বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ: ২৯৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু’ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে সম্প্রচার ও টেলি যোগাযোগ সেবা পরিচালনার জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি বড় প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2014, 01:45 PM
Updated : 16 Sept 2014, 08:37 PM

সরকার বলছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টিভি অপারেটরদের আর বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ ভাড়া করে সম্প্রচার চালাতে হবে না। এই কৃত্রিম উপগ্রহ দিয়ে টেলিযোগাযোগ সেবাও দেয়া সম্ভব হবে। এতে বছরে ১১০ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে ।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এ প্রকল্পসহ চার হাজার ২৯৬ কোটি টাকার মোট ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ’ প্রকল্পের  মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে।

এছাড়া প্রকল্প সাহায্য থেকে আসবে এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।এই ‘প্রকল্প সাহায্যের’ ব্যবস্থা করা হবে ‘বিডার্স ফাইন্যান্সিং’ এর মাধ্যমে ।

এ প্রকল্পের আওতায় পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হবে বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ, যাতে টেলিকমিউনিকেশন ও ব্রডকাস্টিং সেবা দেয়ার জন্য ৪০টি ‘ট্রান্সপন্ডার’ থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে উপগ্রহের নকশা তৈরির কাজ শুরু করেছে।

ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ নির্মাণ করা হবে। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব জমিতে এ দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ হবে। 

২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার।

সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অনুমোদিত ছয়টি প্রকল্পই নতুন।

প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয়ের মধ্যে দুই হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করা হবে।

সভায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১২০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ সংগ্রহের জন্য ৯৭৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। মোট ব্যয়ের মধ্যে ৭১০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য। বাকিটা দেবে সরকার। ভারত সরকার এ প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী।

এ প্রকল্পের আওতায় ১৭টি এসি স্লিপার কার, ১৭টি এসি চেম্বার কার, ৬৭টি নন-এসি শোভন ক্যারেজ এবং ১৯টি এসি জেনারেটর কাম প্রার্থনা কক্ষ আমদানি করা হবে।

সভায় ২০৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামের আরেকটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ, খুলনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাইবান্ধায় পাঁচটি ‘ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নির্মাণ করা হবে।

এছাড়া ৪২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা শহরের জন্য বিদ্যুতের প্রি-পেমেন্ট মিটারিং (১ম পর্যায়) শীর্ষক ৪২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।

অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার রোধ, বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমানো এবং অগ্রিম বিদুৎ বিল আদায়ের লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের জুন নাগাদ এটি বাস্তবায়িত হবে।

সভায় তামাবিল স্থল বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের মধ্যে আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্য গুদামজাতকরণে সুবিধাসহ হ্যান্ডলিং সুবিধা উন্নয়নের লক্ষ্যে এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে।

সভায় নিমগাছি সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে  এ বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদমন্ত্রী মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।