মেয়র প্রার্থীদের ভোটের টাকার উৎস কী, খরচ হবে কোথায়

নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সীমা আর প্রার্থীদের খরচের বাস্তবতা নিয়ে জনমনে সংশয় থাকলেও কেতাবি রেওয়াজ মেনে ভোটের ব্যয়ের সম্ভাব্য একটি ফর্দ নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীরা।

কাজী নাফিয়া রহমানজয়ন্ত কুমার সাহা ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Jan 2020, 08:16 AM
Updated : 19 Jan 2020, 01:50 PM

তাতে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী ভোট করবেন পুরোপুরি নিজের টাকায়। তবে বিএনপির দুই প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচারের খরচ মেটাতে ধার করতে হবে। 

ভোটার সংখ্যা অনুপাতে দুই সিটির মেয়র পদপ্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা করে ব্যয় করতে পারবেন। পোস্টার ছাপানোর পাশাপাশি প্রচার, পরিবহন, পথসভা-ঘরোয়া সভা, নির্বাচনী ক্যাম্প, এজেন্ট ও কর্মীদের খরচ, আবাসন ও প্রশাসনিক ব্যয় বাবদ এই খরচ করা যাবে।

দুই বড় দলের চার প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া অংক ধরেই ভোটের ব্যয়ের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। তবে বাকি নয়জনের মধ্যে এমন প্রার্থীও আছেন, যিনি মাত্র চার লাখ টাকায় ভোট সেরে ফেলার পরিকল্পনা ইসিকে জানিয়েছেন। 

একজন প্রার্থী কোন খাতে কত টাকা খরচ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন এবং তার নির্বাচনী ব্যয়ের কত টাকা কোন উৎস থেকে আসবে, তার একটি ঘোষণা মনোনয়নপত্রের সঙ্গেই জমা দিতে হয়। প্রার্থীদের হলফনামার সঙ্গে ওই ব্যয়ের ফর্দও নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

নিয়ম হল, প্রার্থীকে সব অর্থ খরচ করতে হবে এজেন্টের মাধ্যমে। ফল ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব কমিশনে দাখিল করতে হবে। কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।

তবে ওই ব্যয়সীমা কখনোই মানা হয় না বলে সাধারণ একটি ধারণা রয়েছে জনগণের মধ্যে। আইন মেনে ব্যয় হচ্ছে কি না, তা নির্বাচন কমিশনও কখনও যাচাই করতে যায় না।

এবারের নির্বাচনে মেয়র পদের লড়াইয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছেন ছয়জন, দক্ষিণে রয়েছেন সাতজন।

উত্তরের মেরপ্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ, সিপিবির আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল, এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান ও পিডিপির শাহীন খান।

আর দক্ষিণে রয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুর রহমান, এনপিপির বাহারানে সুলতান বাহার, গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ।

৫০ লাখে হবে না তাপসের

নির্বাচন কমিশন ঢাকা দক্ষিণের ভোটে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়সীমা বেঁধে দিলেও তার চেয়ে তিন লাখ টাকা বেশি খরচের ইচ্ছার কথা সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণীতে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস।

সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে মেয়র পদের নির্বাচনে আসা এই আইনজীবী জানিয়েছেন, ভোটের ব্যয়ের পুরো টাকাই যাবে তার নিজস্ব আয় থেকে।

চার লাখ পোস্টার ছাপতে তাপসের খরচ হবে ১২ লাখ টাকা। এছাড়া সাড়ে চার লাখ টাকায় তিনি সাড়ে চার লাখ লিফলেট এবং সাড়ে সাত লাখ হ্যান্ডবিল ছাপবেন।

৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকায় দেড় হাজার ব্যানার এবং ১ লাখ ২১ হাজার টাকায় ৩৭৫টি ডিজিটাল ব্যানারে প্রচারের ব্যবস্থা করবেন; মাইকিংয়ে খরচ করবেন ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

কেন্দ্রীয় অফিস ও ২৪টি নির্বাচনী ক্যাম্প মিলিয়ে ২ লাখ ১৪ হাজার, যাতায়াতে ১ লাখ ৪০ হাজার, ঘরোয়া বৈঠক ও সভায় ৩ লাখ ৫০ হাজার এবং  পথসভায় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে ধারণা দিয়েছেন তাপস।

