দৈর্ঘ্য বাড়ানোয় মেট্রো রেলের খরচ-সময় দুটোই বাড়ছে

মেট্রো রেলের দৈর্ঘ্য আরও বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধনের নতুন প্রস্তাবে ৫০ শতাংশের বেশি খরচ বাড়ছে। পাশাপাশি নির্মাণ কাজ শেষ করার সময় বাড়ছে দেড় বছর।

জাফর আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2022, 07:02 PM
Updated : 18 July 2022, 07:06 PM

প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. মামুন-আল-রশিদ।

ঢাকায় প্রথম মেট্রো রেল স্থাপনে চলমান এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা আছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবে প্রায় ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এতে খরচ বাড়ে ৫২ শতাংশ।

প্রকল্পটিতে দ্বিতীয়বারের মতো এই সংশোধনী প্রস্তাবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার অংশ যোগ করে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে এবছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত অংশ চালু করা যাবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।

প্রকল্পের ব্যয় ৫২ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন বলেন, “এবার যে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে তা মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণ লাইনের জন্যই বাড়ছে।”

তবে প্রকল্পটির অতিরিক্ত এই ব্যয় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নতুন প্রস্তাবিত সম্প্রসারণ অংশের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি- পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হয়েছিল জানিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে তার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন।

“পরে দেখা যায়, এই সংশোধনীতে অর্থ মন্ত্রণালয় নতুন নিয়ম করেছে যে, এখন থেকে বড় বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে সুদ প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যবস্থায় ঋণের সুদ প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সমন্বয় করা হবে।

“যেমন এই প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধেও ১৫২ কোটি টাকা এবং সরকারি কোষাগারে শুল্ক পরিশোধ বাবদ বেড়েছে ২ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এসব মিলেই আসলে ব্যয় বেড়েছে।”

খরচ বাড়ানোর বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাড়তি অংশ ছাড়াও স্টেশনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণেও খরচ বাড়ছে।

“এই সংশোধনী মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের জন্য প্রয়োজন হলেও প্রকল্পটির প্রায় ১০টি স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করে ফুটপাত তৈরি করতে হচ্ছে। তাই এই অতিরিক্ত ব্যয় পুরো প্রকল্পেই প্রয়োজন হবে।”

তিনি বলেন, “প্রকল্পটি গ্রহণ করার সময় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশনগুলোর জন্য যাত্রী একসেস এবং এক্সিটের জন্য আলাদা ভূমি অধিগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি।

“কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনগুলোতে সুশৃঙ্খলভাবে যাত্রী ব্যবস্থাপনার জন্য অবশ্যই অতিরিক্ত জায়গার প্রয়োজন।”

এমএএন ছিদ্দিক বলেন, “স্টেশনে ওঠানামার সিঁড়ি এবং এসকেলেটর নামানোর জন্য ফুটপাত দখল করে ফেললে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন পায়ে হাঁটা মানুষগুলোর চলাচলে একটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।

“অথচ মেট্রো রেল একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রকল্প যেখানে বিশ্বমানের যাত্রীসেবা দেওয়া হবে। তাই এখন নতুন করে ব্যাপকভাবে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়েছে। এ সকল বিচারে প্রকল্পটির ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন হয়েছে।”

মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বলা হলেও এ বছরের ডিসেম্বরে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার উদ্বোধন করা হবে।”

কাজের অগ্রগতি অনুযায়ী আগামী বছর ডিসেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত অংশটিও উদ্বোধন করা সম্ভব হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “২০২৫ সাল পর্যন্ত মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ করতে মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।”

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রকল্পটির সার্বিক গড় অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ।

প্রকল্পটির সংশোধনে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বাড়বে ২ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা এবং পরামর্শক খাতে ব্যয় বাড়ছে ৫৭৬ কোটি টাকা।

এছাড়াও প্রকল্পটির ৮নং প্যাকেজে রোলিংস্টক এবং সরঞ্জাম সংগ্রহে ব্যয় বাড়ছে ৮৫১ কোটি টাকা। সঙ্গে ৩, ৪ এবং ৬ নম্বর প্যাকেজের নির্মাণ ও স্টেশন নির্মাণ বাবদ বাড়ছে আরও ৪৯২ কোটি টাকা।

প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটির ৭ নম্বর প্যাকেজের ইলেক্ট্রনিক এবং মেকানিক্যাল কাজে জন্য নতুন করে ২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। একইসঙ্গে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ায় নতুন করে ব্যয় বাড়ছে আরও ৬০০ কোটি টাকা।

আরও খবর