নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস

রাশিয়া ও ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে দেখা দেওয়া অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণ এবং মহামারীর দুই বছর পেরিয়ে উন্নয়নের হারানো গতি ফেরানোর প্রত্যয় নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2022, 03:49 PM
Updated : 30 June 2022, 03:49 PM

বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল ৩টায় সংসদে বৈঠক শুরু হয়। অধিবেশনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয়।

সংসদে পাস হওয়া এ বাজেট রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

গত ৯ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। টাকার ওই অংক বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশের সমান।

অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের পর পুরো অধিবেশন জুড়ে এর ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা।

মহামারীকালে গত দুই বছরের চেয়ে এবারের বাজেট অধিবেশন ছিল দীর্ঘ, যা শেষ হচ্ছে বৃহস্পতিবার। এই কয়েক দিনে বাজেট নিয়ে আলোচনাও হয়েছে গত দুই বছরের তুলনায় অনেক বেশি সময় ধরে।

এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত বাজেট অধিবেশন হয়েছিল। নয় দিনের ওই বাজেট অধিবেশনে ১৮ জন সংসদ সদস্য বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংসদে প্রবেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি: পিআইডি

অর্থমন্ত্রীর বাজেট উত্থাপনের পর গত ১৩ জুন বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ১৭ হাজার ৫২৪ কোটি ৬৪ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পূরক বাজেট সংসদে পাস হয়েছে।

আর বুধবার কয়েকজন সংসদ সদস্যের সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সংসদে অর্থবিল পাস হয়।

এক নজরে নতুন বাজেট

অর্থমন্ত্রী নতুন অর্থবছরে পৌনে সাত কোটি টাকার বেশি সরকারি ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাবে বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেন।

অপরদিকে বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অভ্যন্তরীণ সরবরাহে বিশঙ্খলার মাঝেও মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার আশা করছেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এই অংক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি।

বৃহস্পতিবার বাজেটে থাকা এসব প্রস্তাব পাস করেছে সংসদ।

এদিন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনের শুরুতেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মঞ্জুরি দাবিতে আলোচনা করার কথা জানান। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা এসব দাবিতে আলোচনা করেন।

নির্দিষ্টকরণ বিল পাস

নতুন অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের বাইরে সরকারের বিভিন্ন ধরনের সংযুক্ত দায় মিলিয়ে মোট আট লাখ ৮৩ হাজার ৭৫১ কোটি ৮১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার নির্দিষ্টকরণ বিল জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়েছে।

এর মধ্যে, সংসদ সদস্যদের ভোটে গৃহীত অর্থের পরিমাণ ছয় লাখ ১৮ হাজার ৮২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং সংযুক্ত তহবিলের ওপর দায় দুই লাখ ৬৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

সংযুক্ত তহবিলের দায়ের মধ্যে ট্রেজারি বিলের দায় পরিশোধ, হাই কোর্টের বিচারপতি ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বেতনও অন্তর্ভুক্ত।

মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব

আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর সংসদে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগওয়ারি ৫৯টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্রসহ মোট ১৩ জন সংসদ সদস্য ৬৬৪টি বিভিন্ন ধরনের ছাঁটাই প্রস্তাব আনেন।

এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। বিরোধী দলের আলোচনার পর সবগুলো প্রস্তাব কণ্ঠভোটে বাতিল হয়ে যায়।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির অনুপস্থিতিতে তাদের মঞ্জুরি দাবি তোলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো দেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, মুজিবল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, রুস্তম আলী ফরাজী ও পনির উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির হারুনুর রশীদ, রুমিন ফারহানা ও মোশাররফ হোসেন, গণফোরামের মোকাব্বির খান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।