করপোরেট কর কমানোর তাগিদ মির্জ্জা আজিজের

নতুন বাজেটে করপোরেট করের হার কমানোর বিষয়ে ঘোষণা থাকা উচিত বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

রিয়াজুল বাশার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2015, 03:57 PM
Updated : 3 June 2015, 03:57 PM

সংসদে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের আগে নিজের ভাবনা তুলে ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করের হার বেশি।

বাজেটে পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে কিছু দিক নির্দেশনা থাকা দরকার বলেও মন্তব্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যানের।

সর্বোপরি বাজেটের উপর মানুষের আস্থা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দিতে বলেছেন তিনি।

করপোরেট ট্যাক্স কমানোর তাগিদ দিয়ে মির্জ্জা আজিজ বলেন, “আমি মনে করি করপোরেট ট্যাক্স কমানো উচিত। কারণ অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে করপোরেট ট্যাক্সের হারটা একটু বেশি।

“তবে কোম্পানিগুলো বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব রেয়াত সুবিধা পাচ্ছে করপোরেট কর কমালে সেসব রেয়াত বাতিল করা যেতে পারে।”

বাংলাদেশের ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান করপোরেট করহার ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ। মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার ৪৫ শতাংশ।

তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে এই হারের ওপর ৫ শতাংশ রেয়াত পান তারা।

সিগারেট প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর করহারও ৪৫ শতাংশ এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তারাও ৫ শতাংশ রেয়াত পান।

এর বাইরের অন্যান্য কোম্পানিগুলোর করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কর দিতে হয় ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। অবশ্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েও ২০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিলে আরও ১০ শতাংশ বেশি অর্থ্যাৎ ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ হারেই কর দিতে হয়।

করহার কমানোর পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধেও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ।

“কর ফাঁকির প্রবণতা রোধ করা দরকার। কর ফাঁকি দুই রকম। এর একটা হচ্ছে বকেয়া কর না দেওয়া। আরেকটা হল- অনেকে হয়ত সামর্থ্য থাকার পরও রিটার্ন দেয় না বা কর দেয় না।”

বৃহস্পতিবার নবম বারের মতো বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এটি হবে তার টানা টানা সপ্তম বাজেট।

নতুন অর্থবছরের বাজেটকে ‘বাস্তবসম্মত’ করার পরামর্শও দিয়েছেন মির্জ্জা আজিজ।

এই সাবেক অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “চার বছর ধরে দেখতে পাচ্ছি, বাজেটে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় সেগুলো অর্জিত হয় না। রাজস্ব আহরণ, এডিপি বাস্তবায়ন, সার্বিক ব্যয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি সব মিলিয়েই লক্ষ্য অর্জিত হয় না।”

চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা চলতি বাজেটে ৭ দশমকি ৩ শতাংশ ধরা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৯ মাস শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ খাতে আগামী বাজেটে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ।

“আমি মনে করি কয়েকটি খাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। যেমন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। এই দুটো খাতে আনুপাতিক হারে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটে যে বরাদ্দ ছিল তা ২০০৮ সালের বাজেটের তুলনায়ও কম। কাজেই এখানে বরাদ্দ বাড়ানোর দরকার আছে।”

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনিতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন তিনি।

“কারণ আমাদের দেশে এখনও দরিদ্র লোকের সংখ্যা প্রচুর। অনেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। এছাড়া অন্যান্য খাত, যেমন-অবকাঠামো, বিদ্যুৎ এগুলো সবসময়ই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এবছরও হয়ত পাবে।”

পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থা কাটাতে সরকার নীতি সহায়তা দিতে পারে বলে মনে করেন মির্জ্জা আজিজ।

“বাজেটে অনেক নীতি ঘোষণা করা হয়, সেখানে স্টক মার্কেটকে রিভাইভ করার জন্য কী করা যেতে পারে, তার কিছু দিক-নির্দেশনা থাকা দরকার।”