সেবা বাণিজ্যে বড় ঘাটতি

আমদানি কমায় সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি আগের তুলনায় কমে এলেও সেবা খাতে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2013, 09:29 PM
Updated : 14 Jan 2013, 10:05 PM
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সেবা বাণিজ্যে আয় কমে আসায় ১৮০ কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩২ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দেশে পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি প্রতি বছরই বাড়ে। এবার আমদানি খাতে ব্যয় কমায় পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি গতবারের চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেবা খাতের বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েই চলেছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেন ভারসাম্য সারণির হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সেবা খাতের মাধ্যমে ৭৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিদেশি মুদ্রা আয় হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম।

এর বিপরীতে সেবা খাতের ব্যয় বাবদ ২৫৮ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেশের বাইরে চলে গেছে। এই পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশে সেবা খাতের আয় বলতে মূলত পর্যটন, ভ্রমণ, বীমা, আর্থিক লেনদেনের মতো বিষয়কেই বোঝানো হয়। আর বাংলাদেশিরা যখন ভারতে বা থাইল্যান্ডে গিয়ে চিকিৎসার জন্য অর্থ ব্যয় করেন, বা ভ্রমণে যান, তখন তা সেবা খাতে ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সেবা খাতের বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ২৫৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার।

জায়েদ বখত বলেন, “পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি কমলে অনেক সময় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন-মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমলে- শিল্প উৎপাদন কমে যায়। তবে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি কমা ভাল।”

চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৪৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৪৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ পণ্য-বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে ২২ শতাংশ।

পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ের তুলনায় পণ্য আমদানির জন্য ব্যয় বেশি হলে এই ঘাটতি তৈরি হয়।

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৪ শতাংশ বেড়ে ৯৯৮ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আবার ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময় আমদানি ব্যয় সাড়ে ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪৭ কোটি ৪০ লাখ ডলারে।

অবশ্য লেনদেনের ভারসাম্য সারণিতে এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড) বা জাহাজীকৃত পণ্যের মূল্য ধরে আমদানি-রপ্তানির হিসাব নির্ণয় করা হয়। এর ফলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানি পরিসংখ্যান ও আমদানির সিঅ্যান্ডএফ (বিমা ও পণ্য খালাস ব্যয়) পরিসংখ্যানের তুলনায় এফওবির মূল্য কিছুটা কম হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, অর্থবছরের পাঁচ মাসে চলতি হিসাবে চার কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত রয়েছে, যেখানে গত বছরের একই সময় ১৩৫ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। অর্থাৎ, চলতি হিসাবের ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

চলতি হিসাবে মূলত কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেনের হিসাব প্রতিফলিত হয়। অর্থাৎ, নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার মানে হচ্ছে, নিয়মিত লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশকে কোনো ঋণ নিতে হয়নি। আর ঘাটতির অর্থ হলো, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় ঘাটতি পূরণে সরকারকে ঋণ নিতে হচ্ছে।

চলতি হিসাবের পাশাপাশি আর্থিক হিসাব পরিস্থিতিরও বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে যেখানে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত ছিল, সেখানে চলতি বছরের একই সময় তা বেড়ে ১৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি সাহায্যপ্রবাহ বাড়ায় এই উন্নতি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৬৫ কোটি ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ দেশে এসেছে, যেখানে গত বছরের একই সময় এসেছিল ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

আবার মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণের প্রবাহ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলারে, যা গত বছরের একই সময়ের আড়াই গুণ বেশি।

এ সব কিছুর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যে। গত বছর জুলাই-নভেম্বর সময়ে লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যে ১৭৫ কোটি ২০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। আর গত বছরের একই সময় ৯১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।