পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি

১২ হাজার কোটি টাকায় চার বছরের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে চীনা কোম্পানি মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 June 2014, 02:24 PM
Updated : 17 June 2014, 05:13 PM

৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বহু প্রতীক্ষিত এই সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মঙ্গলবার সরকারের এই চুক্তি সই হয়েছে।

চুক্তি সইয়ে উচ্ছ্বসিত  যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ““আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে এ চুক্তি করা হয়েছে।

“এর মধ্যে দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করলাম। খুব শিগগিরই স্বপ্নের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান বাস্তবতায় দেখতে পারবেন।”

২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষের দৃঢ় আশাবাদও প্রকাশ করেন তিনি।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম এবং চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির চেয়ারম্যান লিউ জিমিং নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তি সই উপলক্ষে রূপসী বাংলা হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে হোটেলের উইন্টার গার্ডেনে প্রায় ৪০০ অতিথির রাতের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়।

অনুষ্ঠান শেষে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চুক্তি অনুযায়ী পদ্মা সেতুর ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ (ক্রটিজনিত দায়ের মেয়াদ) এক বছর।

“এই সময়ের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে দায়-দায়িত্ব হবে সেই প্রতিষ্ঠানের। সাধারণত ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ শেষে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য কাজ করতে আন্তর্জাতিক ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়।”

সেতুর গ্যারান্টি কত বছরের হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মূলত ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ডকেই ওয়ারেন্টি হিসেবে ধরা হয়। যমুনা সেতুসহ অন্যান্য সেতু নির্মাণে এই মেয়াদেই ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড দেয়া হয়েছিল।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের অন্যান্য বড় স্থাপনা যেমন যমুনা সেতুতেও ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড এক বছরই ছিলো, এটাই স্বাভাবিক।”

১২ হাজার ১৩২ কোটি টাকায় পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে চীনের এই কোম্পানিকে গত ২ জুন কার্যাদেশ দিয়েছিল সরকার।

গণচীনের রেল মন্ত্রণালয়ের অধীন কোম্পানি চায়না মেজর ব্রিজের বার্ষিক আয় ২০০ কোটি ডলার, প্রতিষ্ঠানটির কর্মীর সংখ্যা ৭৫ হাজার।

পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও দর প্রস্তাব জমা দিয়েছিল একমাত্র চীনের কোম্পানিটি।

গত ২৬ জুন চূড়ান্ত দরপত্র আহ্বানের পর মূল সেতু নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। চায়না মেজর ব্রিজ ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ কম দর প্রস্তাব করে।

২০১১ সালে পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ১৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বর্তমান অঙ্ক তার চেয়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বেশি।

গত ২২ মে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে চীনা কোম্পানির দরপ্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।

এরপর ১৯ মে এক অনুষ্ঠানে মূল পদ্মা সেতু নির্মাণে চায়না মেজর ব্রিজকে নির্বাচিত করার কথা জানিয়েছিলেন যোগাযোগমন্ত্রী।

মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। এতে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণে ২০১১ সালে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি হলেও পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি ঝুলে যায়।

দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০১২ জানুয়ারিতে দেশের সবচেয়ে বড় এ অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয় সরকার। সে সময় এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯১ কোটি ডলার।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের পর নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়। জমি অধিগ্রহণ করে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।