এছাড়া পোর্ট্রেট তৈরিতে ৭২ হাজার, প্রতীক তৈরিতে ১ লাখ ৫০ হাজার, অফিসে আপ্যায়নে ৯৬ হাজার, কর্মীদের জন্য ১ লাখ, গণমাধ্যমে প্রচারে ১ লাখ ৫০ হাজার এবং বিবিধ খাতে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা সম্ভাব্য খরচ দেখিয়েছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে তাপস

আতিকের ভোটের ব্যয় ব্যবসার টাকায়

উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম তার সম্ভাব্য অর্থ প্রাপ্তির উৎস ও ব্যয়ের তথ্য জমা দিলেও ইসির ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তা যুক্ত করা হয়নি।

তবে নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পোশাক ব্যবসায়ী আতিকুল নির্বাচনী ব্যয়সীমার ৫০ লাখ টাকার পুরোটাই নিজের আয় থেকে খরচ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইসিতে।

সেই ফর্দ অনুযায়ী, তিন লাখ টাকায় তিনি তিন লাখ পোস্টার ছাপবেন। ৬০ হাজার লিফলেটের জন্য ৩০ হাজার টাকা, দেড় লাখ হ্যান্ডবিলের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ২৫০টি ব্যানারের জন্য দেড় লাখ টাকা এবং ১২৫টি ডিজিটাল ব্যানরের জন্য ১ লাখ টাকা খরচ হবে বলে তিনি ধারণা দিয়েছেন। তিনি মাইকিংয়ে খরচ করবেন ৩ লাখ টাকা।

২৬টি নির্বাচনী ক্যাম্পের জন্য তিন লাখ ২০ হাজার টাকা, প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ক্যাম্পের জন্য ৩ লাখ টাকা, যাতায়াতে সাড়ে তিন লাখ টাকা, ঘরোয়া বৈঠকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং ৭০টি পথসভার জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সম্ভাব্য বয়ের হিসাব আতিক দিয়েছেন।

এছাড়া ৩৫ হাজার পোর্ট্রেটের জন্য এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ছবি বা প্রতীক তৈরিতে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা, অফিস আপ্যায়নে ২ লাখ ৭০ হাজার ৪০০ টাকা, কর্মীদের জন্য ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণার জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা এবং ভোটার তালিকার সিডি ক্রয় ও ফটোকপির জন্য ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয়ের ফর্দ সাজিয়েছেন গত এক বছর উত্তরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করা আতিক।

মা ও স্ত্রীর টাকা নিতে হবে তাবিথকে

উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচনী ব্যয়সীমার পুরো ৫০ লাখ ধরেই তার ভোটের ফর্দ সাজিয়েছেন।

বিএনপি নেতা ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ ইসিতে দেওয়া বিবরণীতে বলেছেন, ৪০ লাখ টাকা তিনি খরচ করবেন নিজের ব্যবসার আয় থেকে। আর স্ত্রীর কাছ থেকৈ পাঁচ লাখ টাকা ধার এবং মায়ের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দান নিয়ে বাকি খরচ মেটাবেন।

উত্তর সিটির ৩০ লাখ ভোটারের কাছে নিজের বার্তা পৌঁছে দিতে তাবিথ ছাপাবেন ৫ লাখ পোস্টার, সেজন্য ৮ লাখ টাকা খরচ হবে বলে ধারণা দিয়েছেন ইসিকে।

আর ৫ লাখ লিফলেটের জন্য ৪ লাখ টাকা, ৪ লাখ হ্যান্ডবিলের জন্য ২ লাখ টাকা, ১০০ ব্যানারের জন্য আড়াই লাখ টাকা, ৩০০ ডিজিটাল ব্যানরের জন্য ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করার একটি পরিকল্পনা তিনি জানিয়েছেন। এছাড়া মাইকিংয়ে পেছনে তিনি ৩ লাখ টাকা খরচ করতে চান।

