‘পদ্মা প্রকল্পে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার নাম’

দুর্নীতি সংক্রান্ত জটিলতার আবর্তে আটকে থাকা পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজের নাম ‘স্মরণীয়’ হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংকের বিদায়ী আবাসিক প্রতিনিধি এলেন গোল্ডস্টাইন।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2013, 01:10 AM
Updated : 19 Jan 2013, 06:39 AM

বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর কাজ শুরু না হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, জনগণের অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিতই বিশ্ব ব্যাংকের উদ্দেশ্য।

চলতি মাসেই ঢাকায় দায়িত্বে মেয়াদ শেষ করতে যাওয়া গোল্ডস্টাইন শনিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে এক অনুষ্ঠানে পদ্মা প্রকল্প নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।

ওই অনুষ্ঠান চলাকালেই বিশ্ব ব্যাংকের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এই সংস্থার মিশন প্রধানের দায়িত্ব নিচ্ছেন সালমান জহির। নতুন আবাসিক প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।

২০০৯ সালের নভেম্বরে ঢাকায় মিশন প্রধানের দায়িত্ব নেয়া গোল্ডস্টাইন বলেন, “দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তার শক্তিশালী তদন্তের জন্য আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, তা মাইল ফলক হয়ে থাকবে।

“আমি জানি পদ্মা সেতুর সঙ্গে আমার নাম সব সময়ই জড়িয়ে থাকবে। কারণ যথাযথ প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে আমি বিশ্ব ব্যাংকের হয়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র তদন্তের ব্যাপারে জোর দিয়ে যাচ্ছি।”

২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তারা অর্থায়ন স্থগিত এবং বাতিল করলে দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের কাজ আটকে যায়।

সরকারের নানামুখী তৎপরতায় বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পে ফিরলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করে অর্থ দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছে।

গোল্ডস্টাইন বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, জনগণের অর্থ ব্যবহারে যেন স্বচ্ছতা থাকে। আমার নাম এই প্রকল্পে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।

“দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ায় পথে-ঘাটে, দোকানে বিভিন্ন জায়গায় নাগরিকরা আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন।”

“কারণ তারা রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সততা সম্পর্কে ভালোই জানেন এবং এও জানেন যে এ ধরনের শক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সব বাংলাদেশির চাওয়া প্রতিফলিত হচ্ছে,” বলেন গোল্ডস্টাইন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের বিদায়ী আবাসিক প্রতিনিধির বক্তব্যের আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিষয়ে আমরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।”

তিনি জানান, এই মুহূর্তে বিশ্ব ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৩৩টি উন্নয়ন প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতুসহ ৪টি বাদে বাকি ২৯টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন অবস্থা সন্তোষজনক।

অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ বিভিন্ন প্রকল্পে দেরির জন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোকেও দায়ী করেন।  

একটি প্রকল্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “শুধু সরকারের কারণে প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকে এটা ঠিক নয়। আমরা একটি প্রকল্পের সব কাগজপত্র ঠিক করে দিলেও বিশ্ব ব্যাংক ১৪০ দিনেও অর্থ দেয়নি।”

‘স্বচ্ছতার নামে’ প্রকল্প আটকে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সচিব বলেন, “পাথর পড়ে একটি রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে। আমাদের উচিৎ হবে পাথর কেটে দূরে সরিয়ে রাস্তাটি চালু রাখা। তা না করে রাস্তা বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয়।”

২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলো নিয়ে মধ্যমেয়াদি পর্যালোচনা উপলক্ষে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিশ্ব ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে এ পর্যালোচনা সভার আয়োজন করে। ২০১০ সালের মার্চে প্রথম সভা হয়েছিল।

এবার নতুন সংযোজন তৃতীয় পক্ষ দিয়ে এই মূল্যায়ন করা হয়েছে। তৃতীয় পক্ষ ছিল বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’।

অনুষ্ঠান শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও ঘুরে-ফিরে চলে আসে পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গটি।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত এই মাসেই জানতে চেয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গোল্ডস্টাইন বলেন, “এ বিষয়টি অামার নিয়ন্ত্রণে নেই।

“বিষয়টি নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক প্যানেল কাজ করছে। দুদক এ ব্যাপারে তাদের নেয়া পদক্ষেপ প্যানেলকে জানিয়েছে। প্যানেল আরও কিছু ব্যাখ্যা চেয়েছে। সেগুলো পাঠলেই প্যানেল তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।

বিদায়ী আবাসিক প্রতিনিধি আশা প্রকাশ করেন, এই মাসের মধ্যেই বিশ্ব ব্যাংক প্যানেলের প্রতিক্রিয়া জানা যাবে।

তিন বছর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন তরফ থেকে বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা শুনতে হয়েছিল গোল্ডস্টাইনকে এবং তা মূলত পদ্মা প্রকল্প নিয়েই।

নতুন মিশন প্রধানের দায়িত্বে সালমান

বিশ্ব ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে দায়িত্বের মেয়াদ শেষে চলতি মাসেই চলে যাচ্ছেন এলেন গোল্ডস্টাইন। ফেব্রুয়ারি থেকে তার জায়গায় ঢাকায় দায়িত্ব পালন করতে আসছেন সালমান জহির।

তবে সালমান ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ভারতীয় নাগরিক সালমান বর্তমানে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের কর্মসূচি পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকায় এই বছরই নতুন আবাসিক প্রতিনিধি নিয়োগ দেবে বিশ্ব ব্যাংক। তা না দেয়া পর্যন্ত সালমানই ওই দায়িত্ব পালন করবেন।

সালমান জহির এর আগে দক্ষিণ এশিয়া জ্বালানি কর্মসূচি খাতের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাছ করেছেন।

বিশ্ব ব্যাংকে তার কাজের প্রধান ক্ষেত্র হল- জ্বালানি খাত (বিদ্যুৎ, তেল ও গ্যাস)। ভারতে নগর অঞ্চলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নেও কাজ করেছেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকে যোগ দেয়ার আগে তিনি এক যুগ ধরে কাজ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেমিক্যাল ও পেট্রোকেমিকেল খাতে। আর আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসায় উন্নয়ন, নির্মাণ, গবেষণা ও কারিগরি সেবা খাতেও কাজ করেছেন তিনি।

সালমান দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যবসায় প্রসাশন ও অর্থনীতি/আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।