরিকল্পনা হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রের ধরন, সংখ্যা, ওয়ার্ড বিন্যাস, থানার অবস্থান, ইভিএমসহ নির্বাচনী মালামাল বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রে ফোর্স সংখ্যা এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।

নির্বাচনী নিরাপত্তার উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।

উত্তর সিটির মোট ১৩১৮ কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন। একই সংখ্যক সদস্য দক্ষিণের ১১৫০ কেন্দ্রের একই হারে নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকবেন।

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়

দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়

মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স যত

উত্তরের ৫৪ সাধারাণ ওয়ার্ডের জন্য মোবাইল ফোর্স ৫৪টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সের টিম ১৮টি ও র‌্যাবের ৫৪ টিম এবং বিজিবির থাকবে ২৭টি প্লাটুন।

আর দক্ষিণে ৭৫ সাধারাণ ওয়ার্ডের জন্য মোবাইল ফোর্স ৭৫টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্সের টিম ২৫টি ও র‌্যাবের ৭৫টিম এবং বিজিবির ৩৮টি প্লাটুন থাকবে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় চার দিনের জন্য ১২৯ জন নির্বাহী হাকিম কাজ করবেন।

ভোটের আগে-পরে  পাঁচ দিন উত্তরে ২৭ জন, দক্ষিণে ৩৭ বিচারিক হাকিমও নিয়োজিত থাকবেন।

ভোটের দিন ঢাকায় প্রায় ২৫ হাজার পুলিশ সদস্য, ১ হাজার এপিবিএন সদস্য ও ৩৫ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করা প্রয়োজন হবে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

আইন শৃঙ্খলা সভায় যারা

বুধবার বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে এ সভায় চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, বিজিবি মহাপরিচালক,  র‌্যাব-আনসার ও ভিডিপি/ডিজিএফআই/এনএসআই মহাপরিচালক;  এসবির অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, ঢাকার পুলিশ কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক, দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং সব সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন।

আলোচ্যসূচি

>>নির্বাচন পূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ

>>চিহ্নিত অপরাধী ও নির্বাচন বিঘ্ন সৃষ্টকারী, দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা 

>>অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোধ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

>>নির্বাচনী সরঞ্জাম পরিবহন ও সংরক্ষণে নিরাপত্তা বিধান

>>নির্বাচনী আইন এবং আচরণ বিধিসহ বিভিন্ন নির্দেশনা সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালন

>> নির্বাচনী এলাকায় ও ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা

>>আইন শৃঙ্খলা কর্মকাণ্ড সমন্বয়

আরও খবর