তাবিথ বলছেন, ২৭টি নির্বাচনী ক্যাম্পের জন্য তার সাড়ে তিন লাখ টাকা, প্রার্থীর কেন্দ্রীয় ক্যাম্পের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যাতায়াত খরচ বাবদ ৪ লাখ টাকা, ঘরোয়া বৈঠকের জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হতে পারে। আর তিনি ২০০ পথসভা করতে চান, যেখানে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা লাগতে পারে। 

এছাড়া ১০০ পোট্রেটের জন্য ২২ হাজার, প্রতীক তৈরিতে ৩৪ হাজার, অফিস আপ্যায়নে ২ লাখ, কর্মীদের জন্য ২ লাখ ৭০ হাজার, টেলিভিশন বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের জন্য দেড় লাখ এবং ভোটার তালিকা প্রিন্ট, সিডি ক্রয়, পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণের জন্য ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন তাবিথ।

ইশরাকের ভোটের খরচ অর্ধেকই ‘দেবেন’ মা

অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে নির্বাচন করতে সম্ভাব্য ব্যয়ের যে হিসাব দিয়েছেন, তাতে ইসির দেওয়া ব্যয়সীমা অনুযায়ী ৫০ লাখ টাকার পুরোটাই তিনি খরচ করতে চান।  

এই টাকার অর্ধেক তিনি বাড়ি ভাড়ার আয় এবং সঞ্চয়ের টাকা থেকে মেটাবেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা মা ইসমত আরার কাছ থেকে ধার হিসেবে নেবেন বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন ইশরাক।

দক্ষিণ সিটির ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ভোটারের কাছে পৌঁছাতে ইশরাক সাড়ে ৬ লাখ টাকায় সাড়ে তিন লাখ পোস্টার ছাপবেন।

তিনি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় সাড়ে পাঁচ লাখ লিফলেট ও পাঁচলাখ হ্যান্ডবিলি বিলি করবেন, ২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় এক হাজার ব্যানার এবং ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায় তিনশ ডিজিটাল ব্যানার বসাবেন, সেই সঙ্গে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করবেন মাইকিংয়ে।

সম্ভাব্য ব্যয়ের বিবরণীতে নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, নিজের যাতায়াত বাবদ ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ঘরোয়া সভা ও বৈঠকে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, পথসভায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা জানিয়েছেন ইশরাক।

এছাড়া নির্বাচনী প্রতীক তৈরিতে ৫৫ হাজার, অফিস আপ্যায়নে ২ লাখ, কর্মীদের জন্য ৪ লাখ ২০ হাজার, গণমাধ্যমে প্রচারণায় ২ লাখ ৫৫ হাজার এবং বিবিধি খাতে ৪ লাখ টাকা সম্ভাব্য খরচের হিসাব দিয়েছেন সাদেক হোসেন খোকার ছেলে।

মিলন পোস্টার ছাপবেন মাত্র দেড় লাখ

বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা উপলক্ষে পুরো শহর পোস্টারে পোস্টারে  ছেয়ে ফেলার কারণে জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজি সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনের নাম দলের ভেতরেই হয়ে গেছে পোস্টার মিলন। তবে নির্বাচন  কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় তার আনুষ্ঠানিক নাম শুধুই মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে নির্বাচন করতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুদ্দিন মিলন ১০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ের একটি ফর্দ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। এই টাকার উৎস হিসেবে নিজের ব্যবসার কথা তিনি সেখানে বলেছেন।

এই দশ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা মিলন খরচ করবেন দেড় লাখ নির্বাচনী পোস্টার ছাপানোর কাজে। এছাড়া লিফলেট ও হ্যান্ডবিলে ৪০ হাজার, ব্যানার তৈরিতে আট হাজার, পথসভায় ৫০ হাজার, মাইকিংয়ে ৬০ হাজার টাকা তিনি খরচ করবেন। 

বাকি টাকার মধ্যে ২০টি নির্বাচনী ক্যাম্প ও কেন্দ্রীয় অফিস মিলিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, যাতায়াতে ৫০ হাজার টাকা, ঘরোয়া বৈঠক ও সভায় ৪০ হাজার টাকা, পথসভায় ৫০ হাজার টাকা, পোর্ট্রেট তৈরিতে ১৫ হাজার টাকা, অফিস আপ্যায়নে ৫০ হাজার টাকা, কর্মীদের জন্য ৭৭ হাজার টাকা, গণমাধ্যমে প্রচারে ৩০ হাজার টাকা এবং বিবিধ খাতে ৭৫ হাজার টাকা সম্ভাব্য খরচের ধারণা দিয়েছেন মিলন।

