প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার একনেকের বৈঠকে অংশ নেয়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ অন্য মন্ত্রীরাও পরিকল্পনামন্ত্রীর মুখে শুনলেন অর্থনীতির হালচাল।
শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ষষ্ঠ একনেক সভার শুরুতেই পরিকল্পনামন্ত্রী তার উপস্থাপনা হাজির করেন।
‘এক অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি’ শীর্ষক ওই উপস্থাপনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয়, রাজস্ব আদায়, রেমিটেন্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, বাজেটের আকার, এডিপি বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধিসহ অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের খতিয়ান তুলে ধরা হয়।
এছাড়া বিদ্যুৎ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের হার কমার বিষয়টিও এসেছে তার প্রায় ২০ মিনিটের এ উপস্থাপনায়।
এর আগে একনেকের বৈঠকে কোনো পরিকল্পনামন্ত্রীকে এই ধরনের কোনো উপস্থাপনা দিতে দেখা যায়নি।
একনেক সভার পর পরিকল্পনামন্ত্রী যখন অনুমোদিত প্রকল্পগুলো নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন, তখন সাংবাদিকরা স্বাভাবিকভাবেই তার নতুন এই কাজ সম্পর্কে জানতে চায়।
মুস্তফা কামাল তখন বলেন, “দেশের অর্থনীতি যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটার চিত্র তুলে ধরার জন্যই আমি একনেক বৈঠকে এই প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছি।”
সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতেই এটা করা হয়েছে বলে জানান প্রথম মন্ত্রিসভায় আসা এই ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক।
একনেক বৈঠকের কার্যসূচিতে এ ধরনের কোনো উপস্থাপনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজেই উদ্যোগ নিয়ে তা করেছেন সভায় উপস্থিত পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “পরিকল্পনামন্ত্রীর উপস্থাপনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সভায় বলেন, এতে দেশের উন্নয়নের সামগ্রিক একটা চিত্র ফুটে উঠেছে। তবে এটি আরো সহজভাবে উপস্থাপন হলে ভাল হত। সব সূচক একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে আরো ভাল হত।
“এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রীরা টক শো-তে যান। তাদের এ সব তথ্য জানা থাকলে কথা বলতে সুবিধা হবে’।”
পরিকল্পনামন্ত্রীর উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, ১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে তা বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে।
২০০৬-০৭ অর্থবছরের ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গত অর্থবছরে (২০১৩-১৪) হয়েছে ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
রাজস্ব আদায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১১৯০ ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
সভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।