রুবেলের ভোট হবে ধার আর দানের টাকায়

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল ১২ লাখ টাকা ভোটের পেছনে খরচ করতে চান; এর পুরোটাই আসবে ধার বা দান থেকে। 

পেশায় চিকিৎসক রুবেল বলছেন, বাবার কাছ থেকে তিনি দুই লাখ টাকা ধার হিসেবে পাবেন। আর বাবা, মা ও শ্বশুরের কাছ থেকে দান হিসেবে পাবেন আরও দুই লাখ টাকা।

দুই লাখ টাকা পার্টি ও পার্টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে দুই লাখ টাকা, এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে ‘স্বপ্রণোদিত’ দান হিসেবে ছয় লাখ টাকা পাওয়ার একটি হিসাব রুবেল ইসিতে দিয়েছেন।

৫০ হাজার পোস্টরের জন্য দেড় লাখ টাকা, লিফলেটের জন্য ১ লাখ টাকা, হ্যান্ডবিলের জন্য ৫০ হাজার টাকা, ৪০০ ব্যানারের জন্য দেড় লাখ টাকা, ৫০টি ডিজিটাল ব্যানারের জন্য ৫৫ হাজার টাকা এবং মাইকিংয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা রেখেছেন সিপিবির প্রার্থী।

এছাড়া ১০টি নির্বাচনী ক্যাম্পের জন্য ২ লাখ টাকা, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পের জন্য দেড় লাখ টাকা, যাতায়াত বাবদ ৪৫ হাজার টাকা, ঘরোয়া বৈঠকের জন্য ১ লাখ টাকা, পথসভার জন্য দেড় লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ের ফর্দ তিনি ইসিতে দিয়েছেন। 

আব্দুর রহমান খরচ করবেন ৩০ লাখ

ঢাকা দক্ষিণে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আব্দুর রহমান ৩০ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনে। বড় দুই দলের চার প্রার্থীর বাইরে এটাই সম্ভাব্য খরচের সবচেয়ে বড় অংক।

ইসিতে জমা দেওয়া বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, এই টাকার মধ্যে ২০ লাখ তিনি ব্যয় করবেন নিজের ব্যবসার আয় থেকে। ১০ লাখ টাকা তিনি পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে ধার করবেন।

নির্বাচনী ব্যয়ের মধ্যে আট লাখ টাকায় চার লাখ পোস্টার, ২ লাখ ৫ হাজার টাকা লিফটেল-হ্যান্ডবিলে, ১ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যানার-ডিজিটাল ব্যানারে এবং দুই লাখ টাকা মাইডিকংয়ের জন্য তিনি খরচ করবেন।

এছাড়া নির্বাচনী ক্যাম্পের জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা, যাতায়াত বাবদ এক লাখ টাকা, ঘরোয়া বৈঠকের জন্য ৪৫ হাজার টাকা, পথসভার জন্য ৪৫ হাজার টাকা, অফিস আপ্যায়নে ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা, কর্মীদের পেছনে সাড়ে ৪ লাখ টাকা, মিডিয়ায় প্রচারে সোয়া এক লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরে তিনি হিসাব দিয়েছেন।

‘সাংবাদিক’ আয়াতুল্লাহর বড় ব্যয়ের ফর্দ

গেল বছর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে লড়তে ২৫ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব দিয়েছেন মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ।

হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, দৈনিক ভোরের ডাকে আট বছর স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করা ওরফে আয়াতুল্লাহ এখন দৈনিক আজকের দর্পণ নামের একটি পত্রিকায় নিউজ এডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে চাকরি থেকে আয়ের কোনো তথ্য তার হলফনামায় নেই।

ভোটের খরচের ২৫ লাখ টাকার মধ্যে লেখক হিসেবে পাওয়া সম্মানির দুই লাখ টাকা এবং আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে বাকি ২৩ লাখ টাকা পাবেন বলে তথ্য দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ।

এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা পোস্টারে, লিফলেট-হ্যান্ডবিলে তিন লাখ, ব্যানার-ডিজিটাল ব্যানারে আরও এক লাখ, নির্বাচনী ক্যাম্প বাবদ আট লাখ, যাতায়াতে চার লাখ, ঘরোয়া বৈঠক-সভায় দেড় লাখ এবং পথসভায় ৫০ হাজার টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরেছেন তিনি।

বাকিদের কার কেমন খরচ

উত্তর সিটির মেয়র পদে পিডিপির প্রার্থী শাহীন খান পাঁচ লাখ টাকায় নির্বাচন সেরে ফেলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে। এ টাকা আসবে তার ব্যবসার আয় থেকে।

৫০ হাজার পোস্টারে আড়াই লাখ টাকা; যাতায়াতে ৫০ হাজার টাকা, লিফলেটে এক লাখ টাকা, মাইকিংয়ে এক লাখ টাকা খরচ করবেন তিনি। পথসভা, ঘরোয়া বৈঠক, ব্যানার, কর্মীদের ব্যয়, নির্বাচনী ক্যাম্পে কোনো খরচ দেখাননি তিনি।

উত্তরে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনএনপি) প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান ভোটের পেছনে ব্যয় করবেন পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৯৫ হাজার টাকা তিনি পেয়েছেন অনুদান হিসেবে। বাকি টাকা আত্মীয়স্বজন বা অন্যদের কাছ থেকে ধার বা দান হিসেবে পাচ্ছেন বলে ইসিকে জানিয়েছেন।

তার দেওয়া বিবরণীতে ৩০ হাজার পোস্টারের জন্য ৬০ হাজার টাকা, ২৪ হাজার লিফলেট ছাপাতে ৯ হাজার ৬০০ টাকা, ৫০ হাজার হ্যান্ডবিলের জন্য ১০ হাজার টাকা, ২০০ ব্যানারের জন্য ৬০ হাজার টাকা, মাইকিংয়ে ৭৫ হাজার টাকা, ১০টি নির্বাচনী ক্যাম্পের জন্য ৮৫ হাজার টাকা, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পের জন্য ২০ হাজার টাকা, যাতায়াতে ৮৫ হাজার টাকা, ঘরোয়া বৈঠকের জন্য আট হাজার টাকা, পথসভার জন্য ১৫ হাজার, অফিস আপ্যায়নে ২০ হাজার, কর্মীদের আপ্যায়নে ৫০ হাজার এবং বিবিধ খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা সম্ভাব্য ব্যয় দেখানো হয়েছে।

উত্তরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ ব্যানার, লিফলেট, নির্বাচনী ক্যাম্প, ঘরোয়া বৈঠক, পথসভায় কোনো অর্থ ব্যয় করছেন না।

সর্বসাকুল্যে চার লাখ টাকায় তিনি নির্বাচন পার করতে চান। এর মধ্যে এক লাখ টাকা দান ও ৭০ হাজার টাকা দল থেকে অনুদান পেয়েছেন তিনি। এছাড়া ৮০ হাজার টাকা শিক্ষকতা থেকে এবং বাবা ও স্ত্রীর কাছ থেকে যথাক্রমে এক লাখ ও ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা বলেছেন।

মাসউদ এই চার লাখ টাকার দেড় লাখ টাকা ব্যয় করবেন ৫০ হাজার পোস্টারের জন্য। পাঁচ লাখ হ্যান্ডবিলের জন্য ৬০ হাজার টাকা, ১০০ ডিজিটাল ব্যানারের জন্য ৩০ হাজার টাকা, মাইকিংয়ের জন্য ২৫ হাজার, প্রতীক তৈরিতে ২০ হাজার, বিবিধ খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকা তিনি খরচ করবেন।

এছাড়া দক্ষিণে গণফ্রন্টের প্রার্থী আব্দুস সামাদ সুজন এবং এনপিপির মো. বাহারানে সুলতান বাহারের নির্বাচনী ব্যয়ের সম্ভাব্য বিবরণী ইসির ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।